পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৭৪৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিশেষ কেহ ছিল না। কলিকাতার মেসে নিঃসঙ্গ জীব:যাপন করিতেছিলাম। মালতীকে ভুলি নাই। ভোলা স্বায় না বলিয়াই ভুলি নাই। তাহাকে পাইবার আশা অবশু অনেক দিন ভ্যাগ করিয়াছিলাম । ভকুর পত্র মাঝে মাঝে পাইতাম । সে সাহিত্য-সাধনায় এমন তন্ময় হইয়া গিয়াছিল যে ম্যাটিকট পয্যন্ত পাস করিতে পারিল না। অথচ তাহ তাহার পক্ষে কতই না সহজ ছিল। তকুর বাবাও মারা গেলেন । তবুদের অবস্থা খুব ভাল ছিল না—আরও খারাপ হইয়া গেল। একদিন তকুর পত্র পাইলাম— লিথিয়াছে মালতীর জন্য একটি ভাল পাত্রের সদ্ধান আমি যেন করি। পাত্রটি আর যা-ই হউক স্বরূপ হওয়া প্রয়োজন, কারণ কালে বলিয়া দুইটি ভাল পাত্রকে মালতী কিছুতেই বিবাহ করিতে রাজী হয় নাই। উত্তরে লিখিলাম, “ভাল পাত্রের সন্ধানে রহিলাম। জানাশোনা একটি ভাল পাত্র আছে –কিন্তু চেহারা তেমন সুবিধার নয়। মালতীর পছন্দ হইবে না । বল ত সম্বন্ধ করি।” সাগ্রহে প্রতীক্ষা করিয়াছিলাম। কোন উত্তর আসে নাই । & আরও কিছুদিন কাটিয়াছে। এম-এ পড়িতেছি । আশ্চৰ্য্য মানুষের মন । হঠাৎ একদিন আবিষ্কার করিলাম যে মালতী কথন মন হইতে অতকিতে সরিয়া গিয়াছে। তাহার স্থান অধিকার করিয়া বসিয়াছে আর এক জন—মুদুহাসিনী মৃদুভাষিণী মিস্ মিত্র। আমার সহপাঠিণী ।--আলাপট হইয়াছিল লাইব্রেরীতে। এখিল্পের একটা অংশ-বিশেষ বুঝিয়া লইবার জন্য মিস্ মিত্র আমার সমীপবৰ্ত্তিণী হইয়াছিলেন। সেই হইতেই আলাপ । আলাপ সাধারণতঃ যেভাবে ঘনিষ্টতর হয় সেই ভাৰেই হইয়াছিল। মিস মিত্র যে সুন্দরী তাহা নয়। কিন্তু তাহার চোখে মুখে এমন একটা মার্জিত কমনীয়ত, এমন একটা সংযত মধুর বুদ্ধিদীপ্ত রূপ দেখিয়াছিলাম যে মনে রং ধরিয়া গেল।--ত্রুমশ: দেখিলাম তাহার অনুপস্থিতিতেও আমি তাহার কথা চিন্তা করিতেছি, অজ্ঞাতসারেই তাহার চলা-ফেরা লক্ষ্য করিতেছি, কোন কোন রঙের শাড়ী পরিলে তাহাকে মানায় তাহ বিশ্লেষণ করিতেছি এবং কখন সে ক্লাসে আসিবে সেই আশায় দ্বারের দিকে চাহিয়া বসিয়া আছি । ჯე যখন মিসূমিত্রের সঙ্গে আমার বিবাহের কথা পাকা হইয়া গিয়াছে—আর কয়েক দিন পরেই বিবাহ হইবে—এমন সময় তকু আসিয়া হাজির । ভকুর মুখে সমস্ত শুনিয়া অবাক হইয় গেলাম ! বলিলাম, “সে কি সম্ভব ?” তকু বলিল, “সম্ভব অসম্ভব বুঝি না ভাই—সমস্ত খুলে বললাম। ওকে এখন আর কে বিয়ে করবে বল ? অসাবধানে ষ্টোভ জালতে গিয়ে—ছি, ছি, কি কাগুটাই হয়ে গেল। ম৷ বললেন তোর কাছে আসতে। তুই ছাড়া কাউকে এ অনুরোধ করতেও সাহস পাই না যে —” বলিয়। তবু হঠাৎ কাদিয়া ফেলিল । তাহার চোখে জল দেখিয়া অত্যন্ত বিচলিত হইলাম । তাহাকে বুঝাইয়া বলিলাম, “না ভাই এখন আর সে হয় না। অনেক দূর এগিয়ে পড়েছি। চল মাকে গিয়ে আমি বুঝিয়ে ” ”ـــټfچR মানপুর গেলাম । 豪 拳 豪 彎 পায়ের উপর উপুড় হইয় পড়িয় স্ত্রী বুলিতেছে শুনিতেছি, “কক্ষণো তুমি আমায় ভালবাস না— কক্ষণে না । একদিনও বাস নি—বাসতে পার না । আমায় তুমি শুধু দয়া করেছ—কে তোমার দয়া চেয়েছিল— কেন তুমি দয়া করেছ—কেন—কেন—কেন—কেন—” পাগলের মত বলিয়া চলিয়াছে। “শোন—একটা কথা শোন—পায়ের উপর থেকে মুখ তোল—” অশ্রুসিক্ত মুখ সে তুলিল । মালতীর অনিন্দ্যম্বন্দর মুখ আগে যে দেখিয়াছে তাহার এ মূৰ্ত্তি দেখিয়া সে শিহরিয় উঠবে। বীভৎস পোড়া কদাকার! অসাবধানে ষ্টোভ জালিতে গিয়া সমস্ত মুখটাই তাহার পুড়িয়া গিয়াছিল। মিসূমিত্রের খোল চিঠিখানা কাছেই পড়িয়া রহিয়াছে।