পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪১৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\లిపెస్ని ব্যাকরণকৗমুদী খুলিয়া তদ্ধিত প্রত্যয় পড়াইতে আরম্ভ করিয়াছেন, হঠাৎ খটখট করিয়া জোরালো পায়ের আওয়াজ স্থপরিচিত ছন্দে বাজিয়া উঠিল। স্বধা ফিরিয়া দেখিল হৈমন্তীকে সঙ্গে করিয়া হেড, মিষ্ট্রেস ঘরে জালিতেছেন। আনন্দে স্থধার বুকটা দুলিয়া উঠিল। কাল হইতে সে হৈমষ্ঠীর আশাপথ চাহিয়া আছে। এইবার সশরীরে হৈমন্তী তাহাদের ক্লাসে আসিয়া বসিবে। কিন্তু একটু ছখও হইল। যদি বেঞ্চিগুলা আর একটু পরিষ্কার চকচকে হইত, যদি মেয়ের হৈমষ্ঠীকে অভ্যর্থনা করিবার আর একটু উপযুক্ত হইত। স্বধাকে হতাশ করিয়া হৈমন্তী তাহাদের নীচের ক্লাসে গিয়া বসিল । ক্লাসমৃদ্ধ মেয়ে পণ্ডিত মহাশয়ের তীরবৃষ্টি ও নিদারুশ বিরক্তিকে অবহেলা করিয়াই ঘাড় ফিরাইয়া পিছনে তাকাইল। স্নেহলতার ঠোটছুটি কথা বলিবার জন্ত উদগ্র চঞ্চল হইয়া উঠিল। কিন্তু পণ্ডিত মহাশয়ের ভয়ে কথা ফুটিল না। যাহার মনে যত কথা ভীড় করিয়া আসিয়াছে, ক্লাস শেষ না-হওয়া পৰ্য্যস্ত তাহার একটিও প্রকাশ করিবার উপায় নাই। পয়তাল্লিশ মিনিট অধীর প্রতীক্ষায় কাটিয়া গেল । পণ্ডিত মহাশয় ক্লাসের শেষে ব্যাকরণকৌমুদী হাতে উঠিয় দাড়াইয়া স্বপুষ্ট শিখাটি ক্লাসের দিকে ফিরাইতেই স্নেহলতার কণ্ঠ ধ্বনিত হইয় উঠিল “নুতন মেয়েটি কি রোগ ভাই ? রঙটাও বেশ কালো " এক মুহূর্ডের ত পরিচয় তবু এতটুকু নিন্দ যেন স্বধার মনে কাটার মত বিধিয়া উঠিল। মনীষা বলিয়া উঠিল, শফটফাট বেশ ফিরিঙ্গির মত, কিন্তু কি চোখ বাবা ! যেন গিলে খেতে আসছে।” স্বধা ভাবিল, “হায় অন্ধ । চোখ কাকে বলে তাও কি তোমরা জান না ? ঐ অতল কালো চোখের রূপ, ঐ মৃণাল গ্রীব, ঐ পদ্মকুড়ির মত মুখ, কিছু তোমাদের চোখে পড়ল না, শুধু কালো রঙটুকু দেখতে পেলে ” কিন্তু স্থধ বাকৃপটু ছিল না ; তা ছাড়া মুখের প্রাত্যহিক ব্যবহৃত কথায় তাহার এই দৈবলন্ধ প্রিয় বন্ধুর প্রশংসা করা কিংবা নিন্দা খণ্ডন করিবার চেষ্টা করা দুই যেন তাহার কাছে দেবতার নির্মাল্য লইয়া পুতুলখেলার মত মনে হইতেছিল। সে জালোচনায় যোগ দিল না, কেবল বিস্থিত হইয়া ভাবিতে লাগিল, হৈমষ্ঠীর খামঞ্জর অন্তরালে পূজার প্রদীপের মত ©वां★र्नेौ Sessé যে প্রাণটি জলিতেছে, তাহার নিষ্কম্প দীপ্তি যে তাহার সৰ্ব্বাজে ছড়াইয়া পড়িয়াছে, ইহা কেন স্বধা ছাড়া আর কেহ দেখিতে পাইল না। স্বধা কবিতা কখনও লেখে নাই, কিন্তু কবিতার হাওয়াতেই তাহার প্রাণবায়ু আজন্ম নিশ্বাস লইয়াছে। তাহার মনে হইতেছিল একটি ছন্দ্ৰে লয়ে স্বরে স্বসম্পূর্ণ গীতিকবিতা যেন তাহার বাণীরূপ হারাইয়া অকস্মাৎ কায়াগ্রহণ করিয়াছে হৈমন্তীর মধ্যে। তাহার হাটাচলা কথাবলী প্রতি অঙ্গ চালনার ভিতর এই যে আশ্চৰ্য্য স্বযম ইহা কবিতা ছাড়া আর কিছুর সঙ্গে তুলনীয় নহে। সজিনীরা স্থধাকে আলোচনায় যোগ দিতে না দেখিয় বিস্ময় ও কৌতুহল দেখাইতেছিল, কিন্তু স্বধা কি তাহার মনের অনুভূতিকে এমন করিয়া মুখে প্রকাশ করিতে পারে ? করিলেও এই অন্ধের তাহাকে পাগল বলিবে। - ছুটির পর হৈমন্তী দৌড়িয়া আসিয়া দুই হাতে স্বধার দুই হাত চাপিয়া ধরিয়া বলিল, “তোমাকে ভাই, আমাদের গাড়ীতে যেতে হবে।” প্রশ্ন নয় একেবারে স্বনির্দিষ্ট আদেশ। স্বধা বলিল, “তুমি কোন বাসে যাবে তা ত জানি না। আমার বাড়ী যদি তার পথে না পড়ে ?” হৈমন্তী স্বধাকে জড়াইয়া ধরিয়া তাহার মুখখানা উচু করিয়া তুলিয়া হাসিয়া বলিল, “ন গো না, বাসে না। আমাকে নিতে বাবা গাড়ী পাঠিয়ে দেবেন, তাতে আমরা দুজন যাব, কেমন " স্বধা সঙ্কোচের সঙ্গেই বলিল, “আচ্ছা যাব, কিন্তু তোমার ফিরতে দেরী হয়ে যাবে না ?” প্রথম দিনেই বন্ধুকে অন্ধবিধায় ফেলিতে স্বধার আপত্তি ছিল। সে নিজের সামান্ত স্থখ-স্থবিধার জন্ত অপরকে এতটুকু অন্ধবিধায় ফেলিতেও সঙ্কোচ বোধ করিত। তা ছাড়া যদিও স্বধা এক দিনেই হৈমতীর প্রতি এতখানি আকৃষ্ট হইয়াছিল যে পাইলে তাহাকে অষ্টপ্রহরই ধরিয়া রাথিত, তবু তাহার নিজের সকল দিকের অকিঞ্চিৎকরতা সম্বন্ধে এমন একটা স্বম্পষ্ট ধারণা ছিল যে তাহাকে লইয়া কেহ বাড়াবাড়ি করিলে সে কিছুতেই স্বাচ্ছদ্য বোধ করিত না । বয়সে হয়ত হৈমষ্ঠীই চার-পাচ মাসের ছোট হইবে, কিন্তু