পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৭৮০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ግBo পাড়াগায়ের ধূলিধূসর জাসবে স্ত্রী-পুরুষ সকলকেই বিচলিত করল । শেষ দিকটায় কেউ কেউ উঠে গেলেন। ছোট ছোট ছেলেমেয়ে নিয়ে যারা এসেছিলেন–কি স্ত্রী কি পুরুষ— তার আগেই চলে গেছেন। গান যখন ভাঙল, তখন রাত অনেক। বেণুবনের পাশে চাদ উঠেছে। একটা শীতল বাতাসের স্রোত কোথা থেকে ভেসে আসছে। বাড়ী ফিরে যাব ভাবছি—এমন সময় মাধব দৌড়ে এসে বলল, ‘ওরে কিশোর, এদের বাড়ী পৌঁছে দিয়ে আসতে হবে—আমার এখন অনেক কাজ বাকী।' অন্ধকার রাত্রি। মাধব আমার হাতে একটি কালিপড়া লণ্ঠন দিল । 嘯 嘯 鬱 এরা যে কারা, সে-কথা মাধব আমাকে ব'লে দিলে না । কয়দিনের পরিশ্রমে রাত জেগে ঘুমণ্ড পেয়েছে খুব । কালি-স্কুল-মাখ লণ্ঠনটি হাতে নিয়ে যাদের আগিয়ে দিয়ে আসতে হবে তাদের দিকে চেয়ে বললাম, "আমুন।" গায়ের সকলকে ঠিক চিনি না—কাজেই তারা আগে আগে চলতে লাগলেন আর আমি লণ্ঠনটি হাতে নিয়ে পিছনে পিছনে আসতে লাগলাম। গ্রামের পথ একে-বেঁকে চলে গিয়েছে, মাঝে মাঝে এক-এক ঘর বাড়ী—ক্রমশঃ ভীড় কমে আসতে লাগল। লণ্ঠন নিয়ে আমি চলেছি—দুই-একটি ছোট ছোট ছেলেমেয়ে আর একটি মেয়ে তখনও বাকী। মেয়েটি আমার দিকে চেয়ে বললেন, ‘আরও একটু আসতে হবে তোমাকে ৷” আমার তখন ক্লাস্তিতে আর ঘুমে চোখ জড়িয়ে আসছে, তৰু হেসে বললাম, চলুন"। জিজ্ঞাস করলাম, কত দূর যেতে হবে ? ‘বেশী দূর নয়—এই বাগীপাড়া পার হয়ে গিয়ে মাঠের কাছাকাছি আমাদের বাড়ী।” ‘কোন বাড়ী বলুনত মাধবদের বাড়ীও ঐখানে । ‘ন, মাধবদের বাড়ী নম্ব— মাধবদের বাড়ীর পাশেই। ‘ও বুঝেছি—চলুন।" কি যে বুঝলাম জানি না, তবু বলতে হ’ল বুঝেছি। মনে হ'ল তিনি আমাকে চেনেন। আমার দিকে ফিরে বললেন, ‘তুমি আর কতদিন এখানে প্রৰণ:ণী SN9BNరి থাকবে ? আমি বললাম, ছুটিতে এসেছি, ছুটি ফুরলেই আমাকে আবার চলে যেতে হবে।’ পথ যেন আর শেষ হ’তে চায় না। চাদের আলো ক্রমশঃ স্নান হয়ে এল। নির্জন পথে সঙ্গীহীন অবস্থায় আবার ফিরে আসতে হবে । মাধব সঙ্গে এলে বড় ভাল হ’ত । কিছু জিজ্ঞাসা করাও শক্ত। তবু জিজ্ঞাসা করলাম, "আপনি আমাকে জানেন দেখছি। অস্পষ্ট মৃদুকণ্ঠে তিনি বললেন, “তোমাকে আবার কে না জানে ? সেই নির্জন পথে র্তার পরিচয় জানবার ঔৎসুক্য থাকলেও বেশী কিছু জিজ্ঞাসা করতে পারলাম না। তিনি বোধ হয় আমার অবস্থা বুঝলেন এবং বললেন, ‘তুমি এইবার বাড়ী যাও। অনেকটা পথ হেঁটে এসেছ, ত-ছাড়া এ ক-দিনের গানের হাঙ্গামাতেও কষ্ট পেয়েছ খুবই। কেমন না ? লজ্জিত হলাম। বুঝলাম, তিনি অনেক খবর রাখেন। মনে একটি অদ্ভুত আনন্দ এল । সে আনন্দকে বিশ্লেষণ করে বোঝান শক্ত। ফিরে এলাম। লণ্ঠন নিবিয়ে দিলাম। রাত্রি ভোর হয়ে আসছে, রাত্রি ভোর হবার সঙ্গে সঙ্গে পথ চলতে চলতে মনে হ’ল—গ্রামের এখনও অনেক কাজ । বাকী আছে। 覺 鬱 穆 বকুলবনের পাশ দিয়ে যাচ্ছি। ভোরের মৃদু হাওয়ায় টুপটাপ করে বকুল ফুল ঝরে পড়ছে। ফুল-ঝরার মত গানের স্বর কোথা থেকে কানে ভেসে এল । সম্মুখে তাকিয়ে দেখি—সহায়রাম । জিজ্ঞাসা করলাম, ‘কি গো গানের আসর ভাঙল বুঝি ' ' সহায়রাম সচকিত হয়ে উঠল। বলল, “কে, দাদাঠাকুর ' আমি বললাম, ‘হ্যা।’ আসর ত অনেকক্ষণ ভেঙেছে । গান গাইতে গাইতে এই পথ দিয়ে যাচ্ছি। সহায়রামকে বড় ভাল লাগে । বললাম, 'বড় স্বন্দর তোমার গান সহায়রাম " সে মানস্বরে বলল, “কি করব দাদাঠাকুর ?—এই গানই আমার পেশ। ।” বললাম, ‘জার একদিন তোমার গান হবে।’ সে খুশী হয়ে বকুল-বনের পথ দিয়ে চলে গেল । ভোরের স্বর কানে বাজতে লাগল।