পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৯৬৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্রত্যেক ধৰ্ম্মসম্বন্ধে বিবেচনার মধ্যে আনিতে হইবে, এবং পরে সিদ্ধান্তে উপনীত হইতে হইবে । যদি কেবল ঐতিহাসিক প্রাচীন ধৰ্ম্মগুলি ধরা যায়, তাহ হইলে তাহাদের প্রত্যেকটি সম্বন্ধে বিবেচনা করিবার বিষয় এত আছে, যে, একটির সম্বন্ধে বিবেচনানস্তর সিদ্ধাস্তে উপনীত হওয়াই দুঃসাধ্য। সবগুলি সম্বন্ধে বিবেচনা করিয়া সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া আরও কঠিন । প্রাচীন ধৰ্ম্মগুলি ব্যতীত অপেক্ষাকৃত আধুনিক ধৰ্ম্মও অনেক আছে । সেগুলিকেও বিবেচনার মধ্যে আনিতে হইবে। মনে রাখিতে হুইবে, সকল ধৰ্ম্ম সম্বন্ধে সিদ্ধান্তে উপনীত হইবার জন্য শুধু যে মনীষ, বহু অধ্যয়ন, আলোচনা, fচস্তনক্ষমতা প্রভৃতির প্রয়োজন তাহ। নহে, নিরপেক্ষতাও অত্যাবশ্যক । ইহা অতি দুলভ। প্রত্যেক মানুষের মনে তাহার বংশ, সংসর্গ, শিক্ষা প্রভৃতি কারণে কোন-লা-কোন প্রকার সংস্কার ও ধারণা বদ্ধমূল হয়। তাহা সম্পূর্ণ অতিক্রম করা দুঃসাধ্য—হয়ত অসাধ্য। সেই জন্ত যিনি যে ধৰ্ম্মে জন্মগ্রহণ করেন, তিনি ধৰ্ম্মপ্রবণ হইলে তাহার পক্ষে সেহ ধৰ্ম্মের প্রতি অধিক অনুরাগ স্বাভাবিক। আবার যদি তিনি ধৰ্ম্মবিষয়ে উদাসীন বা বিদ্ধপপরায়ণ হন, তাহা হইলে ত র্তাহার দ্বারা বিবেচনা হইতেই পারে না। যদি কেহ কোন ধৰ্ম্মেই বিশ্বাস করেন না, কেবল বৈজ্ঞানিক ভাবে এক একটি ধৰ্ম্মের ও পরে সকল ধৰ্ম্মের বিচার করিতে চান, তাহা হইলেণ্ড প্রেম ও ভক্তি মানুষকে যে দৃষ্টি দেয় তাহার অভাবে তাহার বিচার সম্পূর্ণ ঠিকু ন-হুইবার সম্ভাবন । প্রাচীনধৰ্ম্মাবলম্বীরা নানা শাখা ও সম্প্রদায়ে বিভক্ত । তাহারা নিজেদের শাখার বিশেষ মতগুলিকে সত্য ও অন্তদের বিশেষ মতগুলিকে ভ্রান্ত মনে করেন—এমন কি ভিত্তিগত বিষয়েও তাহাদের মতভেদ দেখা যায়। খ্ৰীষ্টীয়, বৌদ্ধ, হিন্দু, জৈন, মোহম্মদীয় প্রভৃতি ধৰ্ম্মসম্বন্ধে ইহা সত্য । অপেক্ষাকৃত আধুনিক অনেক ধর্মেরও শাখা আছে। অতএব, কোন শাখার কোন মত ঠিক বা অঠিক, বা সব গুলির সব মতই ঠিক বা অঠিক, বলা সোজা নয়। এ বিষয়ে তাহীদের নিজেদের মধ্যেই দারুণ মতভেদ রহিয়াছে । হিন্দুধৰ্ম্মসম্বন্ধে যেমন বলা হইয়াছে, “বো বিভিন্ন, স্বতয়োবিভিন্না, নাসে মুনির্যস্ত মতং ন ভিন্নমূ.” অন্য বহু ধৰ্ম্ম সম্বন্ধেও তাহা বলা যায় । প্রত্যেক ধৰ্ম্মে যুগ-প্রভাবে, পারিপার্থিক অবস্থার প্রভাবে, পরিবেষ্টনীর প্রভাবে, প্রাচীন কথার নূতন ব্যাখ্যার প্রভাবে, নব নব উপদেষ্টার আবির্ভাবে, নূতন প্রচেষ্টা, নব বিবৰ্ত্তন, নব অভিব্যক্তি দেখা যাইতেছে। আধুনিক সম্প্রদায়সকলেও ইহা লক্ষিত হইতেছে। কোনও ধর্শ্বের সম্বন্ধে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত করা এই কারণেও কঠিন। মহাত্মা গান্ধী যে প্রত্যেক ধৰ্ম্মসম্বন্ধে প্রশ্ন করিয়াছেন, যে, উহা সম্পূর্ণ সত্য কিনা, একমাত্র উহাই সত্য ও অন্ত সব ধৰ্ম্ম অসত্য কিনা, কিংবা প্রত্যেক ধৰ্ম্মই সত্যাসত্যের সংমিশ্রণ কিনা, এই সব প্রশ্নের উত্তর দিতে হইলে প্রথমেই স্বনিদিষ্ট ও স্পষ্ট ভাবে জানা চাই, হিন্দু ধৰ্ম্ম কি, জৈন ধৰ্ম্ম কি, বৌদ্ধ ধৰ্ম্ম কি, জরথুস্ত্র ধৰ্ম্ম কি, ইহুদী ধৰ্ম্ম কি, খ্ৰীষ্টীয় ধৰ্ম্ম কি, ইত্যাদি। ইহার ঠিক উত্তর মহাত্মা গান্ধী বা অন্য কেহ যদি দিতে পারেন, তাহা হইলে সেই উত্তর পাইলে তবে তাহার পর গান্ধীজীর উল্লিখিত প্রশ্নসমূহের উত্তর দিবার চেষ্ট হয়ত পণ্ডিত ও মনস্বী নিরপেক্ষ লোকের করিতে পারিকেন । কোনও প্রাচীন বা আধুনিক ধৰ্ম্মের সত্যতা অসত্যত বা আংশিক সত্যতা ও অসত্যতার আলোচনা না করিয়া একটা কথা বলিলে হয়ত তাহা বিবেচনার অযোগ্য মনে না হইতে পারে। র্যাহারা পরব্রহ্মে পরমাত্মায় বিশ্বাস করেন ন, র্যাহারা আপনাদিগকে প্রত্যক্ষবাদী মনে করেন, তাহারা ত দেখিতেছেন, বহিজগতে নিত্য নব নব তত্ত্বের আবিষ্কার হইতেছে এবং মনোজগতের বহু তত্ত্বও ক্রমশঃ আবিস্তুত হইতেছে—কোন জগতেরই সম্পূর্ণ জ্ঞান মাহুৰ নিঃশেষে এখনও পায় নাই । আর, যাহারা পরব্রহ্মে পরমাত্মায় বিশ্বাসী—যেমন হিন্দু ইহুদী খ্ৰীষ্টিয়ান প্রভৃতি আস্তিকগণ, তাহার স্বীকার করেন, যে, তিনি অনস্ত এবং তাহার সত্য অনন্ত । অতএয তাহার স্বরূপ এবং প্রকাশও অনন্ত । স্বতরাং ইহা বলিলে বোধ হয় কোন ধৰ্ম্ম, কোন শাস্ত্র, কোন মহাপুরুষ, কোন আচাৰ্য্য, কোন উপদেষ্ট, কোন ব্যাখ্যাতার প্রতি অবিচার করা হয় না, কাহারও প্রতি অজ্ঞাদ্ধা প্রকাশিত হয় না, যে, সত্যের প্রকাশ শেষ হয় নাই ও শাস্ত্র এরূপ