পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৬৮০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

之288 চিহ্ন রাখিয়া গেল। সে বহুদিন একথা ভুলিতে পারে নাই । শুধু যে ভোলে নাই তাঙ্গ নহে, সুধার চক্ষে ইহা যেন একটা নূতন অঞ্জন পরাষ্টয়া দিল। সংসারে স্বামী-স্ত্রী রূপে যাহারা পরিচিত তাহারা সে দুষ্ট সম্পূর্ণ ভিন্ন গৃহ হইতে আসিয়া একত্রে নীড় সাধিয়াছে এ-কথা কয়েক বৎসর পূর্ব হইতেই সে জানে, কিন্তু তবু তাহার মনে একটা জন্মগত সংস্কার ও শিশুজনোচিত ধারণা ছিল যে মাতা পুত্র, ভাই ভগিনীর সঙ্গন্ধ যেমন মান্ত্য ভাঙিতে গড়িতে পারে না, এই সঙ্গন্ধও সেই রকমষ্ট । বপ্র-কন্যা পরস্পরকে বাছিয়া বিধাহ করিলে বেশী সম্মানাহ হয়, কি তৃতীয় ব্যক্তির সাহায্যে বিবাহ হইলে বেশী সম্মানাহ হয় এ-কথা ভাবিয়া দেখিবার কারণ তাঙ্গর জীবনে ঘটে নাই । তাঙ্গর আত্মীয়স্বজনের বিবাহ তাহার জ্ঞান বুদ্ধি হইবার আগেষ্ট হইয়াছে এবং প্রাচীন মতেই হইয়াছে। আধুনিক আর একটা বিবাহ-পদ্ধতি যে আছে, কলিকাত আসিবার আগে সুধা তাহ জানিতই না। এখন যদিও জানে, তবু প্রাচীন পদ্ধতির সঙ্গে এই পদ্ধতির যে একটা দারুণ বিরোধ থাক খুব স্বাভাবিক সে-কথা কখনও সে ভাল করিয়া ভাবিয়া দেখে নাই । দুই পক্ষীয় লোকেরাই যে আপন আপন মতকে সৰ্ব্বশ্রেষ্ঠ ভাবিয়া গৰ্ব্ব অনুভব করিতে পারে তাহাও সুধার মনে আসে নাই । প্রাচীন পন্থাতে সে অভ্যস্ত ছিল, কাজেই মনে মনে খানিকট প্রাচীনপন্থীই হয়ত সে ছিল । আজ অকস্মাৎ স্নেহলতার কথায় তাহার মনে হইল, স্বামী বলিয়াই স্ত্রীলোক যেমন ব্যক্তিবিশেষকে ভালবাসে, তেমন ভালবাসে বলিয়াই ব্যক্তিবিশেষকে বিবাহ করিতে সে চাহিতে পারে। দুর্গেশনন্দিনী, কপালকুণ্ডলা, কি রোমিও জুলিয়েট, ইত্যাদিতে যাহা স্বধা পড়িয়াছে জগতে তেমন জিনিষ হয়ত সত্য সত্যই ঘটে। কিন্তু তবু অজানা অচেন একজন মাতুষকে এতখানি ভাল কি করিয়া বাসা যায় যাহাতে চিরজন্মের বন্ধু বাবা মা সকলকে অগ্রাহ করিয়া সব ছাড়িয়া চলিয়া বাওয়া যায়, বুঝিতে স্বধার কষ্ট হইতেছিল। উপন্যাসে রোমান্সে যাহাই থাকুক, কিছু তাহার মধ্যে অতিরঞ্জিত নিশ্চয়। হৈমন্তী অবগু বন্ধু মাত্র, কিন্তু তাহাকে স্বধা যেমন ভালবাসে তেমন ভালবাসা পৃথিবীতে নিশ্চয় কম দেখা যায়। তবু কই, হৈমন্তীর জন্য বাবাকে কিংবা প্রবাসী ১৩ষ্টত T পীড়িত মাকে ফেলিয়া চিরদিনের জন্য কোথাও সে চলিয়া যাইতেছে এ-কথা ত সে ভাবিতে পারে না। নিজের শ্রেষ্ঠতম স্থখও সে হৈমন্তীর জন্য ছাড়িতে পারে কিন্তু আজন্মের র্যাহারা প্রিয় ও আত্মীয় তাহাদের সে ছাড়িতে পারে না । তাহারা যে তাহার সকলের প্রথম । আবার মনে হইল, তাহার বৃদ্ধ দাদামশায়ের কথা, কত অাদরে মহামায়াকে তিনি মানুষ করিয়াছিলেন, বৎসরান্তে দেখিবার জন্য কাছে পাইবার জন্য কি আগ্রহে পথের ধারে ছুটিয়া আসিতেন । আজ দিদিমা নাই, তবু মা কতকাল দাদামশায়কে একদিনের জন্যও দেখিতে যান না। এ কি শুধু মা’র অক্ষমতার জন্ত, না মা’র মন এখন আপন সংসারে ডুবিয়া গিয়াছে বলিয়া ? অবশু, দাদামশায়ই মাকে এ সংসারে জুড়িয়া দিয়াছেন, মা আপনি বাছিয় লন নাই । যদি বিবাহ মা দিতেম, হয়ত মা চিরদিনই রতনজোড়ে দাদামশায়ের সেবাধত্বে আত্মনিয়োগ করিয়া দিন কাটাইয়া দিতেন। তবুও মা’র এই পরিবর্তনের কারণের ভিতর আর কিছু আছে কিনা ভাবিয়া দেখা দরকার । স্বধা স্কুল হইতে বাড়ী আসিয়াই মহামায়াকে জিজ্ঞাসা করিল, “ম, তুমি তিন-চার বৎসর দাদামশায়কে দেখতে যাও নি, তোমার মন কেমন ক’রে না ?” মহামায়া কেমন যেন ভীত ভাবে জিজ্ঞাসা করিলেন, “কেন রে ? এমন কথা কেন জিজ্ঞেস করছিস ? কোন খারাপ খবর আসে নি ত! বুকটা ধড়াস করে উঠল।” স্বধা ভাড়াতাড়ি হাসিয়া বলিল, “ন, না, খারাপ খবর কিছু আসে নি। তোমার বাবাকে দেখতে তোমার ইচ্ছে করে কিনা তাই জিজ্ঞেস করছি।” মহামায়া দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলিয়া বলিলেন, “করে বষ্টকি মা ! বাপ-মায়ের মত জিনিষ সংসারে কি আছে ? কিন্তু মানুষের মন যা চায় পৃথিবীতে সব সময় কি তাই পাওয়া যায় ?” মহামায়ার কাছে যা শুনিবে আশা করিয়া মুধা কথা পাড়িয়াছিল তাহা তিনি বলিলেন না, তাহার চিন্তাধারা অন্য পথে চলিয়া গেল। মহামায়া বলিলেন, “বুড়ে বয়সে বাপ-মায়ের সেবা করতে পাওয়া বহু জন্মের