পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩০২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ミ*8 ढवज्ञान _ষতত্তত উঠতে পারছে না, পাশ দিয়ে মানুষের তৈরি রাস্তা নদীর সাথে সাথে যেন ভয়ে ভয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। চার দিকে ঘননিবিড় ঝিল্লীমুখরিত অরণ্যানী, অদূরে হিমালয়ের উন্নত মস্তক যেন নীচের ক্ষুদ্র মানুষের দিকে অমুকম্পার দৃষ্টিতে চেয়ে আছে । সিভোক যেখানে এসে তিস্তায় মিশেছে সেখান থেকে কালিম্পঙের প্রায় সমস্ত পথটাই তিস্তার পাশ দিয়ে গিয়েছে। পাহাড় নদী ও বন, এই তিনের সংমিশ্রণে যে-অপরূপ নৈসর্গিক ঐকতানের সমারোহ দেখলাম তা শুধু কাশ্মীরেই দেখা যায় । মোটরে বসে শুধু মনে হচ্ছিল, ট্রেনে গেলেই ভাল হত, কারণ রেলপথ নদীর একেবারে কাছ দিয়ে পাতা হয়েছে, মোটরের রাস্ত অনেকটা উচুতে। ট্রেন থেকে নদী আরও ভাল ক’রে দেখা যায়। তবে দুঃখের বিষয়, রেল কালিম্পঙ অবধি নেই, এর শেষ ষ্টেশন গিয়েল-খোলা থেকে আবার অনেকটা মোটরে যেতেই হয়, সে-জন্ত, এবং ট্রেনে গেলে অনেকটা সময় বৃথা নষ্ট হয়, সে-জন্তও, সাধারণতঃ লোকে মোটরেই যাওয়া-আসা করে। তিস্তা ও রিয়াং নদীর সংযোগ স্থল—এ-প্রাস্তের বিশিষ্ট বাণিজ্য- ও রেল- কেন্দ্র। রিয়াং থেকে বৈদ্যুতিক রজ্জ্বপথ সোজা কালিম্পঙ অবধি গিয়েছে, ভারী মাল এতে খুব তাড়াতাড়ি ও সস্তায় পাঠানো যায়। আর এর দ্বারা এ-দেশের গরীব কুলি-মজুর গাড়োয়ানদের ভীষণ ক্ষতি হয়েছে। আমার এক সহযাত্ৰিণী বললেন, “ইংরেজ এই রজুপথ গরীবের রুটি মারবার জন্যই এনেছে, তাদের সর্বনাশ ८छ्ांद्रः ।” তিস্ত ব্রিজ অবধি রাস্তা চড়াই বেশী নয়। নদীবক্ষের কাছ দিয়ে যেতে হয় ব’লে, দু-দিকেই স্বউচ্চ পৰ্ব্বত মনে হয় যেন বিরাট প্রাচীরের মত পথকে আগলাচ্ছে। পৰ্ব্বতগাত্রে রৌদ্রছায়ার খেলা সব সময়েই দৃষ্টি আকর্ষণ করে। বেশীর ভাগই সংরক্ষিত সরকারী বন দেখা গেল, কোথাও কোথাও পাহাড়ীর জঙ্গল কেটে পাহাড়ের গায়ে কি বিস্ময়জনক ধৈৰ্য্য ও কৌশলের সহিত চাষ করছে ও প্রকৃতির সহিত অবিরাম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে, তা দেখলে চমৎকৃত হতে হয়। অমুকুল আবেষ্টনে এই সব জষ্ঠি পাহাড়ীরা মাটি থেকে সোনা ফলাতে পারত, তা বুঝতে দেরী লাগে না। কত মজুর, চাষা, গাড়োয়ান পথে যেতে যেতে দেখলাম, কারুর মুখ দেখলে মনে হয় না এদের অভাব কি মৰ্ম্মাস্তিক । সকলের মুখেই একটা অবর্ণনীয় উৎসাহ দেখেছি। তারা সানন্দে ও কৌতুহলপরবশ হয়ে প্রত্যেক নবাগতকে নিরীক্ষণ করে শিশুজনোচিত উৎসাহের সহিত। ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা ত মোটর দেখলেই ছুটে আসে, আর এমন সরল গাম্ভীর্ষ্যের সহিত সেলাম করে যে, দেখে না হেসে পারা যায় না। বয়স্ক যারা টুপি পরে তারাও অতি ভদ্রতার সহিত ইংরেজী কায়দায় টুপি তুলে সেলাম করে। একটা সিগারেট উপহার পেলে এরা ধন্ত হয়ে যায়। ভীষণ সিগারেটপ্রিয় এরা। তিস্ত-ব্রিজে এসে গাড়ী দাড় করিয়ে বিহারী ড্রাইভার চায়ের দোকানে ঢুকল—তখন বাধ্য হয়েই নেমে পড়লাম। সহযাক্রিণীরাও চায়ের দোকানে গেলেন। অন্যমনস্ক হয়ে ফেরো-কংক্রীটের তৈরি স্ববৃহৎ ব্রিজের অসাধারণ গঠন দেখছি, ইতিমধ্যে কানে এল, “আপনার পাস দেখাবেন ত।” ফিরে দেখি, এখানকার পুলিস-ইনস্পেকটার মহাশয় আমার পাশে দাড়িয়ে। পাসের উপর দস্তখত করে আমার কালিম্পঙ যাওয়ার উদ্দেশু, সেখানকার ঠিকানা প্রভৃতি সব তাড়াতাড়ি জেনে নিলেন। লোকটি কিন্তু অতি ভদ্র। তিস্তা-ব্রিজের কাছে ছোট একটি বাজার এবং পল্লী অাছে, অদূরে সরকারী কৰ্ম্মচারীদের কয়েকটি স্বদ্বগু বাংলো দেখলাম। এখান থেকে একটি সরু মোটরের পথ ঘুম হয়ে দার্জিলিঙ গেছে—আর একটি বেশ বড় রাস্ত গ্যান্টক অবধি তৈরি হয়েছে ; তৃতীয় পথ এখান থেকে উপরে উঠেছে কালিম্পঙ পৰ্য্যস্ত। পথের প্রকৃত চড়াই এইখানেই আরম্ভ হয়। এক-এক জায়গায় রাস্তা এমনই খাড়া উঠেছে যে, নীচের খাদের দিকে তাকাতে রীতিমত ভয় হয়। ড্রাইভার বললে, “মাঝে মাঝে মোটর-ফুর্ঘটনা যে হয় না, তা নয়।” দূর হতে কালিম্পঙ পাহাড়ের আকৃতি ও ছোট-বড় বাগানবাড়ীগুলি বেশ স্বন্দর লাগে। মোটর প্রথমে বাজারে গিয়ে থামল একটি প্রকাও মুীখানার স্বমুখে ; বুঝলাম, সদিনীরা দোকানীর আত্মীয়া। তার হাসিমুখে বিদায় নিলেন—অল্পক্ষণের আলাপ, তবু মনে হচ্ছিল যেন কত দিনের