পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৫৭৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মাৰ_ দেবতা 位8° শিয়রের নিকট আসিয়া বসিয়াছে—চোখে যেন দুই ফোটা জল । অস্পষ্ট কণ্ঠে সে বলে, মা, বডড ব্যথা। মা কোন সাড়া দেয় না-অশ্রুসিক্ত দুইটা অপরাধী চক্ষু দিয়া নীরবে তাহার দিকে তাকাইয়া থাকে—নিমপাতাগুল সৰ্ব্বাঙ্গে বুলাইতে থাকে। স্থবল স্বস্তির নিশ্বাস ফেলিয়া অতিকষ্টে কয়াধুর কোলের উপর মাথাটা তুলিয়া দেয়। আরাম করিয়া মাকে যেন জড়াইয়া ধরিয়া চক্ষু মুদিয়া মায়ের অদৃশু স্নেহটুকু উপভোগ করিবার চেষ্টা করে । চক্ষু মুদিয়া সে যেন শুনিতে পায়—কত দূর-দূরান্তর হইতে ঋষি মাষ্টার ডাকিতেছে, মোহন ও মোহন—আরে কয়াধু গেল কোথা! না, মাটি করলে দেখছি--- কয়াধু নিশ্চল পাথরের মুক্তির মত বসিয়া। কোল হইতে মৃবলের মাথাটা নামাইতে তাহার সাহস হয় না –হয়ত ছেলেটার তন্দ্রার ঘোরটা কাটিয়া যাইবে । এখন হয়ত যন্ত্রণার একটু লাঘব হইয়াছে। অপরাধীর মত অনড় ভাবে বসিয়া থাকে । অপরাধীই ত— মোহন ভাবে, এক জনের নিকট সশ্রদ্ধ প্রশংসা কুড়া তে গিয়া, স্বাভাবিক ভালবাসা, সহজ সরল ভালবাস কুড়াঙ্গতে যাঙ্গয়া, নিজেকে মহানুভব সাজাইতে গিয়। অবশেষে সে এ কি কুড়াই বে ! স্থবল যখন তাহার মা'র নিকট ফিরিয়া গিয়া বলিবে, গোসাই-কাক আমাকে একটুও যত্ন করে নি মা—আর আমি ওঁর সঙ্গে কিছুতেই যাব না, তুমি কিন্তু কিছু আর বলতে পাবে না । উঃ, বসস্থ হ'লে গা-হাত কি ব্যথা হয় ম+আর চুলকানি, কেউ একটু নিমপাতাটাও বুলিয়ে দেয় নি গায়ে - ইত্যাদি । তাহা হইলে মোহন যাহা পাইয়াছে তাহাও যে হারাষ্ট্ৰবে! কেবলমাত্র স্ববল ফিরিয়া গিয়া ভার মা'র কাছে ভাল বলিবে এই জঙ্ক মোহনের অন্তরে বাহিরে যে কত চেষ্ট—সে কাহাকে তাহা বুঝাইবে । হবলের যাহাতে কোন কষ্ট, কোন অথবিধা না-হয়, সে যাহাতে ভাল থাকে—এক-কথায় কোন অসুযোগষ্ট যেন ন উঠিতে পায় মোহন সেজন্য যথেষ্ট সভক হইয়াছে, যথেষ্ট চেষ্টা করিয়াছে। দুর্ভাগ্য কপাল তাহার —অবশেষে তাই এমনটা ঘটিল । যাত্রা কোন রকমে গোজামিল দিয়া শেষ হইয়া গেল । পরদিন প্রভাতে মোহন দলের সমস্ত লোকজনকে রওয়ানা করিয়া দিল । ঋষি-মাষ্টার যাইবার সময় সাশ্চধ্যে বলিল, তুমি কি এখানে একা থাকতে চাও নাকি মোহন —এই রোগী নিয়ে । Es মোহন মৃদু হাসিয়া বলিল, উপায় আর কি ! যাও তোমর-ও একটু ভাল হয়ে উঠলেই যাচ্ছি আমি । তাই কি হয় | ঋষি মাষ্টার বলিল, আমাকে কি পশু ঠাওরালে নাকি ! এই অবস্থায় আমি তোমাকে এক ফেলে যাব । ওরা যাকৃ—আমি তোমার সঙ্গেই যাব। ঋষি-মাষ্টার বলে, ছোয়াচে রোগ—অত মেশামেশি ভাল নয়। মোহন কেবল নিৰ্ব্বোধের মত হাসে। স্ববলের রোগশয্যার উপরে বসিয়া বসিয়া ভাবে, সুবলকে এই যে এত সেবা-যত্ন করা—ইহা স্ববলের জন্ত না তাঙ্গার মায়ের জন্ত ! সন্দিগ্ধ মন তাহার যাহাই ভাবুক না কেন—যাম্বাই বলুক না কেন, এই শিশুটাকে ভালবাসিবার ভান করিতে করিতে এখন সে সত্যই ভালবাসিয় ফেলিয়াছে। স্ববলের মারাত্মক বসন্তের কথা ভাবিয়া এবং হয়ত সে আর বঁাচিবে না এই ভাবিয়া তাহার মনে হয়, বহু দূরাস্তরের এক জন বিধবার কি ক্ষতি হইবে ঠিক জানা নাই, তবে তাহার যেন বিশেষ ক্ষতি হইবে। তাহার রোক চাপিয়া যায়-ইহাকে বঁাচাইতেই হইবে, তাহাকে তাহার সাধ্যমত এবং যদি সম্ভব হয় ত সাধ্যাতীত চেষ্টা করিয়াও ইহাকে বাচাইতে মোহল, হইবে । তাহাদের সমাজের মধ্যে, তাহাদের গ্রামের মধ্যে বিশাখ বলিয়া এক জন যে বিধবা আছে এবং সেই স্ত্রীলোকটিকে গেলার সার্থীর জীবনকাল হইতে আজিকার এই যৌবন পৰ্য্যস্ত যে সে একনিষ্ঠ ভাবে ভালবাসিয়া আসিয়াছে—এইটুকু দেখাইবার জন্য স্ববলকে ষত্ব করিতে হইবে, সেবা করিতে হইবে, ভালবাসিতে হুইবে—ইহা সে ভুলিয়া গেছে। এখন মুবলকে ভালবাসে বলিয়াই তাহার যেন এই সমস্ত করা । ইহার মধ্যে কোথাও কোন বাক চোরা মানে নাই । ঋষি দাস মোহনের নিলিপ্ত মুখের দিকে চাহিয়া বলে, মোহন, ছেলেবেলায় অনেককে অনেকের ভাল লাগে— তার পর বয়সের সঙ্গে সঙ্গে সেটা ভালবাসায় দাড়ায় । আমি