পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আমাদের সামনে চা ও সন্তুর পাত্র রাখা হইল, আমার সন্তুতে রুটি ছিল না, কেবল চ পান করিলাম। কিছুক্ষণ সেখানে বসিয়া দেখিলাম শেকর গুম্বার জায়গীরের আয়ব্যয় . হিসাব চলিয়াছে । মুনিম-মহাশয় হাড় ও প্রস্তরখণ্ড গুনিয়া রাগিতেছেন এবং পুনর্বার গুনিয়া সেগুলি পৃথক পৃথক পাত্রে সাজাইতেছেন । তাহার এই হিসাবের ধরণ আমাদের কাছে হাস্যকর ঠেকিতে পারে, কিন্তু আমাদের ঐরুপ হিসাবের প্রণালী শিপিতে বেশ কিছুদিন লাগে, সন্দেহ নাই । চ-পানের পর আমরা দ্বিতলে ভিক্ষু নম্সের নিকট গেলাম। তিনি পরম আদরে অভ্যর্থনা করিলেন । তিনি আজ বিশেষ পূজাম ব্যস্ত ছিলেন, পূজাকক্ষ মূৰ্ত্তিতে ও তোমা-য় (সত্ত্ব, ও মাপনের নানাবর্ণ বলিপিণ্ড) স্বসজ্জিত ছিল । তিনি আবার চা পাল করিতে অনুরোধ করায় সুন্দর গঙ্গা-যমুনা (তামের উপর বৌপ্য ) থালের উপর আসল চীন পেয়ালায় চ আসিল এবং আমর! গ্রহণ করিলাম । আমার কক্ষে কঞ্জরের পুস্তকাগার ছিল, সেখানকার এক প্রাচীন হস্তলিখিত কঞ্জর আমি খুলিয়া দেখিতেছিলাম। এই মহামূল্য গ্রন্থ শতাধিক খণ্ডে বিভক্ত ছিল, তাহার এক-এক ওজন খণ্ডের দশ সেরের অধিক । সুমতি-প্রজ্ঞ বলিলেন, “তোমাকে যদি এই পুস্তক দেওয়া হয়, তবে তুমি কি ইঙ্গ লইয়। যাইবে ।" আমি বলিলাম, “অতি আনন্দের সহিত ।” সুমতি-প্রজ্ঞ প্রথম দিলষ্ট বলিয়াছিলেন যে, এই গ্রামে তাহার পূৰ্ব্বপরিচিত বন্ধুদের সহিত সাক্ষণং করিবেন এবং সেইজন্য আমাকে দুই-এক দিন থাকিতে হক্টবে। পরদিন সেই কাজে তিনি বাহির হইলেন, আমি পুস্তক দেখা ও অল্পস্বল্প পড়ায় ব্যস্থ হইলাম । দ্বিপ্রহরে তিনি ফিরিয়া আসিয়া বলিলেন, আজিক্ট ধারা করিতে হইবে, সুতরাং সেই দিন ৮ই জুন দ্বিপ্রঙ্গরের পর আমরা দুই মাঈল দুরে তিঙরীর মূথে চলিলাম। হুমতি-প্রজ্ঞ বলিলেন, পুরানো জোঙ-পোন (জিলাধীশ ) তাহার পরিচিত, সুতরাং তাহার গৃহেই থাকিবেন । আমি ইহাতে বাধা দিতে তিনি বলিলেন, “তোমার ভয় কিসের ? এখানে কেহই তোমায় গ্য-গর-প ( ভারতীয় ) বলিয়া চিলিবে না ।" তিঙ রী পূৰ্ব্বতমালা হইতে বিচু্যত একটি পৰ্ব্বতশৃঙ্গের উপর একটি প্রাচীন কেল্লা বে-মেরামত অবস্থায় আছে যাহাঁতে এখনও কিছু সৈন্ত থাকে। এই পৰ্ব্বতযুলেষ্ট তিঙরী গ্রাম, গ্রামের আয়তম কুর্তী অপেক্ষ অধিক । এখনে নেপালী দোকানপাট নাই, তবে পূৰ্ব্বেকার চীনাদের সস্তানেরা এখনও কেহ কেহ এখানেই আছে । পুবানো জোড়-পোনের গৃহ গ্রামের এক প্রাস্তে, আমরা সেখানেই গেলাম। তিনি মুমতি-প্ৰজ্ঞকে দেখিয়া তাড়াতাড়ি আসিয়া তাহার পিঠের বোঝা নামাইলেন, পরে তাহার চাকরেরা আমার বোঝাও নামাইয়া লইল । সেই অঙ্গনেই গালিচ বিছানো হইল, সঙ্গে সঙ্গে গরম চায়ের পাত্র ও ছুরি স্বদ্ধ শুকানো মাংসও হাজির হইল। আমার সম্বন্ধে জোঙ-পোন মহাশয় কেবলমাত্র এই প্রশ্ন করিলেন, “ইনি ত লদা-পা (লদার্থ-বাসী) না ?” এই বলিয়। তিনি নিজের হাতে শুকানো মাংস কাটিয়া দিতে লাগিলেন । আমি সে মাংস খাইতে অসম্মত হওয়ায় স্বমতিপ্রজ্ঞ বলিলেন, “ও সবে মাত্র দেশ থেকে এসেছে, লদাথে সিদ্ধ না করিয়া ( অর্থাৎ না রণধিয়া ) মাংস খাওয়া হয় না।” মাংস খাওয়া শেষ হইতে হক্টতে নুতন জোড়-পোন মহাশয় আসিলেন এবং তাহার জন্য রূপার পাত্রে মদ আনা হইল । আমার সম্বন্ধে কি করিয়া সন্দেহ হইতে পারিত যে আমি সেই ভারতীয়দের দলে র্যাহীদের অনেক বন্ধুবান্ধব ভোটিয়দের আতিথ্যের অসদ্ব্যবহার এবং তাহীদের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করিয়া ইংরেজদের নিকট তিব্বতের গুপ্ত রাজনৈতিক ব্যাপার সকল ব্যক্ত করিয়াছিল ? যে কারণে এগল ভোটিয়দের সৰ্ব্বদাই তাঙ্গদের নিকট সৰ্ব্বাপেক্ষা পবিত্র ভূমির অধিবাসীদের সম্বন্ধে আশঙ্কিত ও সন্দিগ্ধ হইয়া থাকিতে হয় । আমাদের গৃহস্বামী বেশ রসিক পুরুষ ছিলেন, সন্ধ্যার সঙ্গে সঙ্গেই তাহার পেয়ালার পর পেয়ালা চলিতে লাগিল । লোকে বলে, “কারণ"ই তাহার পদচ্যুতির কারণ। রান্ত্রির অন্ধকারের সঙ্গে সঙ্গে তিনি পত্নীসহ বীণা বাজাইতে বাজাইতে মিত্ৰগোষ্ঠমিললে চলিলেন, চাকরদের উপর আমাদের ভোজন শয়নের ব্যবস্থা করার আদেশ হইল । অামার শমূলস্থল পাকশালাতেই নিদিষ্ট হইল, সেখানকার তত্ত্বাবধান এক অনীর ( ভিক্ষুণী ) উপর অর্পিত ছিল । ভোটদেশে পরিবারের সকল ভাই মিলিয়| এক পত্নী গ্রহণ করাই প্রথা, এই জন্য সকল স্ত্রীলোকের বিবাহ সম্ভব নহে এবং অবিবাঙ্গিতাদের মধ্যে অনেকে চুল কাটাইয়া অলী হইয়া, হয় মঠে আশ্রয় লয়, নয় ঘরে থাকিয় যায়। আমাদের এই অনী সাক্ষণং মহাকালা ছিল, শরীরের উপর এণ্ড পুরু কাল কাজলের স্তর ইঙ্গর পূৰ্ব্বেও আমি কাহারও দেখি নাই, পরেও দেখি নাই। ঐ কালে মুখমণ্ডলে চক্ষুর শ্বেত পরিবেষ্টিত রক্তাভ দুষ্ঠ বর্ণনার অতীত। দেখিলাম পৃকৃপা-পাকের সময় গতায় করিয়া নিজের হাতে তাহা ঢালিয়া সে লসৃণ পরীক্ষার জন্য চাথিয় দেখিল, এবং তাহার পরই পরনের চোগায় হাত মুছিল ! এইমাত্র রক্ষা থে, তিব্বতে ভোজনসামগ্রার দেওয়া-নেওয়! লা তৈয়ারী কর সবষ্ট হাত-চামচে চলে, হাতে ছো গুয়ার ব্যাপার খুবই কম। পুকৃপা-চী পানভোজনে রাত্রি দশট বাজিয়া গেল, তত ক্ষণ গৃহস্বামী বীণা বাজাইতে বাজাইতে ফিরিয়া আমাদের খাওয়া-দাওয়া সম্বন্ধে জিজ্ঞাসাবাদ করিলেন। মুমতি-প্রজ্ঞ কথায়-কথায় লাস যাইতে বলায় তিনি বলিলেম “কি করি, চাম ( চাম-কুশোক=উচ্চশ্রেণীর মহিলা ) যাইতে রাজী নহেন। পরে কিন্তু আমি লাসায় থাকিতে থাকিতেই এই