পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪৬২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

مسوالاقلاع প্রবাসী ইতলত - মৃদ্ধ স্বরভি মনে হ’ত যেন এই পথেরই অজসৌরভ। সকালসন্ধ্যের আবছায়ায় এ পথের জনশূন্তত অদৃপ্ত জগতের ছায়ায় উঠত ভরে। পুরনো বসতবাড়ীটায় চুণ-বালি খসে গিয়ে হয়ত বাৰ্ধক্য এসে গেছে। চার-পাশে আগাছার জঙ্গল নিবিড় হয়ে গেছে এত দিনে, হয়ত চেনাই যাবে না। বাড়ীটার দোতলায় একটা ছোট্ট ঘর ছিল—সেটা ছিল তার পড়ার কুঠুরি। সেখানে বসে কত দিন ও রাত কত ভাবনায় তলিয়ে গেছে তার মন । সে ভাবনার ছোয়াচ এখনও হয়ত লেগে আছে ঘরের দেয়ালগুলোয়, সবুজ শুাওলার মত । মিত্তির-পুকুরের ঘাটটা শেষে আঘাটায় পরিণত হয়েছে ! ওর ধাপগুলো ভেঙে গেছে একেবারে । ওইখানে ব'সে ব’সে বন্ধুদের সঙ্গে কত রাজ্যের কত কথা কয়েছে সে। এখন তারা কোথায় ছড়িয়ে পড়েছে কে জানে । ফুটবলের হারজিত, সেক্রাপাড়াম আগুন নেবানো, মুচিপাড়ার কলেরা ও বসন্ত, লাঠিখেলায় গোরাচাদের নিপুণতা --ইত্যাদি কত কি গম্ভীর আলোচনায় ঘাটের আশপাশের হাওয়া যখন ভারী ও গমগমে হয়ে উঠত তখন পুকুরের জলো হাওয়া মৃদু শীতল নিঃশ্বাসে সে ভাবট দ্বিত হালকা ক’রে । সুমন্ত্র ভাবছে, সব বদলে গেছে। মাত্র কয়েকটা বৎসরের ব্যবধানে এ কি পরিবর্তন ? তার মনের মায়াবুলানো পুরনো স্থতির সঙ্গে সব কিছু আজ ঠিক মিলছে না যেন । গ্রামখানার যে-ছবি তার চিত্তভূমিকায় ভাগ্যবিধাতা ফুটিয়ে তুলেছিলেন তার শৈশবম্বর্গে, তার মধ্যে ছিল বিশাল উদারতা, সংকীর্ণ স্বল্পতার ধারণা তাতে ত ছিল না । এখানে আসার পূৰ্ব্ব মুহূৰ্ত্ত পৰ্যন্ত স্থিরই ছিল না যে সে এখানে আসবে। তবু এসে যে এত সব পরিবর্তন সে দেখতে পাবে তা মনে হয় নি। কালের রথযাত্রায় তার পুরনো ভাবনা-বেদনার কল্পনাস্বপ্নের কুসুম গিয়েছে পিষ্ট হয়ে । গ্রামখানা যেন শবরীর মত প্রতীক্ষায় ছিল, কবে তার প্রিয়বল্লভ রামচন্দ্র আসবে, যখন শেষে দয়িতের দেখা মিলল, তখন শুকিয়ে ঝরে গেছে তার বিকশিত যৌবন। সিভিল সাভিসে প্রবেশ করার পর থেকে স্বমন্ত্রকে সরকারী কাজে দেশবিদেশে ঘুরে বেড়াতে হচ্ছে অনেক দিন ধ'রে । আজ সহসা ট্রেন থেকে এই ষ্টেশনে নেমে পড়তে কেন তার অকারণ একটা ভাবপ্রবণ কৌতুহল হ’ল, তা সে নিজেই জানে না। এত কাছে এসে পড়েছে, আর একবার এই পুরাতন লীলানিকেতনের সংবাদ না নিয়ে ফিরতে তার ইচ্ছে হ’ল না। মাত্র ঘণ্ট। দুই কি তিন, তার পরই ত আবার এই গতিশীল জগতের সঙ্গে সমান তালে চলা ; ক্ষতি क् ि? পথে নিপু সরকারের সঙ্গে সাক্ষাৎ। স্বমন্ত্রকে সে ধরে নিয়ে গেল তার বাড়ীতে। তার পর খবর দিতে ছুটজ আর সবাইকে। নিপু ছেলেবেলায় ভারী ঝগড়াঝাটি করত। এখনও ওর ঠোটের তলায়, ক্রর ওপরে দস্তিপনার দাগ মেলায় নি। কয়েকটা বছর, আর একটি গৃহিণী, তাকে কিন্তু এখন বেশ সভ্যভব্য করে তুলেছে। ছোট একটুখানি জমিদারী তদারক করে, আর অবসর-সময়ে তাসপাশার আডডা বসায় বাড়ীতে । ছোট্ট তরুর সঙ্গে তাহলে নিপুর বিয়ে হয়েছে ?—সুমন্ত্র মনে মনে খুশী হয়ে বললে, বেশ । তরু শুামল চারাগাছটির মত ছিল ছোট, চিকণ ঢলঢলে ছিল মুখখানা। ঠোট দুটি পুরস্ত, লক্ষ্মীমস্ত। হাসি আর কান্নায় তার চোখের রংটাও যেন বদলে যেত। মুখে ছিল না ভাষা, চোখেই কথা কইত। কেমন একটা ভালমানষি ভাব ছিল তার চোখে মুখে, যেন তার অতি বড় মিথ্যে কথাটাও অবিশ্বাস করতে প্রবৃত্তি হ’ত না । স্বমন্ত্রের এক সময়ে ওকে ভারী ভাল লাগত। বারো বছর আগেকার ঐ তরুকে । সময়ের অতিপাতে সে-তরুর এখন ভিন্ন রূপ । সে এখন কথা কয় যেন গ্রামোফোনের মত। যত ক্ষণ কিছু বলবার থাকে, তত ক্ষণ ত বকেই, বলবার কিছু না-থাকলেও বিরাম নেই। বুদ্ধির চাষ নেই মগজে, কাজেই বোঝে কম, আবার যা বোঝে না তা নিয়ে করে তর্ক আর বাধায় গোল । তমুদেহের সে স্বল্প সীমারেখা নেই, অতিমেদভারে চাঞ্চল্য তার মরে গেছে অকালে - • • পরিচিতের দল প্রায় সকলেই এসে জুটল নিপুর বাড়ীতে। ভাস্ক, অঙ্ক, দীপু, হেমা ইত্যাদি দু-চার জন বাল্য সখা ও সর্থীদের দেখে মনে হ’ল যেন এর ভিন্ন জগতের লোক। ওরা কেউ বাবা, কেউ মা,—কঠোর কৰ্ত্তব্য করে ওদের মুখ কি গম্ভীর হয়ে গেছে । তারই শুধু ভবঘুরে-বৃত্তি ঘুচল না, চোখে তার লাগল না সংসারের মায়াঘোর। গায়ের ছেলেবুড়ে অনেক এল খবর পেয়ে। শুনেছে গায়ের ছেলেটি কোথাকার হাকিম হয়েছে, তাই তাদের ঔৎসুক্য জেগেছে। কিন্তু ঐ-সব মুখের সঙ্গে স্বমন্ত্রের যেন স্পষ্ট পরিচয় নেই। ঘুমন্ত স্থতির মধ্যে খুঁজতে লাগল সে ওদের পুরনো চেহারাগুলো । সবাইকে ডেকে নিপু বললে, “ও নিমাই খুড়ে, ও নাম দাদা, জান ত আমাদের স্বমন এক জন ডাকসাইটে হাকিম। কত দিন পরে দেখা, আমি কিন্তু মুদ্বীপাড়ার রাস্তায় ওকে দেখেই চিনতে পারলাম। কেমন ? নয় রে স্বমন ? তুই কিন্তু বিশেষ বদলে ঘাস নি, শুধু সাহেবদের মত একটু চ্যাঙ আর ফরসা হয়েছিল। বেশ আছিল, না রে স্বমন ?”