পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৫৭২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দেবতা ীিসুশীল জানা দেবতার জন্ম ॥••• সেদিন গোধূলির আকাশ অন্ধকার করিয়া রূপকথার ঝড় উঠিয়াছিল । মুখে ঘাস লইয়া গাভীগুলি ফিরিয়া আসিয়াছে—আসে নাই কেবল কাজলী ৷ রাখাল বালক উদ্বিগ্ন মনে ছুটিয়াছে প্রিয় গাভীটির সন্ধানে । খুজিতে খুজিতে অবশেষে কাজলীর সাক্ষাৎ মিলিয়াছে বালুম্বাড়ীর পাশে--বাদাম-জঙ্গলের অস্তরালে । সেদিন বালক বিস্থিত হইয়া দেখিয়াছিল, কাজলী নিশ্চল হইয়া দাড়াইয়—ভাঙ্গার সমস্ত দুগ্ধ বিনা-দোহনেই বালির উপরে ঝরিয়া পড়িতেছে । দেবতার জন্ম হইয়াছিল সেইখানে । এ সহস্ৰ সহস্ৰ বৎসর পূৰ্ব্বের কাহিনী । সেই কাহিনী বাচিয়া আছে সরল বিশ্বাসের উপর ভর করিয়া, কিন্তু দেবতার বাহ আড়ম্বর সন্দিগ্ধ মনের উপর ভর করিয়| বৎসরের পর বৎসর দেউলের চুড়ায় সোনার কলস, রূপার কলস সাজাইয়াছে, দেবালয়ের প্রাঙ্গণ বিস্তৃত করিয়াছে, নাটমন্দির তুলিয়াছে, নতুবা যে দেবতা সন্তুষ্ট হইবে না। সন্দিগ্ধ মন সন্তুষ্ট করিতে পারে নাই তাই চৈতালী ঝড় উগ্রদেবতার মূৰ্ত্তি ধরিয়া ধুলাবালি উড়াইয়া চারি দিক অন্ধকার করিয়া ফেলে, বাদাম-ঝাউয়ের শ্রেণী গভীর আৰ্ত্তনাদে মর্শ্বরিত হইয় উঠে, অদূরবর্তী সমুদ্র-কল্লোল যাত্রীর মনে শঙ্কা জাগাইয়া তুলে। কাহিনী বলে সহস্ৰ সহস্ৰ বৎসর পূর্বের সেই রাখালরাজ ওই সময়ে আসিয়া পাপীর বিধান দিয়া যায় । মহামারী ছড়াইয়া পড়ে। সেদিনও বাতাস ক্রমশ: জোরে বহিতেছিল যাত্রীদের গরুর গাড়ী শ্রেণীবদ্ধভাবে চলিয়াছে—সন্ধার স্বল্পান্ধকার পথ দিয়া । এই সময়টায় গাজন উপলক্ষ্য করিয়া বুড়াশিবের উৎসব চলে। মেল বসে—বন্ধ দূর দূরান্তর হইভে যাত্রীরা আসে । গরুর গাড়ী মন্থর গতিতে চলিয়াছিল, এমন সময় পাশের বাদাম-বনের ভিতর হইতে এক জন স্ত্রীলোক বাহির হইয় আসিল—আকৃতি দেখিয়া উন্মাদ বলিয়াই বোধ হয়। আসিয়া জিজ্ঞাসা করিল, মোহন গোসাইকে চেন গে1 ? : সঙ্গে একটি ছোট ছেলে, স্থবল নাম !--- গাড়োয়ানের নিকট হইতে উত্তর আসিল— না, এপনও ত খোজ পাই নি । পেলে বলবো । যেন অভ্যাস-মত উত্তর । যাতায়াত করে তাহাদের যাইতে হয়। যাত্রীরা কেহ গাড়ীর ভিতর হইতে উকি মারিয়া দেখিতেছিল, কেহ উৎকৰ্ণ হুইয়া শুনিতেছিল । স্ত্রীলোকটি হতাশ হইয়া মৰ্ম্মায়মান বনের মধ্যে হঠাৎ অদুগু হইয় গেল । খল খল করিয়া হাসিয়া ডাকিয়া ডাকিয়া ছুটিয়া চলিল-- যাহার এই পথ দিয়! এই রকম উত্তর দিয়া মোহন গোসাঈ---সুবল রে- -- বধু মালতীমালা উৎসুক কণ্ঠে স্বামীকে জিজ্ঞাসা করিলকে বল ত গো ? —কে হারিয়ে-টারিয়ে গেছে বোধ হয়। তাই... —না বাবু, হারান নয়—ভেতরে আরও কথা আছে, গাড়োয়ান ভণিতা করিয়া বলিল, ওকে ডাকে লোকে বিশুপাগলী ব’লে—আসল নাম বিশাপ । বেষ্টিমের মেয়ে--- সে যেটুকু জানিত বিবৃত করিয়া গেল। খুব অল্পষ্ট সে জানিত । তাই কতকগুলা মিথ্যা কথা জুড়িয়া একটু দীর্ঘ করিয়া চটপট উপসংহার করিল ; ঝড় উঠবার লক্ষণ দেপা যাচ্ছে বাবু আজকে । বলা যায় না, রাগালরাজ হয়ত আসবেন । যাত্রীদের আর দুর্দশার অস্ত থাকবে না তা হ’লে বাৰু। তিনি কি আর একা আসবেন, সঙ্গে নিয়ে আসেন ঝড়, শিলাবৃষ্টি, মহামারা...পাপীর সাজা দেবার . মালিক তিনি । আহা, দয়াময় . গাড়োয়ান অদৃশু মালিকটিকে প্রণাম করিল। বন্ধু সশঙ্কিত চিত্তে রুগ্ন শিশুটিকে বুকের মধ্যে টানিম লইয়া উন্মাদিনীর বাতাসে-ভাসা কণ্ঠস্বর উৎকৰ্ণ হষ্টয়া