পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৭৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাংলা বানান রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিশ্ববিদ্যালয় কতৃক বাংলা বানানের যে নিয়ম প্রবর্তিত হয়েছে তার একটা অংশ সম্বন্ধে আমার কিছু বলবার আছে—এইখানে সেটা উত্থাপিত করি। যথোচিত আলোচনা দ্বারা তার চরম মীমাংসা প্রার্থনীয়। হ-ধাতু খ-ধাতু দি-ধাতু ও শু-ধাতুর অনুজ্ঞায় তারা নিম্নলিপিত ধাতুরূপের নির্দেশ করেছেন— হও, হয়ে । খাও, খেও । দাও, দিও। শোও, শুয়ো ॥ দেখা যাচ্চে, কেবলমাত্র আকারযুক্ত থ- এবং ইকারযুক্ত দি- ধাতুতে ভবিষ্যৎবাচক অনুজ্ঞায় তারা প্রচলিত খেয়ে এবং দিয়েী বানানের পরিবতে খেও এবং দিও বানান আদেশ করেছেন। অথচ হয়ে এবং শুয়ে-র বেলায় তাদের অদ্যমত । একদা হয় খায় প্রভৃতি ক্রিয়াপদের বানান ছিল হএ, খাএ। “করে” “চলে* যে নিয়মে একারান্ত সেই নিয়মে হয় খায়ও একারান্ত হবার কথা-পূর্বে তাই ছিল । তখন খ, গ, চা, দি, ধা প্রভৃতি একাক্ষরের ধাতুপদের পরে য়-র প্রচলন ছিল না। তদনুসারে ভবিষ্যৎবাচক অনুজ্ঞায় য়-বিযুক্ত “ও” ব্যবহৃত হোতে। এ নিয়মের পরিবতন হবার উচ্চারণগত কারণ আছে। বাংলায় স্বরবর্ণের উচ্চারণ সাধারণত হ্রস্ব, যথা খাএ, পাও ৷ কিন্তু অসমাপিকায় যখন বলি খেএ ( খেয়ে ) বা ভবিষ্যৎ অনুজ্ঞায় যখন বলি খেও ( পেয়ে ) তখন এই স্বরবর্ণের উচ্চারণ কিঞ্চিৎ দীর্ঘ হয়। গাও এবং থেও শব্দে ওকারের উচ্চারণে প্রভেদ আছে। সন্দেহ নেই এ সকল স্থলে শব্দের অন্তস্বর আপন দীর্ঘত্ব রক্ষার জন্য য়-কে আশ্রয় করে । একদা করিয়ু খাইয়। শব্দের বানান ছিল, করিঅl, খাষ্টঅ। কিন্তু পর্ব স্বরের অনুবর্তী দীর্ঘ স্বর যু-যোজকের অপেক্ষ রাখে। তাই স্বভাবতই আধুনিক বানান উচ্চারণের অনুসরণ করেছে। বিশ্ববিদ্যালয় শুয়ো হয়ে শব্দে একথা স্বীকার করেছেন, অন্যত্র করেন নি। আমার বিশ্বাস এ-নিয়মের ব্যতিক্রম নেই। আমরা যাকে সাধু ভাষা বলে থাকি বিশ্ববিদ্যালয় বোধ করি তার প্রচলিত বানানের রীতিতে অত্যন্ত বেশি হস্তক্ষেপ করতে ইচ্ছুক নন। নতুবা খাইয়া যাইয়া প্রভৃতি শব্দেও র্তার প্রাচীন বিধি অনুসারে পরিবতন আদেশ করতেন। আমার বক্তব্য এই যে, যে-কারণে সাধুভাষায় করিয়া হইয়। বলিয়ে খাইয়ে চাহিয়ে বানান স্বীকৃত হয়েছে সেই কারণ চলিত ভাষাতেও আছে। দিয়েছে শব্দে তারা যদি “এ” স্বরের বাঙ্গনরূপে য়ু-কে স্বীকার করেন তবে দিয়ে শব্দে কেন য়-কে উপেক্ষা করবেন ? কেবলমাত্র দি- এবং খ+ধাতুর য়ু অপহরণ আমার মতে তাদের প্রতি অবিচার করা ।