পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পৌষ মায়ণ NES^ স্বধা তাহাকে কোলের উপর বসাইয়া তাহার ছোট হাতখানিতে আধখানা মাছভাজা তুলিয়া দিল। মহামায়া এই সময়টা স্নান ইত্যাদি সারিয়া একবার সিড়ি ধরিয়া আস্তে আস্তে নীচে নামেন। স্বধী চলিয়া যাইবে, তাহার খাওয়াটাও দেখা হইবে এবং তাহার অনুপস্থিতিতে বিকালের কাজও কিছু আগাইয় দেওয়া যাইবে । নিজের খাওয়ার পর সেই যে তিনি উপরে যান ত আর নীচে নামেন না। মহামায়া স্বধার দান দেখিয়া বলিলেন, “ঐ ত একখানা মাছ তাও আবার আধখানা ওকে দিলি, সারাদিন সেই পাচটা পৰ্য্যন্ত দাতে দাত দিয়ে থাকবি কি করে ? যান মেয়ে, তার লোকের সামনে ষ্টা করে খেতেও লজ্জা করে, পাছে তার দাত দেখে ফেলে। ও ননীর মা, এক ভাড় দই এনে দে ত বাছা তোর দিদিমণিকে। এই খেয়ে কি ন-টা পাচটা চলে কখনও " স্থধা শরীরবিজ্ঞান কি ডাক্তারী পড়ে নাই এবং লোভ জিনিষটা স্বভাবতই তাহার কম ছিল । কাজেই খাওয়৷ জিনিষটায় মানুষের কি প্রয়োজন সে বুঝিত না । ক্ষুধা ত ডাল ভাত খাইলেই মিটে, তবে আবার মাছ না হইলে হইবে না, দই না হইলে চলিবে না করিবার কি প্রয়োজন ? মা দই না খাওয়াইয়া ছাড়িবেন না, কিন্তু তাহার জন্য ত আবার দশ মিনিট ই; করিয়া বসিয়া থাকা চাই। উঠিয়া পড়িলে এতক্ষণে কালকের সেলাইট শেষ করা চলিত । মাঝখানে ক’ঘণ্টা খাওয়া হইবে না তাঁহাতে এমন কি চওঁী অশুদ্ধ হইবে ? মানুষ ত জানোয়ার নয় যে অষ্টপ্রহর জাবর কাটিতে হুইবে । ক্রমশঃ মায়া ঐসুপ্রভা দেবী আসিতে তরণী বাহি নদীর নীরে দিবস ফুরায়ে ধায়, ফুরায় হাসি, ঢেউগুলি উছলিয়া ভাঙিল তারে ; এবার ঘিরিয়া আসে আঁধার রাশি ; হেরিছু শ্রাবণ-নিশি সজল করিছে দিশি, হৃদয়-বাসনারাজি ছড়ায়ে এলেম আজি কথাহীন কানাকানি বাতাস ঘিরে, ফেলিক্কু পথের বঁাকে পথের বঁাশী : আসিতে তরণী বাহি নদীর নীরে । এবার ঘিরিয়া রবে আঁধার রাশি । আজিকে দিবস কোথা এলেম ফেলি, বারেক চাহিন্ত দূর আকাশমাঝে, কোথায় উড়িয়া গেল পাখাটি মেলি ! জলদ-অলক পাশে তারকা রাজে ; কোথায় প্রভাতবেলা অরুণ আলোক-মেলা, যেমন বনানী-ফাকে চকিত আলেয়া জাগে, অনেক কুমুদ্রবনে মরাল-কেলি ; ক্ষণিক বিজলী ঝলি লুকায় লাজে, সারাটি দিবস কোথা এলেম ফেলি । তেমনি একাকী তারা আকাশ মাঝে । কখন গ্রামের পথে গোখুর-ধূলি আজিকে মরমে লয় জীবন ভরি উড়ায়ে গোধূলি এল, গিয়েছি তুলি ; যে বঁাশ বাজিল মন উদাস করি, তখন ভেবেছি মনে নিরালে অলস ক্ষণে, যে-মায়ামুগের টানে চলেছি সমুখ পানে, বিজন মরমদ্বার অাধেক খুলি চলেছি দিবস রাতি ভাসায়ে তরী, কেহ কি হেরিবে মম স্বপনগুলি ? সে-মায়া দিয়েছে ধরা জীবন ভরি।