পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৭১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

“কিন্তু সে ধাক—তৃষ্ণানিবারণের সঙ্গে সঙ্গে ক্ষুধার ভাবনা এসে জুটেছিল। তাকে মেটাই কি দিয়ে ? “আমাদের উপত্যকার চারিদিকে তাকালুম, কিন্তু কোথাও একটি পল্লী নেষ্ট । এখানে-ওখানে কয়েকটা গাছ যেন দলবদ্ধ হয়ে জন্মেছে, হয়ত কোন গাছে ফল ফলেছে এই আশায় উঠে বললুম–জঙ-বাহাদুর, চল দেখি, যদি গাছে কিছু পাই । ‘গাছে কিন্তু ফল-ফলবার সময় নয়। একটা স্কুলের মত ধাটাওয়ালা গাছে ছয়টি ছোট ছোট কাচা ফল পেলুম। তৎক্ষণাৎ দু-জনে ভাগাভাগি ক’রে উদরসাৎ করলুম। দারুণ টক—কিন্তু তবু খাদ্য ত । 'আরও ফলের সন্ধানে অন্ত একটা ঝোপের দিকে চলেছি, জঙ-বাহাদুর পাশের দিকে আঙুল দেখিয়ে চীৎকার করে উঠল,—ঐ—ঐ দেখুন ! ‘ঘাড় ফিরিয়ে দেখি—আশ্চৰ্য্য দৃশ্য ! সাদা ধবধবে এক পাল হরিণ নিৰ্ভয়ে মন্থর-পদে নদীর দিকে চলেছে। সকলের আগে একটা শুঙ্গধর মদ হরিণ, তার পিছনে গুটি আট-দশ হরিণী। আমাদের কাছ থেকে প্রায় এক-শ গজ দূর দিয়ে ज्रोच्न] भांप्ट । “কিন্তু এ দৃপ্ত দেখলুম মুহূৰ্ত্ত কালের জন্যে । জঙ-বাহাদুরের চীৎকার বোধ হয় তাদের কানে গিয়েছিল—তারা একসঙ্গে ঘাড় ফিরিয়ে আমাদের দিকে চাইলে । তার পর এক অদ্ভুত ব্যাপার হ’ল। হরিণগুলা দেখতে দেখতে আমাদের চোখের সামনে হাওয়ায় মিলিয়ে গেল । “ই ক'রে দাড়িয়ে রইলুম ; তার পর চোথ রগড়ে আবার দেখলুম। কিছু নেই—রৌদ্রোজ্জল উপত্যকা একেবারে শূন্ত । ভয় হ'ল। এ কি ভৌতিক উপত্যক ? না আমরাই ক্ষুধার মত্ততায় কাল্পনিক জীবজন্তু দেখতে আরম্ভ করেছি ? মরুভূমিতে শুনেছি ক্ষুধাতৃষ্ণায় উন্মাদ পান্থ মৃত্যুর আগে এমনি মায়ামূৰ্ত্তি দেখে থাকে। তবে কি আমাদেরও মৃত্যু আসন্ন । ‘জঙ-বাহাদুরের দিকে চেয়ে দেখলুম, তার চোখ দুটে পাগলের মত বিস্ফারিত। সে ত্রাস-কম্পিত স্বরে বলে উঠল, —এ আমরা কোথায় এসেছি !—তার ঘাড়ের রোয় খাড়া হয়ে উঠল । ‘দু-জনে একসঙ্গে ভয়ে দিশাহারা হ'লে চলবে না। আমি জড়-বাহাদুরকে সাহস দিয়ে বোঝাবার চেষ্টা করলুম–কিন্তু বোঝাব কি ? নিজেরই তখন ধাত ছেড়ে আসছে। একটা ঘন ঝোপের মধ্যে গিয়ে বসলুম। খাবার খোজবার উদ্যমও আর ছিল না ; অবসন্ন ভাবে নদীর দিকে তাকিম্বে রইলুম। ‘আধ ঘণ্টা এই ভাবে কেটে যাবার পর হঠাৎ একটা শক শুনে চমকে উঠলুম ; ঠিক মনে হ’ল একপাল হরিণ ক্ষুরের শব্দ করে আমাদের পাশ দিয়ে দ্রুত ছুটে চলে গেল । পরক্ষণেই পিছন দিকে ক্ষুধাৰ্ত্ত নেকড়ে বাঘের চীংকাং যেন বাতাসকে চিরে ছিন্নভিন্ন ক'রে দিলে। ফিরে দেখি, প্রায় পঞ্চাশ গজ দূরে প্রকাও দুটে ধূসর রঙের নেকড়ে পাশপাশি দাড়িয়ে আছে ; কিছুক্ষণ নিশ্চল ভাবে দাড়িয়ে থেকে তারা আর একবার চীৎকার করে উঠল—শিকার ফন্ধে যাওয়ার বার্থ গর্জন । তার পর অনিচ্ছাভরে বিপরীত মুখে চ’লে গেল । অনেক দূর পর্য্যস্ত তাদের দেখতে পেলুম। এবার নূতন রকমের ধোক লাগল। তাই ত! নেকড়ে দুটাে ও মিলিয়ে গেল না ! তবে ত আমাদের চোখের ভ্রান্তি নয় ! অথচ হরিণগুলা অমন কপূরের মত উবে গেল কেন ? আর, এখনই যে ক্ষুরের আওয়াজ শুনতে পেলুম, সেটাই বা কি ? ‘ক্রমে বেলা দুপুর হ’ল। শরীর নেতিয়ে পড়ছে, মাখ ঝিমঝিম করছে । উপত্যকায় পৌছনোর প্রথম উত্তেজন কেটে গিয়ে তিন দিনের অনশন আর ক্লাস্তি দেহকে আক্রমণ করেছে। হয়ত এই ভাবে নিস্তেজ হতে হতে ক্রমে তৈলহীন প্রদীপের মত নিবে যাব । ‘নিবে যেভূমও, যদি না এই সময় একটি পরম বিস্ময়কর ইন্দ্রজাল আমাদের চৈতন্তকে নাড়া দিয়ে জাগিয়ে তুলত । অসাড় ভাবে নদীর দিকেই তাকিয়ে ছিলুম, স্বৰ্য্য পশ্চিম দিকে ঢলে পড়েছিল। এই সময় দেখলুম নদীর কিনারায় যেন অস্পষ্ট ভাবে কি নড়ছে। গ্রীষ্মের দুপুরে তপ্ত বালির চড়ার ওপর যেমন বাম্পের ছায়াকুণ্ডলী উঠতে থাকে, অনেকটা সেই রকম। ক্রমে সেগুলা যেন আরও স্কুল জাকার ধারণ করলে। তার পর ধীরে ধীরে একদল সাদা