পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৫৯৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মাঘ হইতে ঝুপ কুপ শব্দ আসিতেছিল, এতক্ষণে তাহ থামিয়া গেল । চন্দন উঠিয়া ঠাই করিয়া ভাত বাড়িতে গেল। রূপেন্দু চুল আঁচড়াইয়া আসিয়া বসিতে বসিতে, চন্দন ভাতবাড় সাঙ্গ করিয়া পাখ-হাতে মাছি তাড়াইতেছিল। ধুতি পরিয়া খাইতে আসিয়া আসনে দাড়াইয়াই কি একটা ঝুপ করিয়া সে চন্দনার সম্মুখে ফেলিয়া দেয়। “এই নে ?” “কি, ও দাদা ?” “খুলে দেখ, না ।” খুলিয়া দেখে একগাদা লেবেল আর আলতার মশলা। “এত কি করব ?” w “দিন-পনরর মধ্যে ওদের পাচ~শ আলতার শিশি চাই ।” হাসিয়া চন্দন বলিল, “আর আমি পারি নে বাপু !” রূপেন্দু চলিয়া যায়। আসিবে সেই রাত বারটার পর । নিজের খাওয়া সারিয়া, সে আবার আলতার শিশি লঙ্গয়া বসে । একটু পরেই আসে নন্দিনী। নন্দিনী মুখ টিপিয়া টিপিয়া হাসে। “কি রে নন্দ ?” “কিছু नग्न t" “কিছু নয় যখন তখনও বুঝি ; আবার কিছু কিছু যখন তী-ওঁ বুঝি। এ তো তোমার কিছু-ময়ের হাসি নয় ভাই। কি যেন কোথায় একটু ঝিকিমিকি করছে।” একগাল হাসিয়া চন্দনার স্থডৌল পিঠে একটা ছোট চড় মারিয়া নন্দিনী বলিল, “আ-হা-H রে, উনি যেন সবজাস্তা ! কিছু কোথায় আছে তো কি বল না ?” “আচ্ছা বলব ? — কি দেবে বল ?” “ষা Bfe !" “তার মানেই কিছু নয়। আমি যাচাই, তা আর তুমি কি ক’রে দেবে বল ? তুমি যা দেবে তাই নেব। কি দেবে f” “আচ্ছা দেব একটা জিনিষ। — বল তো কি ?” “আচ্ছ, কি বোকা মেয়ে তুমি। এখনও বুঝবো মা কি ? ধে কথাটা বলতে পারলে আমি যা চাই তাই তুমি আমায় দিয়ে ফেলতে পার, সে-কথাটা কি তা-কি এখনও আমি বলতে পারব না ?”

    • दलझे मां ।”

আলতা-রাঙ ছুটি আঙুলে নন্দিনীর চিবুকে মৃদ্ধ একটা ঠেলা দিয়া সে বলিল, “বরের চিঠি গো ! বরের চিঠি ।” ছাইচাপা জঃখেন বলিতেই সেমিজের মধ্য হইতে নন্দিনী বাহির করিল তাহার প্রিয়তমের পত্র। ছুড়িয়া সেখানা চন্দনার দিকে ফেলিয়া বলিল, “এই নাও।” চন্দন হাসিয়া বলিল, “আমি নিয়ে তুই পড় শুনি " এমনিই হয়। ...নন্দিনীর নূতন বিবাহ হইয়াছে। তাহার স্বামীর পত্রে নববিবাহের প্রেমচন্দনের তিলকের দাগ তখনও আনন্দোজ্জলতায় স্বপ্রসন্ন। সে পত্রের আষ্ঠোপান্ত ভরা থাকে নবজাত সহজ দাম্পত্যলীলার রসমাধুর্ঘ্যে । একাকিনী কিশোরী নন্দিনী তাহার মাদকতায় নিভৃতে উচ্ছল হইয়া উঠে। এক-এক বার পতিগৰ্ব্বে তাহার বক্ষশ্বাস গভীরতর ও মন্থরতর হইয়া আসে ; এক-এক বার আকণ্ঠ অসহনীয় পিপাসায় তাহার চারি ধার নিঃশেষিত আনন্দের ক্লান্ত অবশেষের ন্যায় মান হইয়ু উঠে। নারীর এইখানে আছে একটি অবর্ণনীয় দুর্বলতা । সে তাহার স্বথ দেখাইয় বেড়াইতে বড় ভালবাসে। পাত্রাপাত্র জ্ঞান থাকে না। তাহার স্থখ অপরের মনে কোন রহস্তের স্বষ্টি করিল, তাহা সে জানিতে চাহে না । সে চাহে শুদ্ধমাত্র অংশ দিতে। একেবারে দিতে নহে। নাড়িয়া-চাড়িয়া দেখাইতে । নারীর সর্থীত্ব, নারীর পত্নীজ, নারীর মাতৃত্ব— সকল গৌরবময় বৃত্তি সার্থকতা পায় এই অংশ দেওয়ার মাঝে । নন্দিনী ও চন্দনার সখীত্ব বাড়িত এই ভাগ্যাংশ পরিসন্ধানের মধ্য দিয়া। দুর্ভাগিনী চন্দনার দুর্ভাগ্য দেখাইয়া লাভ নাই, তাই নন্দিনীর একার সৌভাগ্য দেখিয়া ও দেখাইয়াই ইহারা উভয়ে এক হইয়াছিল। নন্দিনী তাহার স্বামীর পত্র আনিয়া দেখাহত চন্দনাকে । চন্দনার নিজেরই প্রথম প্রথম দেখিতে লজ্জা করিত ; কিন্তু না দেখিলে নন্দিনী যে আবার রাগ করে ; তাই দেখিতে হয় । “দাও দেখি।” নন্দিনী চন্দনার ঘাড়ের উপর দিয়া ঝুঁকিয়া পড়িয়া কতবার পড়া চিঠিখানা আবার পড়ে। চন্দন আলতার কাজ ছাড়িয়া দিয়া চিঠিতে মন দেয় । এক-এক জায়গায় উভয়ে গা-ঠেলাঠেলি করিয়া হাসে। নন্দিনী মুখ লাল করিয়া বলে, “দেখেছ ভাই, পুরুষমানুষগুলো কি বেহায়া হয় । চিঠিতে এসব কথা লিখতে একটু বাধে না ?” চন্দনা বলে, “তোমার বুঝি বাধে ?” নন্দিনী সলজ চাহনিতে হাসিয়া বলে, “রাধে না-তো কি ? আমার চিঠি তো তুমি সব দেখেছ। আমি ভাই চিঠিতে অমন সর ষ-ত লিখতে পারি নে।” আর কি করব,