পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৫৭৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৭ই পোষ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর উদ্বোধন আজ প্রত্যুযে যখন দেখলাম উদয়পথ মেঘে আচ্ছন্ন, আলোক অবরুদ্ধ, আকাশে দিগন্তে অপ্রসন্নতা প্রসারিত, তখন ক্ষণকালের জন্য মনে উদ্বেগের সঞ্চার হ’ল, ভাবলুম এই আনন্দ-উৎসবের আয়োজনে যেন প্রতিকূলতার কালিম বিস্তীর্ণ হ’ল । কিন্তু পরক্ষণে একথা মনে হ’ল যে মাহুষের উৎসবের ভূমিকা তো সহজ নয়, তার নিৰ্ম্মল আনন্দের পথ অতি দুৰ্গম, সেই পথ অতিক্রম ক’রে অন্তরলোকে সত্যের আবিষ্কার হয়, সে সফলতা লাভ করে । মাতুষের সত্যের আয়োজন অস্তরে, তার উৎসবের উপকরণ সাজসজ্জা বাইরে নয়, তাকে অস্তরে প্রস্তুত হ’তে হয়, সেখানে চিদাকাশের তামসকে নিজের সাধনার দ্বারা নিৰ্ম্মল করা চাই ৷ মানুষ বিধাতার কাছে প্রশ্রয় পায় নি, তাকে আত্মশক্তি প্রয়োগের দ্বারা সার্থকতা লাভ করতে হয়। কারণ আত্মাকে আপনার মধ্যে আবিষ্কার করা তার জীবনের সাধনা। আমাদের ঋষিরা সেই উপলব্ধির কথাই বলেছেন, বেদাহমেতং, তাকে দেখেছি জেনেছি, তমস: পরস্তাৎ, অন্ধকারের পরপার থেকে সেই জ্যোতিৰ্ম্ময় মহান পুরুষকে দেখেছি। অন্ধকার তো বাহিরের নয়, তা মানুষের অন্তরে, তার সঙ্গে তাকে নিরস্তর সংগ্রাম করতে হয় । পগুর সমান ধৰ্ম্ম নিয়েই মানুষ জগতে জন্মলাভ করে । পশুর হিংস্ৰতা স্থূলতা নিয়ে সে পৃথিবীতে এসেছে কিন্তু তার আত্মা নিরস্তর অন্ধকারের আবরণ অপসারিত ক’রে অসীমের মধ্যে আপনাকে উপলব্ধি করার প্রয়াস পেয়েছে, মানুষের তো এই ধৰ্ম্ম, এই সাধনা ৷ আজ আকাশের কালিমায় এই কথা ব্যাপ্ত হয়ে রইল, যে, জনম মামুষের অস্তরে। সেই আনন্দ অন্তর থেকে আহরণ ক’রে অকৃত্রিম নিষ্ঠার মধ্যে মানুষকে উৎসবের আয়োজন করতে হবে । হৃদয়ের সেই আলোকের দ্বারা সাধনাকে উজ্জল কর, বিমল আনন্দের জ্যোতিতে জাগ্রত হও । বিমল আনন্দে জাগো রে মগন হও স্বধাসাগরে ৷ সদয় ঢদয়াচলে দেপো রে চাঙ্গি’ প্রথম পরম জ্যোতি-প্লাগ রে ॥ এই আশ্রমে যিনি নিজের সাধনার আসন প্রতিষ্ঠিত করেন আমার সেই পিতৃদেবের তরুণ জীবনে মৃত্যুশোকের অন্ধকার নিবিড় হয়ে আক্রমণ করেছিল । তিনি সেই অন্ধকারকে অপসারিত করে একান্তভাবে উৎকণ্ঠিত হয়ে অমৃতের সন্ধান করেন। তার জীবনীতে এ সময়ের বর্ণনায় বলেছেন যে, গভীর শোক স্বৰ্য্যের জ্যোতিকে তার কাছে কালিমায় আবুত মনে করেছিল । তিনি তাতে শাস্ত থাকতে পারেন নি। তিনি ধনীর সস্থান ছিলেন, তার অসামান্ত অতুল ধন-সম্পদের মধ্যে বিলাসিতার উপকরণ পুঞ্জীভূত ছিল । তার মধ্যে থেকে তিনি মনে সাত্বনা পান নি। এই ধনবিলাসের দুর্গ থেকে মুক্তিলাভের কোনো উপায় ছিল না। কিন্তু সহসী দারুণ আঘাতে সহসা তার কাছে দ্বার উদঘাটিত হ’ল । সংসারের আমোদ ও আরামে তার বিতৃষ্ণা জন্মাল, মৃত্যু-শোকের আঘাত পেয়ে তিনি একান্ত মনে সন্ধান করতে লাগলেন কিরূপে মৃত্যুর অধিকৃত সংসার-বন্ধন থেকে মুক্তি লাভ করবেন। সে সময়ে যে-বাণী তাকে উৎসাহ দিয়েছিল তা এই— “তই বেদ্যং পুরুষ বেদ, যথা মা বো মৃত্যুঃ পরিব্যথা", সেই বেদীয় পুরুষকে জানে, র্যাকে জানলে মৃত্যু ব্যথা দিতে পারে না । মহৰ্ষির মনে মৃত্যু-শোকের ভিতরে অমৃতপিপাস্ব আত্মার আকাজক্ষা জাগল। ষে অহং মানুষকে নিজের জিকে টানে