পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৬৭৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সেই হইতে শহরের মানুষকে বিশেষত ছেলেদের স্বধ ভয় করিয়া চলে। বেড়ানো আজ যথেষ্টষ্ট হইল, কিন্তু অনেক দিন পরে ঘে আশা লইয়া সে আসিয়াছিল তাহ ত পূর্ণ হইল না। নিরিবিলিতে হৈমষ্টীর সহিত দুই দণ্ড গঙ্গার ধারে বসিয়া যে অপার্থিব আনন্দ অনুভব করিবে মনে করিয়াছিল, তাহার আশা এই হাস্যকোলাহলের মধ্যে কোথায় মিলাইয়া গেল । কিন্তু আশ্চৰ্য্য ! সুধা আজ ঘরে ফিরিয়া নৈরাশ্বের কোন বেদন মনে অনুভব করিতেছে না । չե: পৃথিবীতে কেবল যে স্বধার একলারই পরিবর্তন হইতেছে তাহা নয়, আশেপাশে আরও পাচজনেরও হইতেছে, ইহা মুধা পূজার ছুটির পর স্থলে আসিয়া ভাল করিয়া অনুভব করিল। স্নেহলতা, মনীষা ইহারা যেন এই দেড় মাসেই স্বধার চেয়েও অনেক বেশী বড় হইয়া গিয়াছে। তাহাদের কথাবাৰ্ত্তা চলনধরণ সব যেন এক ভিন্ন লোকের । স্কুলে তাহারা পড়ে বটে, কিন্তু তাহাদের আলাপ আলোচন, ভাবনা চিন্তা স্কুলের বাহিরের বিষয় লইয়াই । মনীষা একটু সেকেলে হিন্দু ঘরের মেয়ে, স্নেহলতা ক্রীষ্টান। মানুষের বিবাহের আদর্শ কি হওয়া উচিত এই লইয়। সেদিন টিফিনের ঘণ্টায় দুই জনে ভর্ক লাগিয়া গিয়াছিল। মণীষ বলিল, “বাপ মা যাকে ভাল বুঝে হাতে ধ’রে স’পে দেবেন তাকেই স্বামী ব’লে গ্রহণ করা স্ত্রীলোকের কর্তব্য । বাপ-মায়ের চেয়ে আমাদের মঙ্গল কে বুঝবে আর তাদের চেয়ে বুদ্ধি বিবেচনাই বা কার বেশী "ি স্নেহলতা মনীষার কথায় তাচ্ছিল্য ভরে হাসিয়া বলিল, “বুদ্ধি-বিবেচনা মঙ্গল-অমঙ্গলের কথা কে বলছে ? তুমি আদত কথাটাই বুঝলে না। মানুষের জীবনে ভালবাসার চেয়ে বড় জিনিষ নেই এটা বোঝ ত ? তার একটা নিজস্ব সম্মান আর দাবী আছে। মঙ্গল-অমঙ্গল বাপ-ম। কিছুর কাছেই তাকে বলি দেওয়া যায় না। যে মানুষ একজনকে ভালবেসে আর একজনকে বিয়ে করে, সে নিজেরও অপমান করে, ভালবাসারও অপমান করে ।” মনীষা বলিল, “যাও, কি যে ভালবাসা ভালবাসা করছ, তোমার লজ্জা করে না 7 বিয়ে হবার আগেই পুরু মাকুযকে মেয়েমানুষে ভালবাসলে কখনও তার মান থাহে ভদ্র মেয়েরা ওরকম করে না কখনও * স্নেহলতা চটিয়া বলিল, “পৃথিবীতে তুমি ছাড়া সহ তাহলে অভদ্র । যার গায়ে ঠেলে ফে'লে দেবে তা ভালবাসাই বুঝি খুব ভদ্রতা ? আত্মসম্মান বোধ ব'লে য একটা জিনিষ নেই, সেই ওকথা বলতে পারে।” মনীষ বলিল, “আচ্ছা, স্বধাকে জিজ্ঞাসা করে দেখ, { কথখন তোমার কথায় সায় দেবে না। আমার চেয়ে ত{ কথাত তুমি বেশী বিশ্বাস কর । আমি না-হয় পণ্ডি নই, সে ত বটে !” স্কুল-বাড়ীর ছাদের উপর হৈমন্তী তখন মুধাকে টেনিসনে ‘ইন মেমোরিয়ম’ পড়িয়া শুনাইতেছিল। স্বধা ও হৈমন্তী ে যখন-তখন ছাদে চলিয়া যায় মণীষার তাহা জানিত। হৈমষ্ঠী গলার স্বরটা ছিল ভারি মিষ্ট, ইংরেজী কবিতা তাঁহার গলা রূপার ঘন্টা-ধ্বনির মত শুনাইত। হৈমন্তী স্বধার মুখের দিৰে চাহিয়া এমন করিয়া কবিতা পড়িয়া শুনাইতেছিল, ফে হৈমন্তীই কবি, সে-ই বন্ধুব বিরহে আকুল হইয়া উঠিয়াছে। মনীষা ও স্নেহলতাকে দেখিয়া হৈমন্তী থামিয়া গেল । স্নেহলতা মনীষাকে ঠেলা দিয়া বলিল, “তুমি ভালবাসার নিন্দে করছিলে, এই দেখ, ভালবাসা কাকে বলে । সবচেয়ে যদি ওই জিনিষ পৃথিবীতে বড় না হবে, তবে ওরা পৃথিবী ছেড়ে পালিয়ে বেড়ায় কেন ?” স্বধা ও হৈমষ্ঠীর মুখ লাল হইয়া উঠিল। মনীষা অত্যন্ত বিরক্ত মুখ করিয়ু বলিল, “যা নয় তাই একটা বলে বসলেই হ’ল ! কিসের সঙ্গে কিসের তুলনা! তুমি ত আর সথ্যের কথা বলছিলে না, তুমি প্রেমের কথা বলছিলে ।” স্নেহলতা বলিল, “তোমার মত অত সংস্কৃত কথা আমি জানি না বাপু । সুধা, বল দিখি, ঘটকালির বিয়ে ভাল না লভ-ম্যারেজ ভাল ? মনীষা বলছে, ভয় মেয়েরা নাকি কাউকে ভালবাসে না ।” মনীষা তেলে-বেগুনে জলিয়া বলিল, “দেখেছ একবার রকম ? আমি তাই বলেছি বইকি !” মনীষার চোখ দিয়া জল বাহির হইয়া আসিল । স্নেহলতা নরম হইয়া বলিল, “আচ্ছ, তা না হোক, তুমি