পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২৮৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নিষিদ্ধ দেশে সওয়া বৎসর রাহুল সাংকৃত্যায়ন { ত্রিপিটকাচার্ধ্য রাহুল সাংকৃত্যায়ন বৌদ্ধধৰ্ম্ম ও শাস্থে ভারতবর্ষে শ্রেষ্ঠ পণ্ডিতদের অন্যতম । আগ্র-অযোধ্য প্রদেশে আজমগড়ে ধৰ্ম্মশীল ব্রাহ্মণ-পরিবারে ইহার জন্ম ৷ কৈশোরেই গৃহত্যাগ করিয় ইনি বারাণসী গমন করিয়া সংস্কৃত ও দর্শনশাস্ব অধ্যয়ণ করেন। পরে ইনি কিছুকাল বিহারে একজন মোহস্তুের শিষ্যরূপে ছিলেন--এই সময় ইহার নাম ছিল বাবা রামোদীরদাস । বৌদ্ধশাস্ত্র অধ্যয়নের জন্ত ইনি সিংহল গমন করেন ও তথ্য হইতে বৌদ্ধধৰ্ম্ম সম্বন্ধে অধিকতর জ্ঞানলাভের নিমিত্ত তিব্বত যান। তঁহার তিব্বত-ভ্রমণের বিপৎসস্কুল ও চিত্তাকর্ষক কাহিনী এই প্রবন্ধে বর্ণিত হইয়ছে। ...হুল সাংকৃত।ায়ন "তিব্বতে বৌদ্ধধৰ্ম্ম” "ৰুদ্ধচধ্য", “বিনয়পিটক”, ও অষ্ঠাষ্ঠ হিন্দী পুস্তকের প্রণেতা। তিনি সম্প্রতি পুনরায় তিব্বতে গিয়াছেন । উদ্যোগ পৰ্ব্ব ১৯২৬ সালে আমি কাশ্মীর হইতে লদার্থ যাত্রা করি । ফিরিবার পথে দলাই লামার ডংরী-খোস্বৰ্ম প্রদেশে কিছুদিন ছিলাম কিন্তু কয়েকটি কারণে বেশী দিন থাকা সম্ভব হয় নাই । ১৯২৭-২৮ সাল আমার সিংহলপ্রবাসে কাটে। সেই সময় আমি পুনৰ্ব্বার তিব্বত যাওয়ার আবশ্বকতা অনুভব করি। আমি দেখিলাম যে ভারতের অতীত যুগের দার্শনিকদের অনেক গ্রন্থের অনুবাদ এবং বৌদ্ধ ভারতের ধৰ্ম্ম ও ইতিহাসের অনেক বহুমূল্য সামগ্ৰী তিব্বতে গেলে আমি পাইতে পারি। ফলে আমি পালি বৌদ্ধগ্রন্থ অধ্যয়ন শেষ করিবার পর তিব্বত যাত্রা করা স্থির করিলাম । সিংহলের কার্য্য শেষ হইলে ১৯২৮ সালের ১ল ডিসেম্বর আমার যাত্রারম্ভ হইল । বলা বাহুল্য, পূৰ্ব্ব হইতেই পথ ও উপায়ের কথা আমি ভাবিয় রাখিয়াছিলাম । জানা ছিল যে সোজাপথে ব্রিটিশ সীমানা পার হওয়া আমার পক্ষে অসম্ভব । পাসপোটের ঝঞ্চাট ও কৰ্ত্তাদের রুপার অপেক্ষায় বসিয়া থাকা আমার সহ হইবে না। ঐ কারণে কালিম্পং লাসার ( লহাস ) সোজা পথ ছাড়িয়া-কেন-ন ঐ পথে গ্যাংচী পর্য্যস্ত ইংরেজের প্রখর দৃষ্টির আড়াল হইবার উপায় নাই--নেপালের পথে যাওয়া স্থির করিলাম। নেপাল \St-s bళి প্রবেশও সোজা নহে, কেন-মা নেপাল রাজসরকার ব্রিটিশ প্রজ মাত্রকেই সন্দেহের চক্ষে দেখেন । ভোটিয়া-( তিব্বতী ) দিগেরও ঐ অবস্থা । সুতরাং আমার কাৰ্য্যোদ্ধারপথে তিনটি গবর্ণমেণ্টের চোখে ধূলা দেওয়া নিতান্তই দরকার হইয়া পড়িল। অস্ত্র । যাত্র-প্রকরণ আয়ত্ত করার জন্য শ্ৰীযুত কাওয়াগুচি ( জাপানী শ্রমণ ) এবং মাদাম নীল—এই দুজনের পুস্তক পড়িয়াছিলাম। তাহাতে ভোটিয়াদিগের আচারব্যবহার বাদে পথের পরিচয় বিশেষ কিছু পাই নাই । শেষে নেপাল-কাঠমাণ্ডু হইতে তিব্বত যাইবার পথ ভারতীয় সরকারী সার্ভে ম্যাপ হইতে লিখিয়া লইলাম। ম্যাপ-নক্সা ইত্যাদি সন্দেহজনক বস্তু সঙ্গে রাখা বিপজ্জনক । ঠিক করিলাম, নেপালপ্রবেশের পক্ষে শিবরাত্রিই শ্রেষ্ঠ কাল। পূৰ্ব্বে, ১৯২৩ সালের শিবরাত্রিতে, আমি নেপাল গিয়াছিলাম এবং দেড়মাস সেখানে ছিলাম । আমি দেখিলাম এখনও শিবরাত্রির তিন মাস বাকী। সুতরাং স্থির করিলাম যে ঐ সময়ের মধ্যে পশ্চিম ও উত্তর ভারতের বৌদ্ধ তীর্থ এবং ইতিহাস প্রসিদ্ধ স্থান সমূহ দৰ্শন করিব। কলম্বো হইতে ট্রেনে তলেমল্লার আসিলাম । এখানে ষ্টীমার-ঘাট । সিংহল হইতে ভারত মাত্র দুই ঘণ্টার পথ। তাহাও কয়েক মিনিট মাত্র ‘অকুল পাথার, তাহার পরেই তট দৃষ্টিগোচর হয়। ধন্সস্কোড়ীতে নামিয়া কাষ্টমকর্তৃপক্ষের নিকট হইতে আমার প্রায় পাচ মণ পুস্তক— অধিকাংশই ত্রিপিটক ও তাহার ‘অটকথা, অর্থাৎ ভাষা— উদ্ধার করিয়া রেলযোগে পাটনা রওয়ানা করিলাম । তাহার পর মাছুর, শ্রীরঙ্গম ও পুন্য দেখিয়া কালে পৌছিলাম । কালে গিরিগুহা মলবাড়ী ষ্টেশন হইতে প্রায় আড়াই মাইল মোটরের পথ। পৰ্ব্বতদেহ কাটিয়া গুম্ফা নিৰ্ম্মিত হইয়াছে । চৈত্যশাল বিশাল ও সুন্দর । শেষের দিকে প্রস্তর কুটিয়া