পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৭১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

‘গত বছর এই সময়—কিছুদিন আগেই হবে; ই্য, নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি। আমি আর আমার এক বন্ধু পাকেচক্রে পড়ে বৰ্ম্মার জঙ্গলের মধ্যে গিয়ে পড়েছিলুম। বন্ধুটির নাম জঙ-বাহাদুর—নেপালী ক্ষত্রিয়। আমাদের লটুবহরের মধ্যে ছিল দুটি কম্বল আর দুটি রাইফেল । হঠাৎ একদিন মাঝরাত্রে যাত্রা স্থরু করতে হয়েছিল তাই বেশী কিছু সঙ্গে নিতে পারি নি । ‘অফুরন্তু পাহাড়-জঙ্গলের মধ্যে পথঘাট সব গুলিয়ে গিয়েছিল। যেখানে মাসান্তে মানুষের মুখ দেখা যায় না, এবং শিকারের পশ্চাদ্ধাবন করা বা শিকারী জন্তুর দ্বারা প্ৰ শচীন্ধাবিত হওয়াই পা-চালানোর একমাত্র লক্ষ্য, সেখানে স্থান-কাল ঠিক রাখা শক্ত। আমরা শুধু পূৰ্ব্বদিকটাকে সামনে রেগে আর-সব শ্ৰীভগবানের হাতে সমর্পণ ক'রে দিয়ে চলেছিলুম। কোথায় গিয়ে এ যাত্রা শেষ হবে তার কোন ঠিকানা ছিল না। 'একদিন একটা প্রকাও নদী বেতের ডোঙায় ক’রে পার হয়ে গেলুম। জানতেও পারলুম না যে বৰ্ম্মাকে পিছনে ফেলে আর এক রাজ্যে ঢুকে পড়েছি। জানতে অবশ্ব পেরেছিলুম—কয়েক দিন পরে। ‘মেকং নদীর নাম নিশ্চয় জানেন । সেই মেকং নদী আমরা পার হলুম এমন জায়গায় যেখানে তিনটি রাজ্যের সীমান এসে মিশেছে—পশ্চিমে বৰ্ম্ম, দক্ষিণে শুামদেশ, আর পূৰ্ব্বে ফরাসী-শাসিত আনাম। এ সব খবর কিন্তু পার হবার সময় কিছুই জানতুম না। ‘মেকং পার হয়ে আমরা নদীর ধার ঘেষে দক্ষিণ মুখে চললুম। এদিকে পাহাড় জঙ্গল ওরই মধ্যে কম, মাঝে মাঝে ই-একটা গ্রাম আছে। শিকারও প্রচুর। খাদ্যের অভাব নেই। জঙ-বাহাদুর এ দেশের ভাষা কিছু কিছু বোঝে, তাই রাত্রিকালে গ্রামে কোন গৃহস্থের ফুটরে আশ্রয় নেবার সুবিধা ইয়-দুর্জয় শীতে মাথা রাখবার জায়গা পাই । ‘বড় শহর বা গ্রাম আমরা যথাসাধ্য এড়িয়ে যেতুম। তবু একদিন ধরা পড়ে গেলুম। দুপুরবেলা দু-জনে একটা পাথুরে গিরিসঙ্কটের পাশ দিয়ে যাচ্ছি, হঠাৎ বী-দিক থেকে কর্কশ আওয়াজে চম্কে উঠে দেখি, একটা লোক পাথরের চাঙড়ের আড়ালে থেকে রাইফেল উচিয়ে আমাদের লক্ষ্য করে আছে। দিশী লোক—নকি চ্যাপটা খ্যাবড়া মুখ কিন্তু তার পরিধানে সিপাহীর ইউনিফৰ্ম্ম ; গায়ে থাকি পোষাক, মাথায় জরির কাজ করা গোল টুপী, পায়ে পটি আর অ্যামুনিশন বুট। o ‘বুঝতে বাকী রইল না যে বিপদে পড়েছি। সিপাহী সেই অবস্থাতেই বঁাশী বাজালে ; দেখতে দেখতে আরও দু-জন এসে উপস্থিত হ’ল । তখন তারা আমাদের সামনে রেগে মার্চ করিয়ে নিয়ে চলল । ‘কাছেই তাদের ঘাটি। সেগানকার অফিসার আমাদের খানাতল্লাস করলেন, অনেক প্রশ্ন করলেন যার একটাও বুঝতে পারলুম না, তার পর বন্দুক আর টোটা বাজেয়াপ্ত করে নিয়ে চার জন সিপাষ্ঠীর জিন্মায় দিয়ে আমাদের রওনা ক'রে দিলেন । ‘মাইল-তিনেক বাবার পর দেখলুম এক শহরে এসে পৌছেছি। নদীর ধারেই শহরটি—খুব বড় নয়, কিন্তু ছবির মত দেখতে । ‘সিপাহীরা নদীর কিনারায় একটা বড় বাংলায় আমাদের নিয়ে হাজির করলে। এখানে শহরের সবচেয়ে বড় কৰ্ম্মচারী থাকেন । "যথাসময়ে আমরা তার সামনে গিয়ে দাড়ালুম । দেগলুম তিনি এক জন ফৌজী অফিসার-জাতিতে ফরাসী—বয়স বছর পযুতাল্লিশ, তীক্ষু চোখের দৃষ্টি, গায়ের রং বহুকাল গরম দেশে থেকে তামাটে হয়ে গেছে । \ "তিনি ইংরেজী কিছু কিছু বলতে পারেন। আমার সঙ্গে প্রথমেই র্তার খুব ভাব হয়ে গেল। ফরাসীদের মত এমন মিশুক জাত আর আমি দেখি নি, সাদা-কালোর প্রভেদ তাদের মনে নেই। এর নাম কাপেন দু'বোয়ু । অল্পকালের মধ্যেই তিনি আমাদের সঙ্গে খুব ঘনিষ্ঠভাবে আলাপ মুরু করে দিলেন । তারই মুখে প্রথম জানতে পারলুম, আমরা আনাম দেশে এসে পড়েছি, নদীর ওপারে ঐ পৰ্ব্বত-বন্ধুর দেশটা হামরাজ্য। মেকং নদী এই দুই রাজ্যের সীমান্ত রচনা ক'রে বয়ে গেছে । “আমরা কোথা থেকে আসছি, কি উদ্দেশ্বে বেরিয়েছি, এ সব প্রশ্নও তিনি করলেন। যথাসাধ্য সত্য উত্তর দিলুম। বললুম প্রাচ্যদেশ পদব্রজে ভ্রমণ করবার অভিপ্রায়েই বৃটিশ