পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৫১৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মাঘ ঐ ঈষৎ কম্পন আর ঐ ছুটি মাত্র কথায় স্বধা যেন তাহার সমস্ত অকথিত বাণী আনন্দ-সঙ্গীতের মত গুনিতে পাইল । স্ফটিকের মত স্বচ্ছ হইয়া উঠিল হৈমন্ত্রীর তরুণ চোখের গভীর দৃষ্টি, তাহার মৃণাল গ্রীবার সস্নেহভীটুকুও যেন হইয়া উঠিল ভাষাময়। এমনই নীরবেই ফুটিয়া উঠিত তাহাদের নিষ্কলঙ্ক কিশোর জীবনের প্রথম বন্ধুপ্রীতির অমান কুমম। এক মুহূৰ্ত্তে বলা হইয়া যাইত এক যুগের কথা। পৃথিবীর হাটে চলতি সাধারণ কথাগুলা সম্বন্ধে স্বধার অবজ্ঞা থাকিলেও সে ধীরে ধীরে বলিল, “তুমি ভাই, রোজ রোজ এমন ক’রে জর করো না, শরীর একেবারে নষ্ট হয়ে গেলে কি হবে ভাব ত!” হৈমন্তী স্বধার মুখের দিকে চাহিয়া উদাসীন ভাবে বলিল, “কি আর হবে ? তোমরা কত এগিয়ে পাসটাস করে যাবে, আমি পড়ে থাকব ।” মৃধা ব্যথিত হইয়া ভাবিল, হৈমন্তী তাহার কথার অর্থ কিছুই বুঝিল না। তুচ্ছ ভাষার ক্ষমতা কি সামান্ত। স্বধার মনের গভীর স্নেহ হইতে উৎসারিত যে উৎকণ্ঠ, যে নিদারুণ ছশ্চিন্তার কথা সে বুঝাইতে চাহিয়াছিল, তাহার মুখের কথায় ত তাহার সহস্রাংশের একাংশও প্রকাশ হইল না। স্বধা হৈমন্তীর দুই হাত সজোরে চাপিয়া বলিল, “ন, ওসব বাজে কথা নয়। তুমি আর জর করতে পাবে না, পাবে না, কক্ষনো পাবে না । হৈমন্ত্ৰী খুশী হইয়া বলিল, “আচ্ছ, তোমার হুকুম পালন করতে চেষ্টা করব।” তারপর নীরবে কিছুক্ষণ ক্ষান্তবর্ষণ আষাঢ়ের আকাশের দিকে চাহিয়া বলিল, “দেখ, দেখ, পশ্চিমের আকাশের দিকে চেয়ে দেখ । আকাশ ভরে রঙের আগুন ছড়িয়ে পড়েছে । কি আশ্চর্ধ্য শিল্পী সে, ষে এই বিরাট আকাশের গায়ে প্রতি সন্ধ্যায় নূতন নূতন রঙের এমন অপূৰ্ব্ব সমারোহ করে। আমি এ রূপসাগরের ফুল খুঁজে পাই না। মানুষের তুলিতে এ রূপ ফোটে না, মানুষের ভাষাতেও এর নাম নেই।” হৈমন্তী কথা বলিতে বলিতে যেন তন্ময় হইয়া ধ্যানন্থ হইয় ঘাইত। স্থধ্যাস্তের বর্ণচ্ছটা তাহাকে যেন মায়াবীর বাশির স্বরের মত জুলাইয়া এক লোক হইতে অন্ত লোকে गहेब बाहेष्ठ । प्रषा चूक श्ध चाकांटलब्र cनोन्नदानडाद्ब्रब्र অলখ-ৰোগরণ ৪৯১ দিকে চাহিত, কিন্তু ততোধিক মুগ্ধ হইত হৈমষ্ঠীকে দেখিয়া । ভাবিত, না জানি হৈমন্তী তাহা অপেক্ষ কত শ্রেষ্ঠ লোকের মানুষ, কত গভীর করিয়া এই পৃথিবীর বিচিত্র রসাল্লভূতি তাহার হৃদয়ে জাগে। গন্ধৰ্ব্বলোকবাসিনীদের মত পৃথিবীর স্থূলতা তাহাকে কোথাও যেন স্পর্শ করে না । se হৈমন্তীর ধ্যান হঠাৎ ভাঙিয়া গেল, সে হঠাৎ বলিয়া উঠিল, “তুমিও কিন্তু ঐ আকাশের মত স্বন্দর, অমনি নিত্য নূতন রূপের ছায়া তোমার মুখে পড়ে। তোমার মনে কিসের খনি আছে বল ত " স্বধা লজ্জায় লাল হইয়া বলিল, “কি ষে তুমি বল ।” আর বেশী কথা তাহার যোগাইল না, মনে মনে ভাবিল, *হৈমন্তী পাগল। আমি ভারি ত একটা মানুষ ! একটা কথা বলতেও ভাল ক’রে পারি না । আমাকে ও কি-না মনে করে ” 鸭 হৈমন্তী আবার প্রকৃতিস্থ হইয়া বলিল, “এই বারাঙ্গায় বসে রবিবাবুর ‘বলাকা’ পড়তে আর জর হ'লে এই আকাশের দিকে চেয়ে চুপটি করে শুয়ে থাকতে ভারি ভাল লাগে। বৃষ্টি না এলে এখান থেকে কেউ আমায় নাড়াতে পারে না। তুমি যদি রোজ এখানে আসতে ত দেখতে ষে সকাল-সন্ধ্যা সবই এখানে কেমন স্বন্দর হয়।” পথের ধারে এক সারি দীর্ঘ ঋজু দেবদারু গাছ ও দুইএকটা বৃহৎ ছত্রাকার কৃষ্ণচুড়া গাছ বর্ষার জলে ঘন পত্রসম্ভারে ঝলমল করিতেছিল। তাঁহাদের স্নিগ্ধ শুাম রূপে চক্ষু জুড়াইয়া যায়। স্বধা ভাবিল, সুন্দর বটে ! কিন্তু নয়ানজোড়ের বর্ষার ঘনঘটা, নীল আকাশের গায়ে জটাজুটময়ী রণরঙ্কিণী ভৈরবীর উন্মত্ত বাহিনীর মত পুঞ্জ পুঞ্জ কাল মেঘ, দিগন্তের এক প্রান্ত হইতে অপর প্রান্ত পৰ্যন্ত পৃথিবীর বুকে সবুজের কত স্তর, ক্ষেতের কচি ধানের অক্ষুরে তরঙ্গহিরোলের মত বাতাসের খেলা, পাথরের বঁাকে বাকে নৃপুর বাজাইয়া জলস্রোতের নৃত্য, হৈমন্তী ত দেখে নাই, দেখিলে পাগল হইয়া যাইত। স্বধা বলিল, “তোমাকে ভাই, একবারটি নয়ানজোড়ে নিয়ে যাব, দেখবে সত্যিকারের পৃথিবী কি ” হৈমন্তী যেন ছেলেমান্থব স্থধাকে ঠাট্টা করার স্বরে বলিল, “তার মানে আমার এই পৃথিবীটা কিছু নয় বলতে