পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪১৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পৌষ डाङनर्थ-Cदोङ्ग" N9్స? মানুষ সংসার-পথে চলে। তাহারা পৃথিবীতে কাহার কাহার কাছে অবিচার, কাহার কাছে অত্যাচার ও উৎপীড়ন এবং কাহার কাছে কি কি দুঃখ ও মনোবেদন পাইয়াছে তাহারই হিসাব সযত্বে রাখে, অন্য দিকটা অবশুপ্রাপ্য মনে করিয়া সম্পূর্ণ ভুলিয়া যায়। স্বধা কিন্তু সেই দলে জন্মগ্রহণ করে নাই । তাহার বাল্য ও শৈশব কালের সমস্ত সম্বন্ধই আনন্দের সম্বন্ধ। মাতা পিতা, দুই ভাই, পিসিম, মাসিম, বহুদিনের অদেখা দাদামশায়, এমন কি করুণা ঝি প্রভৃতি যে কয়টি মাতুষকে লইয়া তাহার স্বনির্দিষ্ট ক্ষুদ্র জগৎ গঠিত, তাহাদের সকলের দানের ভাণ্ডার হইতে নিত্য কি পরিমাণ আনন্দ সে মধুমক্ষিকার মত কণ কণ করিয়া আপনার অন্তরে সঞ্চিত করিয়া রাথিয়াছে ও রাখিতেছে ইহাই ছিল তাহার যৌবন জাগরণের পথে সকলের চেয়ে বড় হিসাব। সেই জন্যই থাটি হিসাবীর মত নিজের দেনাটা সৰ্ব্বদা স্মরণ রাগিয়া আনন্দে সেবা করিতে সে ভালবাসিত । আপনার প্রিয়জনের শ্রেষ্ঠতা ও অতুলনীয়তা সম্বন্ধে তাহার মনে যে গৌরবময় ধারণা ছিল সেইটা ছিল তাহার জীবনের আনন্দের একটা মস্ত খোরাক। এই আনন্দলোকে এবং স্বন্দরী পৃথিবীর অপূৰ্ব্ব সৌন্দৰ্য্যলোকে সংসারের তুচ্ছতা ও অর্থহীন অতৃপ্তির উপরে তাহার মনটা সৰ্ব্বদা বিচরণ করিত বলিয়া পাখিব কোন অভাব কি অবিচার সম্বন্ধে যৌবন জাগরণের মুখে তাহার মনে কোন অভিযোগের স্বষ্টি হয় নাই। মৃত্যু কি বিচ্ছেদের যতটুকু পরিচয় তাহার ক্ষুদ্র জীবনে সে পাইয়াছিল তাহাতে বেদনার অন্তঃসলিল ধারা অনুরাগের মূলকেই আরও পুষ্ট করিয়া তুলিয়াছিল, মৃত্যু ও বিচ্ছেদকে অযৌক্তিক বলিয়া জীবনে বিদ্রোহ দেখা দেয় নাই । কিন্তু তাহার এই আত্মীয়গোষ্ঠী-পরিবৃত ক্ষুদ্র জগৎটা ছিল অত্যন্ত অভ্যস্ত, জন্ম হইতেই ইহার সহিত তাহার নাড়ীর সম্বন্ধ, তাই এই লোকের আনন্দটাও ছিল প্রতিদিনের প্রাণবায়ু ও অন্নজলের মত স্থপরিচিত। অকস্মাং হৈমন্তীর আবির্ভাব হইল সম্পূর্ণ ভিন্ন লোক হইতে। সে নিজেই যে শুধু অদেখা ও অপরিচিত ছিল তাই নয়, সে আসিয়াছিল এমন একটা আবেষ্টনের ভিতর হইতে বাহার সহিত ইতিপূৰ্ব্বে সুধার কোনই পরিচয় ছিল না। চোখে চোখ পড়িতেই এই দুইটি ভিন্ন লোকের মানুষের মনে একই তন্ত্রীর স্বর এক সঙ্গে বাজিয়া উঠিতে স্বধা একেবারে মুগ্ধ হইয়া গেল। ইহা তাহার জীবনে একটি অপূৰ্ব্ব অভিনব আবিষ্কার । স্বমিষ্ট ফুলের সৌরভ যেমন অদৃপ্ত থাকিয়াও বাতাসের প্রত্যেকটি স্তরে স্তরে অণুতে অণুতে ছড়াইয়া যায়, তেমনই হৈমষ্ঠীর আবির্ভাবের আনন্দ সুধার জীবনের সকল কাজ ও সকল সেবার মধ্যে অদৃশুরূপে নূতনতর প্রেরণা লইয়া ছড়াইয়া পড়িল । বেলুনের গ্যাসে ভার মুক্ত হইয় তাহা যেমন উৰ্দ্ধে আকাশলোকে উড়িয়া যায় স্থধাও তেমনই এই আনন্দের প্রাচুর্য্যে ভার মুক্ত হইয়া সংসারের উপরের সৌন্দৰ্য্যলোকে পার্থীর মত উড়িতে লাগিল । 姆 চন্দ্রকান্ত একেবারে শেষরাত্রের হালকা অন্ধকারের মধ্যেই বিছানা ছাড়িয়া উঠিয়া ছাদের চিলে-কোঠার ঘরে পূৰ্ব্বমুখী আসনে বসিয়া একতার লইয়া গান করিতেন— “কর তার নাম গাল যত দিন রঙ্গে দেহে প্রাণ” ঘুমের ভিতরেই বাবার মধুর কণ্ঠে – "র্যার হে মহিমা জলন্ত জ্যোতি জগৎ করে ঃে আলে।” শুনিয়া প্রায় প্রতি উধায় সুধা চোপ মেলিয়া দেখিত সুৰ্য্যের নবীন জ্যোতিরেখায় পূৰ্ব্ব গগন রাঙা হইয়া উঠিয়াছে। সুধাও তাড়াতাড়ি বিছানা ছাড়িয়া উঠিত, খোকনের ঘুম ভাঙিবার আগে তাঙ্গার ইস্কুলের অঙ্ক ও লেখাগুলি অস্তত সারিয়া রাখিতে হইবে, ন হইলে সে রুলার ও ইরেজার লইয়া ডাণ্ডাগুলি থেলিতে এবং কম্পাস লইয়া সারা বাড়ীতে পৃথিবী আঁকিতে লাগিয়া যাইবে । এদিকে ঝি রাধুনী আসিয়া পড়িলেই রান্নাঘরেও একবার না ছুটিলে চলিবে না, মা উপরে বসিয়া ভাড়ার বাহির ও তরকারি কোটার কাজটা না-হয় করিয়া দিবেন, কিন্তু থোকার দুধটা ফুটাইয়া আনা, শিবুর লুচিট চটপট বেলিয়া দেওয়া, বাবার ভাতট৷ তাড়াতাড়ি বাড়িয়া দেওয়া এসব ছড়াছড়ির কাজ নীচে আসিয়া ম' ত করিতে পরিবেন না। শিবু ভাল ভাত খাইয়া স্কুলে যাইতে চায় না, তার জন্ত রোজ লুচি চাই, সেটা তৰু মাছভাজা দিয়াই বেশ গরম গরম খাই লওয়া চলে।