পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪৫৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

gN9o প্রবাসী SN98N9 তালে (যখন সঙ্গীত ও বাক্য স্তন্ধ হয়েছে তখনও, অর্থাৎ নিরালম্ব নৃত্যেও) আড়ির কাজ লক্ষ্য করেছি। আরও কতটা তালের উন্নতি নৃত্যনাট্যে সম্ভব এই বিচারের স্থান অন্যত্র-–কিন্তু উন্নতি যে হয়েছে এবং সে উন্নভি যে ভব্যতার সীমা অতিক্রম করে আড়ম্বরে পরিণত হয় নি এইটুকুই আমার বক্তব্য । অন্ত ভাবে বলা চলে, স্বতন্ত্র নৃত্যকলার উদ্ভাবনের জন্ত দুটি সত্ত্বরক্ষার প্রয়োজন ছিল ; প্রথমত উৎকৃষ্ট এবং কোন বিশেষ ভাবাশ্রিত সঙ্গীত-রচনার আধিপত্য থেকে নিষ্কৃতি, এবং দ্বিতীয়ত, তালের বৈচিত্র্য বুদ্ধি। সঙ্গীত হিসেবে কোন রচনা ষে-পবিমাণে উৎকৃষ্ট হবে সেই পরিমাণে সেই রচনা নৃত্যকলার স্বাতন্ত্র্য অর্জনে বাধা দেবে। কাব্যের বেলাও তাই, গৃঢ় ভাবব্যঞ্জক কিংবা স্বল্প অর্থবাহী কবিতা নুত্যের অনুপযোগী । চিত্রাঙ্গদার অধিকাংশ সঙ্গীত ( সবগুলি নয়, কারণ সেগুলি চিত্রাঙ্গদার জন্য লেখা হয় নি) নৃত্যের নিতান্ত অল্পকূল । তার মধ্যে ছড়া, আবৃত্তি থেকে উৎকৃষ্ট সঙ্গীত বৰ্ত্তমান, কিন্তু মোটের উপর সঙ্গীতের ধারাটি নৃত্যলীলাকে সমর্থন করে, ফুটতে দেয়, ভাসিয়ে নিয়ে যায় না । ( মোটের উপর অর্থে গড়পড়তা নয়, সমগ্রতার অনুভূতি উল্লেখ করছি। ) সঙ্গীতের এই আত্মসংযম না থাকলে চিত্রাঙ্গদ পুনরাবৃত্তি হত। নূতন স্বষ্টির জন্ত অতি সংযমের নিতান্ত প্রয়োজন ছিল। চিত্রাঙ্গদাকে কেবল নৃত্যের দিক থেকে দেখলেও অন্যায় করা হবে। চিত্রাঙ্গদ নৃত্যনাট্য—অর্থাৎ সাধারণ নাটকের কথিত ভাষার পরিবর্তে নৃত্যনাট্যের ভাষা হ’ল নৃত্য। এ-নৃত্য দেহের মুক-অভিনয় নয়, সঙ্গীতমুখর নৃত্য। নৃত্যনাট্য অবশু নাট্য, তার মধ্যে গল্প আছে, সে-গল্পের নাটকীয় গুণাবলী আছে, যেগুলি নৃত্যোপযোগী সঙ্গীতেরই ইঙ্গিতে পরিস্ফুট হচ্ছে। (সঙ্গীতের আশ্রয়ে নয়, আভাসে। ) কারণ, নাটকটি অন্ত কারুর নাটক নয়, রবীন্দ্রনাথের । চিত্রাঙ্গদা’র বিরোধ মানসিক, এবং তার অভিব্যক্তিও তাই । ‘বিসর্জন ও সামাজিক দু-তিন খানি নাটক ছাড়া রবীন্দ্র-নাট্যের প্রতিভাই হ’ল সাঙ্গীতিক। মোহ-মুক্তি যেনাট্যের সঙ্কটময় পরিশেষ, সে-নাট্যের গল্পাংশ হৃদয়গ্রাহী হলেও তাকে ঐ ভাবে দৈহিক অনুবাদ কিংবা অভিনয় করা যায় না যেমন সম্ভব ‘রাজহংসের মৃত্যু কিংবা “দুঃশাসনের রক্তপানকে। চিত্রাজদ-নাট্যের অবাকগোচর বিশেষত্বটুকু - তার আজিককে রক্ষা করেছে, বিদেশী অপেরার ভাবপ্রবণতা এবং কথাকলির দৈহিক ও জৈবিক অভিনয় থেকে। প্রমাণ, গল্প দেখা ও বোঝা ছাড়া নৃত্যনাট্যের অভিনয়ে অন্ত একটি আনন্দের উপকরণ ছিল। সেই জন্ত সব সময় গল্পাংশ পরিস্ফুট না হলেও ন-বোঝার ব্যাকুলত আমাকে ব্যথিত করে নি। সঙ্গীত ও নৃত্যের নীড়ে আমার গল্পামুসরণ প্রবৃত্তি রুদ্ধ হয়। সেটা আক্ষেপের বিষয় হয় নি। তবু চিত্রাঙ্গদা নাট্য—তার পাত্র-পাত্রী একাধিক, তার গতি একমুখী হলেও একটানা নয়, তাতে জোয়ার-ভাটা আছে, খালবিলের জল এসে তাতে পড়ছে। সেই জন্ত সমবেত-সুত্যের আঙ্গিক গ্রহণ করতে রবীন্দ্রনাথ বাধ্য হয়েছেন। লক্ষেীয়ের কালকা-বৃন্দাদীনের প্রবর্তিত এবং সমগ্র উত্তর-ভারতে প্রচলিত নৃত্য-পদ্ধতিতে (যাকে ভুল করে দরবারী, ক্ল্যাসিকাল বলা হয়, কিন্তু যেটি নিতান্তই রোমাণ্টিক এবং ঠুংরীর আশ্রিত ) নাটকীয় গুণ যা আছে, তা প্রকট হয় মাত্র এক জন নৰ্ত্তকেরই নৃতো। তিনিই কখনও ক্লষ্ণ, কখনও রাধ, কখনও বা গোপিনী। তিনিই বিভিন্ন ভঙ্গিমায় গল্প বলেন। দেশী নৃত্যে কিন্তু বছর স্থান আছে । নাটক যখন বহুনিষ্ঠ তখন কবি দেশী নৃত্যের আঙ্গিক গ্রহণ করতে বাধ্য। গ্রহণ অবশু উদ্বেগুসাধনের জন্ত অতুকরণ কিংবা চমক লাগাবার জন্ত নয়। এই বছর ব্যবহার নিতান্তই দায়িত্বপূর্ণ। সংখ্যাধিক্য এককের ও স্বকীয়তার সর্বনাশ ঘটাতে সদাই তৎপর। তাই সাবধানতার বিশেষ আবশ্যক। প্রয়োগকুশল শিল্পীর হাতে বছর অস্তিত্ব এককের, অর্থাৎ নায়ক-নায়িকার সম্বন্ধের গুরুত্ব নিৰ্দ্ধারণ করে। তখন পাত্র-পাত্রী তরফের এবং নায়ক-নায়িক জুড়ীর তীরের কাজ করে। মূল ঐক্যের সঙ্গে ঐ প্রকার সম্বন্ধ যদি না থাকে তবে পাত্র-পাত্রী কেবল ভিড়ই জমায়। ভিড়ের এক ভিড়-করা ছাড়া অঙ্ক কোন সার্থকতা নেই, তার মধ্য থেকে স্বতঃই কোন সম্বন্ধ উদগীরিত হয় না, বরঞ্চ, একককে নীচু স্তরেই নামায়। কিন্তু নায়ক-নায়িকার ব্যবহারে বিরোধ ও বিবৰ্ত্তন দেখান যদি উদ্বেগু হয়, এবং সেই সঙ্গে অন্ত পাত্র-পাত্রী অবতারণা করবার প্রয়োজন ঘৰি