পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২৯৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শুষ্ক হাসির সঙ্গে ত্রিণ জবাব দিলে, “বিয়েতেই ত সব চেয়ে বেশী ভয় ।” একটু থেমে আবার বললে, “আচ্ছ, আমার ধে আগেই একটা বিয়ে হয়ে গিয়েছিল, তার খবর রাখ r” বিস্ময়মুখ রমেশের মুঠে৷ হঠাৎ শিথিল হয়ে যাওয়াতে হিরণের হাতখানি পড়ল খসে। হিরণ ফিক্‌ করে একটু না হেসে পারলে না। বললে, “এই না ভয় কি বলে আস্ফালন করছিলে ?” রমেশ আবার ভরসা পেয়ে দুই বাহুতে হিরণকে বেষ্টন করে বললে, “কেন তামাসা কর হিরু ?” হিরণ আবার গম্ভীর হয়ে বললে, “আমার আগে একটা বিয়ে হয়েছিল শুনে আঁৎকে ওঠ, আর তুমি ত দিব্যি দ্বিতীয় বার আমায় বিয়ে করে নিয়ে এলে ।” রমেশ অগ্রস্তুত হয়ে হিরণকে ছেড়ে দিয়ে বললে, “আমার প্রথম পক্ষের কথা সকলেই জানে—আমি লুকোই নি ত, আর তুমি হঠাৎ এখন বললে কিনা—” হিরণ জবাব দিলে, “আর আমার প্রথম পক্ষের কথা কেউ জানে না—তাই আমিও লুকিয়ে রাখবার স্থযোগ পেয়েছি ? না ? “ফের তামাসা ?” “তামাসা নয়, সত্যি ।” মেয়ের বিয়ে ঠিক হতে যত দেরি হয়ে যায়, বাড়ীর লোকেদের কথাবাৰ্ত্তায় বিবাহের জল্পনা যতই বেশী করে চলতে থাকে, মেয়ের মনের মধ্যে ভাবী সংসারের .বিচিত্র কল্পনা ততই প্রবলতর হয়ে ওঠে। তরুণীর উৰ্ব্বর মনের উপর অলক্ষ্য ও প্রত্যক্ষ বিবাহপ্রস্তাবনার সলিলসেচনে অঙ্কুরোদগত স্থপকল্পনা একটি বিশিষ্ট আকারে শিশুবৃক্ষরূপে পল্পবিত হয়ে উঠতে খাকে । হিরণের আশা ছিল, কোনও একটি তরুণ চিত্তের প্রথম প্রণয়-আহবানে তার যৌবন-সায়র উথলে উঠবে, নারীবদ্যানভিজ্ঞ তরুণ হৃদয়ের প্রথম স্পর্শ সারা দেহমনে শিহরণ জাগিয়ে তুলবে। সে কি অনিৰ্ব্বচনীয় আনন্দ । তার পর স্বামীর ঘর। পূৰ্ব্বে যা হয়ত ছিল নিতান্ত বিশৃঙ্খল— রাশি রাশি জিনিষ-পত্র আসবাব-পোষাক ইতস্ততঃ Woo-yo বিক্ষিপ্ত—সবই তার নিপুণ হস্তের স্পর্শে স্ববিন্যস্ত হয়ে উঠবে। গৃহসংলগ্ন পতিত জমি হয়ত থাকবে বন্যগুল্মে আচ্ছাদিত, তাকে সে স্বন্দর উদ্যানে রূপান্তরিত করবে। এক স্বামী নয়,—তার উচ্ছসিত প্রেমপ্রীতি উপচে পড়বে পূর্ণ-গৃহ স্বামীর আত্মীয়পরিজনের উপর। সে-সুখকল্পনার ইমারত, পরবর্তী প্রচও বাস্তবের আঘাতে বিধ্বস্ত । কিন্তু এ-বাস্তবকে হিরণ সত্য বলে নিতে পারলে না। তার কেবলই মনে হতে লাগল, সেই যে কল্পনার কুমারকে সে মন সমর্পণ করেছিল সে ত এই বিপত্নীক রমেশ হতে পারে না । তার কল্পনার প্রিয়তমাকে সে যা দান করেছে, সেই হয়েছে তার চিত্তদান । তার পর যে এই বিবাহ এ অতি মিথ্যা,—প্রতারণা। এ গৃহ, এ গৃহস্থালী পূৰ্ব্ব হতেই আর এক নারীর করস্পর্শে নিয়ন্ত্রিত, গৃহস্বামীর হৃদয়ে যে-নারী বিরাজ করে গেছে একদিন । এখানে হিরণকে আহবান করা শুধু ত গৌরবদানের অভাব নয়, অপমান। রমেশের কাছে হিরণ সংক্ষেপে কিছু কিছু বলে এই কল্পনা-বাস্তবের প্রচও বিপৰ্য্যয়-ব্যথা, রমেশ সাত্বনা দিতে যায়, কিন্তু কোন ফল হয় না । হঠাৎ হিরণ বললে, “এক বার তোমায় না বলেছিলাম অঞ্জলিকে কিছু দিনের জন্তে আমাদের এখানে এনে রাখতে, তার কি হ’ল ?” - অঞ্জলি রমেশের পূর্ব পক্ষের খালিকা। রমেশের মনে হ’ল—“কি ছেলেমানুষ এই হিরণ”, প্রকাশ্বে বললে, “অঞ্জলি আর এখানে আসবে কেন হিরণ ?” “কেন আসবে না ?” হিরণ অবাক হয়ে প্রশ্ন করলে। রমেশ কি উত্তর দেবে ভেবে পায় না। হিরণই আবার বলতে থাকে, “তার দিদি থাকতে আসতে পারত আর এখনও ত আমি তার দিদি হয়েই এসেছি এখানে, বোনকে আমি আনতে পারি না ?” রমেশ এবার জবাব দেয়, “সত্যিত তুমি তার দিদি নও, তার দিদির জায়গায় তোমায় চোখে দেখলে তার চোখে ম্বে জল আসবে তা বোঝ না ? তাকে কষ্ট দিয়ে লাভ কিছু আছে ?” “তোমার তে একটুও কষ্ট হয় নি বরং আনন্দই হয়েছে দেখছি তোমার স্ত্রীর জায়গায় আমায় এনে বসাতে।”