পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৫২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মাঘ অলখ-ৰোগরণ இ6; বৎসরের ব্যবধান ঘটিয়া তাহার জীবনে এমন সকল পরিবর্তন কেন আসিবে তাহা সে স্পষ্ট করিয়া বুঝিতে পারে না। কেনই বা পৃথিবীর অর্ধেক মানুষ হইতে তাহাকে দূরে দূরে থাকিতে হইবে এবং কেনই বা বিশেষ একটি মাহুষের জন্তই তাহার বিস্তাবুদ্ধি যোগ্যতা সব মাপিয়া রাখিতে হইবে তাহাও বুঝা শক্ত। সে এতকাল পিতামাতার কাছে ব্যক্ত ও অব্যক্তভাবে শিথিয়াছে, মামুষের বিদ্যাবুদ্ধি ও শিক্ষাদীক্ষা তাহার নিজের এবং দশ জনের আনন্দ ও উন্নতির জন্ত, তবে আজ তাহার বেলা মাসিমা পিসিমারা সব নুতন নিয়ম প্রচার করিতেছেন কেন ? স্ত্রীলোকেরা কি ঠিক মনুষ্যজাতির মধ্যে গণ্য নয় ? একটুখানি নীচে বোধ হয় তাহাদের আসন । কিন্তু কেন ? যাইবার সময় স্বধী স্বরধুনীকে বলিল, “মাসিম, আবার তুমি কবে আসবে ” মাসিম বলিলেন, “তোমার বর দেখতে আসতেই ত হবে মা। সে আমাদের কত অাদরের জিনিষ ।” আবার সেই সব কথা ! স্বধার জন্ত আর মাসিম আসিবেন না। স্বধা এখন আর সে স্বধা নাই। ছুটি প্রায় কাটিয়া আসিতেছে। কিন্তু নয়ানজোড়ে চলিয়া যাওয়ার জন্য বাড়ীর কাজকৰ্ম্ম অনেক জমা হইয়া উঠিয়াছে। পিসিমা-মাসিমাদের নূতন প্রসঙ্গের কথা ভুলিয়া এইবার স্বধাকে সেই-সব দিকে মন দিতে হইবে। তাহার উপর হৈমন্তীর ডাকও আছে। প্রায় মাস-থানিক দেখ+ শুনা নাই, হৈমন্ত্ৰী অস্থির হইয়া উঠিয়াছে। ছুটি থাকিতে থাকিতেই বড় রকম , একটা উৎসব কি চড়ুই-ভাতের আয়োজন করিয়া সে এতদিনের আদর্শনের দুঃখটা একটু জুলিতে চায় । স্থধার ত এত আয়োজন করিবার ক্ষমতা নাই, সে আর কি করিবে ? হৈমন্ত্ৰীকে ভাকিয়া এক দিন নিজের হাতে মাছের ঝোল ভাত রণধিয়া খাওয়াইবে । হৈমন্তী নুতন গুড়ের পায়েস খাইতে ভালবাসে। স্বধা নয়ানজোড় হইতে পিসিমার কাছে চাহিয়া নূতন গুড়ের ‘নবাত আনিয়াছে, তাই দিয়া পায়েস রণধিবে। আর একটা বিদ্যাও সে পিসিমার কাছে শিখিয়া আসিয়াছে— বিৰি-খোপা বাধা। হৈমষ্ঠীর ঐ রেশমের মত নরম কুঞ্চিত কাল চুলগুলি দিয়া কেমন খোপা হয় স্থধা দেখিবে। হৈমন্তীও ত বড় হইয়াছে, এখন জোড়া ফাস দেওয়া বিকুনি না ঝুলাইয় তাহার মৃণালের মত গ্রীবাটি বাহির করিয়া খোপা বাধিলে গ্রীক দেবীমূৰ্ত্তির মত স্বন্দর দেখাইবে। স্বরধুনী চলিয়া যাইবার পর সংসারের তোলা বিছানকাপড় রোদে দিতে দিতে স্বধা এই-সব সাত-পাচ ভাবিতেছিল। অন্তান্ত বছর ভাঙ্গ মাসেই সমস্ত কাপড়চোপড় রোদে দিয়া ছ'মাসের মত বাড়িয়া তোলা হয়, এবার আর তাহা হইয় উঠে নাই। বিধাতাপুরুষ বোধ হয় ভুলিয়া গিয়াছিলেন যে পাজিতে ভাত্র আশ্বিন বলিয়া দুইট মাস আছে। সেই যে জ্যৈষ্ঠ মাসের শেষ হইতে বৃষ্টি নামিয়াছিল, একেবারে শেষ হইল কাৰ্ত্তিকের গোড়ায় আসিয়া। অবিশ্রাম জলে সারা ভারতবর্ষটাই যেন তলাইয়া যাইবার যোগাড় । কলিকাতার লোকে স্কুদ্ধ দু-বেলা ভাবিতেছে, এই বুঝি গঙ্গার জলে ষাড়ার্ষাড়ির বান ডাকিয়া শহর ডুবিয়া যায়। ইহার ভিতর ছোট্ট ভাড়াটে বাড়ীতে ঘরের ভিতরকার বিছান-কাপড়ই গুৰু রাখা দায় ত বাহিরে দিবে কি ? স্বৰ্য্যদেব ত মেঘের ঘেরাটোপ তুলিয়৷ পৃথিবীর মুখ দেখিতেই পান না। দক্ষিণের বারাণ্ডার দরজার কাছে তক্তাপোষটা টানিয়া মহামায়া বসিয়াছেন একটু হাওয়া পাইবার আশাতে। মুধা ছোট ছাদে ঝুলানো লোহার তারে গরম ও রেশমের কাপড়গুলি শুকাইতে দিতেছিল। লেপগুলাও আলিসার উপর মেলিয়া দিয়াছে। মহামায় বলিলেন, “শিবুর হাতে কাপড় পড়লে ভালমন্দ ত কিছু বিচার করে না, তার কাছে চটও যা আর কিংখাবও তা। কাপড়গুলোকে একটু ছঠাই ক’রে রাথিস্ বাছা! তসরের পাঞ্জাবী, সিন্ধের শার্ট সব ঘেটে গোবর করে রেখেছে, সেগুলো শুধু রোদে দিলে ত হবে না, শালকরকে ডাকিয়ে একবার কাচিয়ে নিতে হবে। সারা শীত ওসব গায়ে উঠবে না, আকাচা তুলে রাখলে ষেকাপড়ের সঙ্গে তুলবে তাও পোকায় কেটে গুড়ো গুড়ে ক'রে রেখে দেবে।" স্বধা বলিল, “আচ্ছ, আমাদের তিনজনের কাপড় রোমে দিয়ে ঝেড়ে ঝুড়ে রাখি। ওই দুই মূৰ্ত্তিমানের জিনিষ না-হয় কেচে তোলা যাবে। বাবার ত ছুখানা এণ্ডি জীর গরদের চাদর, ও ত রোদেও না দিলে চলে। সারা