পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২২৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

RSఠి - - SN9క్రR4 বলিলেন, “ওরে বোকা, পরের দরজা ঠেঙিয়ে ভাণ্ডিস্ Fil f" শিবু মা’র কথায় নিরাশ হইয়া প্রশ্নের স্বরে বলিল, “কেন, এটা ত আমাদের বাড়ী ?” মহামায়া বলিলেন, “হ্যা, তুমি যে লাখ টাকা দিয়ে কিনেছ।" গলির দিক্ দিয়া পৈতা গলায় একটা হিন্দুস্থানী দরোয়ান স্বাড়ামাথা বাহির করিয়া আসিয়া বলিল, “এই দিকে বাৰু, এই দিকে । ভাড়-ঘর এধারে ” গলির দরজা খুলিয়া গেল ; একেবারে চৌকাট হইতেই সোজা দোতলায় উঠবার সঙ্কীর্ণ সিড়ি আরম্ভ হইয়াছে, দরজায় দুমিনিট অপেক্ষা করিবার জন্যও এক হাত স্থান নাই। এ-সিড়ির বঁাক আরম্ভ হইবার মুখেই একদিকে রান্নাঘর ও অপর দিকে পায়খান, তাহারই পাশে খাবার ঘর। একটুও স্থানের অপব্যয় নাই, মানুষের গুচিবায়ুগ্রস্ত হইবার কোনও অবকাশ নাই । সামনের কালোপাড়দেওয়া শ্বেতপাথরের বারা দেখিয়া শিৰু যেমন খুনী হইয়াছিল, এই অন্ধকার খাচা দেখিয়া তাহার মন তেমনই মুম্বড়িয়া গেল। মাথার উপরের ছাদ পৰ্যন্ত এত নীচু যে লম্ব মানুষ হাত তুলিয়া দাড়াইলে ছাদে হাত ঠেকিয়া যায়। স্বধ বিশ্বিত চোখে ছাদের দিকে তাকাইয়া সপ্রশ্ন দৃষ্টিতে বাবার মুখের দিকে চাহিল। চন্দ্রকান্ত ছোট খোকাকে মাথার উপর তুলিয়া ধরিয়া তাহাকে ছাদে ঠেকাইয়া দিয়া বলিলেন, “তোমরা ভগ্নাংশের সিড়ির অঙ্ক শিখেছ ত ? নীচে একতলা, তারপর সিড়ি ভেঙে দেড়তলা, তার পর সিড়ি ভেঙে দোতলা, বুঝলে।” দেড়তলা হইতে সিড়িটা গোল থামের মত সোজা দোতলা ছাড়াইয়া একেবারে তিনতলায় গিয়া একটুখানি চাতালের উপর শেষ হইয়াছে। সিড়ির গায়ে দুই পাশেই মাঝে মাঝে দরজা, কিন্তু সেগুলির গায়ে সযত্নে পেরেক মারা। বুঝা যায় এই সিড়ি দিয়া এই সব পথে ঢোকা নিষিদ্ধ। তিনতলায় দুইখানি মাত্র ঘর আর দুর্ভিক্ষপীড়িতের ভিক্ষাঙ্কের মত একটুখানি খোলা ছাদ । ছাজে দাড়াইলে উত্তর-দক্ষিণ-পূৰ্ব্ব-পশ্চিম সকল দিকেই ঘর দেখা স্বায়, কিন্তু সে ঘরগুলির অধিবাসী স্বতন্ত্র। ঘরে ঘরে জানালার কাছে ছোট বড় নানা মাপের মানুষের কুতুহলী দৃষ্টি দেখিয়া শিবু মহামায়ার গলা জড়াইয়া কানে কানে বলিল, “এটা কাদের বাড়ী মা ? এত মাহব চারধারে । এদের সঙ্গে আমরা থাকব কি ক’রে ?” মহামায়া বলিলেন, “ও সব আলাদা আলাদা বাসা রে, কলকাতায় এইরকমই হয়।” স্বধা ও শিবু ছাদের আলিশার উপর দিয়া মুখ বাড়াইয়া বুড়া আঙুলে ভর দিয়া দাড়াইয়া চারিদিকে চাহিয়া দেখিল, তাহাদের এই উপর নীচের চারখানা ঘরে যদিও দৃষ্টি আশে পাশের সকলেরই পড়ে, তবু সশরীরে উপস্থিত হইবার নিষ্কণ্টক পথ কাহারও নাই। বোঝা গেল, এগুলি ভিন্ন ভিন্ন এলাকা । এ বাড়ীর কৰ্ত্তা শ্বেত পাথরে মোড়া অংশ নিজে রাখিয়া খিড়কির সিড়ি দিয়া কিছু অংশ ভাড়া দিবার ব্যবস্থা করিয়াছেন, আশে পাশের অনেক বাড়ীতেই সেই রকম বন্দোবস্ত । সুতরাং ভাড়াটে অংশগুলি সব পরম্পরের খুব গায়ের কাছে আসিয়া পড়িয়াছে। তার উপর খিড়কির দিক্‌ বলিয়া বাড়ীওয়ালা ও ভাড়াটে সকলেরই শৌচাগারের ভীড় এই দিকে বেশী। বাহিরের নূতন জগৎটা যতক্ষণ দেখিতেছিল ততক্ষণ তাহার অভিনবত্ত্বে বিস্ময়ের খোরাক বেশী ছিল বলিয়াই তাহাতে শিবুর আনন্দ উচ্ছ্বসিত হইয়া উঠিতেছিল। কিন্তু গৃহের আবেষ্টনে বিস্ময় বেদনারই কারণ হইয়া উঠিল । বাহিরে যেমন অপরিচয়েই আনন্দ, ঘরের ভিতরে তেমনই পরিচিতের স্পর্শেই শাস্তি ও বিশ্রাম। যে-গৃহকে স্থধারা আজন্ম বাড়ী বলিয়া জানে তাহাকে এই বিস্ময়লোকের ভিতর কোথায়ও এক বিন্দু খুজিয়া না পাইয়া দুইজনেরই মন বিষণ্ণ হইয়া পড়িল । দিনের পর দিন ইহারই ভিতর তাহার কাটাইবে কি করিয়া ? কিন্তু শিৰু সহজে দমিবার পাত্র নয় বলিয়া ছোট্ট চাতালের উপর গুপীকৃত বিছানার গাদায় বসিয়া পড়িয়াই গান ধরিয়া দিল, “দন্তি কলহেতার শহর, অষ্ট পহর চলতি আছে টেরাম গাড়ী। নামিয়ে গাড়ীর থনে ইষ্টিশানে, মনে মনে আমেজ করি, আইলাম কি গণি মিঞার রংমহলে ডাঁহার জিলায় বগুলি ছাড়ি ।”