পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২৪২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

سوا (تي يج প্রবাসী >N38N○ হয়ে উঠেছে। ছেলেমানুষের মত আগ্রহের স্বরে সে জিজ্ঞেস পাখীর দাদু কাবে, বাবা কাবে? বাবা নিজে ছিলেন । করলে, “এখনও পারে তেমনি তীর ছুড়তে ?” তার এই শিশুর মত আগ্রহে শচীন্দ্ৰ যেন গল্প-বলার পুরস্কার লাভ করে মৃদু হেসে বলে, “অনেক দিন তো দেখি নি ওসব করতে। ওড়া পার্থী পৰ্য্যন্ত অনায়াসে মারতে পারত শুনেছি। শুনেছি কেন, একবার দেখেওছি।"

  • ওড়া পার্থী তীর দিয়ে মারতে!” “হঁ্যা ; বল্ছি। ভারি একটা করুণ ব্যাপার ঘটেছিল একদিন । ভোলাদার পার্থী-শিকারের গল্প শুনে অবধি তার হাতের তাক দেখবার জন্যে মনে আর স্বস্তি ছিল না। গেলাম পিছনে লেগে ঘ্যান ঘ্যান করে, ‘ভোলাদা ওড়াপাখী মেরে দেখাও। আমার মা ওসব ভালবাসতেন না। র্তার কাছে ভোলাদপার্থী মারবে না ব'লে প্রতিজ্ঞাই করেছিল এক রকম। টের পেলেই তিনি আমাকে তিরস্কার করতেন, বোঝাতেন, অন্য শিশুলোভন বস্তু দিয়ে প্রলুব্ধ করতেন। তখনকার মত আমি ভুলে যেতাম বটে কিন্তু আবার র্যাক পেলেই সেই ‘ওড়া পার্থী শিকারের গোপন তাড়নায় ভোলাদার জীবন বোধ হয় সে কয়দিন একেবারে অতিষ্ঠ ক'রে তুলেছিলাম। মা আমাকে নান উপায়ে এই দুস্কার্য্য থেকে নিবৃত্ত করবার চেষ্টা করতেন। কিন্তু সব পারা যায়, খেয়ালী শিশুর খেয়ালকে ভোলানোর চেষ্টা বৃথা । ভোলাদকে একলা পেলেই ঐ আব্দার ছাড়া যেন আমার আর কোন কাজ ছিল না । কি যেন একটা কৌতুকময় রহস্ত থেকে আমায় তুলিয়ে রাখা হয়েছে ; বিশেষ ক’রে নিষেধ করাতেই তার প্রতি আমার কৌতুহল বোধ হয় বেড়ে উঠেছিল। ভোলাদ অনেক ক’রে আমাকে ভোলাতে চেষ্টা করত। প্রথমে বস্ত যে ওড়া পার্থী সে মারতেই পারে না। কিন্তু বাবার কাছ থেকে যে ছেলে তার বিদ্যা সম্বন্ধে তথ্য আহরণ করেছে তাকে এমন কথা বলতে যাওয়া নিৰ্ব্ব দ্বিতা। তার পর সে বলে, পার্থীকে মারলে তার দাজু কঁদিবে, বাবা কাদবে, ম কাঁদবে, তখন কি হবে ?”

“এই কথায় থোকাবাবু বুঝি একেবারে কাবু ?” “না। কিছুদিন এ কথাটায় কিঞ্চিৎ ফল হ’ল বটে, কিন্তু সেও অল্পদিন। একদিন বিশেষ সন্দিহান হ'য়ে একেবারে বাবাকে গিয়ে সোজা প্রশ্ন করলাম, ‘বাবা পার্থীকে মারলে শিকারী। সুকুমার মনোবৃত্তি র্তার মনে বড়-একটা ঠাই পেত না । এই প্রশ্নে তিনি উচ্চরোলে হেসে উঠে বললেন, পার্থীর শাশুড়ী বড় কান্নাকাটি করবে যে রে-কে বললে তোমাকে দাদু কঁদিবে, খোকা ? ভারি লজ্জা পেলাম ; ভাবী রাগ হ’ল ভোলাদার উপর। এবার সে আমাকে আর ঠেকাতে পারল না । একদিন সকালবেলা একটা উড়ন্ত ঘুঘুর উপর তার বিদ্যার পরখ হ'ল। তার পরের ব্যাপারটি অতি করুণ। ঘুঘুনীর আওঁ চীৎকারে সমস্ত আকাশ উতল হয়ে উঠল। সে মৃত ঘুঘুটির চারিদিকে উড়ে উড়ে তার বুকের অসহ বেদনায় স্নিগ্ধ প্রভাতের অরুণালোককে যেন ব্যথায় পাণ্ডুর করে তুললে। ভোলাদ ছুটে গিয়ে রক্তাক্ত পার্থটিকে দুই হাতে তুলে নিলে ; সে যেন কেমন বিহ্বল হয়ে গেল। আমারও ভারী কান্না পেতে লাগল। এর পর বহুদিন ভোলাদ তার ধন্থক স্পর্শ করে নি। কিন্তু সে যাই হোক, আমি ভাবি ভোলাদ সেদিন ইচ্ছে ক'রে কেন নিশান৷ ভুল করলে না ? কেন সে একটা ছোট ছেলের অন্যায় আবদারে কান দিলে ? কেন সে আমাকে ধমকে নিয়ে আমার মা’র দরবারে সমপণ করলে •{ ? ? ব'লে সে থানিক ক্ষণ চুপ করে থেকে বললে, “পার্থীটা মুহূর্ভের মধ্যেই উড়ে চলে যাবে এই কথা মনে হ’লে শিকারা কি আর হাত সামূলাতে পারে ? ও অবস্থায় ভেবেচিন্তে কিছু আর সংযত হওয়া চলে না ।” পাৰ্ব্বতীর মনের মধ্যে একটা পরিহাস এবং বেদনায় মেশানো রহস্যময় স্বরের যেন আবৃত্তি চলতে লাগল, "উড়ে যেতে পারে না যে পার্থী তার বেলায় শিকারীদের অন্য আচরণ, না ?” কিন্তু মুখ ফুটে সে কোন কথা বললে না। এমন সময় ভোলানাথ দ্বিতীয় বার তাদের স্নানাহার করবার তাগিদ নিয়ে এসে উপস্থিত হ’ল। শচীন্দ্র তার ডাকের উত্তরে “এই যে যাই ভোলাদ” বলে পাৰ্ব্বতীকে বল্‌লে, “দেখেছ, গল্পে গল্পে খাবার কথা ভুলেই গিয়েছিলাম, চল শীগগির, নইলে পিসীম! আবার আমাদের না-থাইয়ে স্বান করবেন না, জান ত ?" “ই্য, চলুন,” ব'লে পাৰ্ব্বতী চল্‌তে চলতে নিজের মনটাকে ঝাড় দিয়ে চাঙ্গা ক’রে নিল। এবং কতকটা