পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪০৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সাম্প্রদায়িক সাহিত্য শ্রীপরিমল গোস্বামী সাহিত্যে সাম্প্রদায়িকতা লষ্টয় সম্প্রতি খুব আন্দোলন হইতেছে, কিন্তু সাহিত্য সাম্প্রদায়িক হইতে পারে ন}। যদি হয় তবে তাহ সম্প্রদায়-বিশেষের হৃষ্টি বলিয়াই সাম্প্রদায়িক, সম্প্রদায় বিশেষের বিজ্ঞাপন বলিয়া সাম্প্রদায়িক মঙ্গে । সাম্প্রদায়িক শকটি সদৰ্থে ব্যবহৃত হয় না, সুতরাং সাহিত্য যখন সাম্প্রদায়িক হয় তখন তাই আর সাহিত্য থাকে না । কিন্তু মুসলমান-সম্প্রদায়েব এক অংশ বাংল-সাহিত্যকেই সাম্প্রদায়িক সাহিত্য পলিয় ঘোষণা করিতেছেন। যথার্থ সাম্প্রদায়িক সাহিত্য রচনা করা খুব সহজ । কোম্পানির টাইম-টেবল সাম্প্রদায়িক সাহিতা । জ্যামিতি পরিমিতি বিজ্ঞান দর্শন প্রভূতি বিশেষ বিশেষ সম্প্রদায়ের রচিত সাহিত্যকে সম্প্রদায়িক সাহিতা বলা যায় । এই সব সাহিত্য সাধারণের মনোরঞ্জনের জন্য রচিত নহে, ভিন্ন ভিন্ন সম্প্রদায় কর্তৃক বিশেষ উদ্দেশু লভয় রচিত। সাহিত্য--- যাহা ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা বা উপলব্ধির আনন্দময় বা আবেগ ময় প্রকাশ, তারা কখনও সাম্প্রদায়িক হইতে পারে না । সাহিত্য ব্যক্তিগত, কিন্তু তাহার উদেহু নৈর্ব্যক্তিক । সাহিত্য-শ্ৰষ্ট আপন অভিজ্ঞতা বা উপলব্ধি-লব্ধ সত্য অপরের মনে সঞ্চারিত করিতে চাহেন, কিন্তু তাতার উদ্দেশ্য ইহা মহে যে লোকে তাহ পাঠ করিয়া ঠিক সময়ে ট্রেন ধরিতে পারুক বা কৃষিকাৰ্য্য শিখুক বা কোনও ধৰ্ম্মমতে দীক্ষিত হউক। উদ্দেশ্য ইহাই যে লোকে তাহা পাঠ করিয়া আনন্দিত হউক । কিন্তু তথাপি সাহিত্য সাম্প্রদায়িক হইতে পারে এই কপ ধারণার বশবৰ্ত্তী হইয়া মুসলমান সম্প্রদায়ের এক অংশ সাহিত্য হইতে আনন্দ পাইতেছেন না । ইহা সাহিত্যেব দোষ নহে, দোষ এদেশের ভাগ্যের । এষ্ট প্রসঙ্গে একটি গল্প মনে পড়িতেছে । জনৈক স্বচ, সিনেমা দেখা শেষ হইলে টিকিট ঘরের নিকট গিয়া বলিল, “এক টাকা দুই আনার টিকিট করিয়াছিলাম, আমাকে দুষ্ট আন ফেরৎ দাও।” টিকিট রেল বিক্রেতা বলিল, “দুষ্ট আনা অ্যামুজমেণ্ট ট্যাক্স, ফেরৎ দেওয় যায় না।” স্বচ তাহার উত্তরে বলিয়াছিল, “I wasna amused”। আমাদের মুসলমান ভ্রাতারাও বাংলা-সাহিত্য সম্পর্কে ঠিক এই ধরণের কথাই বলিতেছেন। অর্থাৎ amused zēt ECEz ai যে-কোনও ভারতবাসী ভারতবর্ষে বসিয়া সাহিত্য রচনা করিতে গেলে ভারতবর্ষীয় ভাষায় তাহাকে চিস্তা করিতে হইবে, ইহাই স্বাভাবিক নিয়ম । ভারতবর্ষের মানুষ, তাহার সমাজ, তাহার নদ-নদী, অরণ্য-পৰ্ব্বত—প্রত্যেকটির সহিত ভারতের প্রাচীন ঐতিহ্য এবং সংস্কার ওতপ্রোত ভাবে মিশিয়া আছে । এদেশে বসিয়ু চোখ খুলিলেই যাহ দেখা যায় তাহা যেমন এদেশের সাহিত্যের উপাদান, তেমনই এদেশে যাহ। কিছু জন্মিয়াছে তাহাই এদেশের সাহিত্যের উপাদান হিসাবে পরিগণিত হইয়াছে। সুতরাং হিন্দু ইউন, মুসলমান হউন, খ্ৰীষ্টান হউন, এদেশের ভাষায় সাহিত্য রচনা করিতে গেলেই এদেশের চিস্তারীতি এবং ভাবধারাব সহিত তাঙ্গকে পরিচিত হইতে হইবে, ন হইলে চলিবে না । এদেশে বাস করিয়; এদেশের মাতুষকে, মানুষের সমাজকে, প্রকৃতিকে, তাতার যুগযুগান্তরের ংস্কৃতি এবং ঐতিহকে বাদ দিয় এদেশের ভাষায় সাহিত্য রচনা করা সম্ভব লঙ্গে । আমি হিন্দু, কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে আমি কোনও দেখতার অস্তিতে বিশ্বাস করি মা । বিদ্যার জন্য সরস্বতী নামক দেবতার কাছে প্রার্থনা করিলে বিদ্যা হয় ইহাও বিশ্বাস করি না । কিন্তু সাহিত্য রচনার সময় অনায়াসে লিখি, “সরস্বতী আমাকে কৃপা করিলেন," বা “রুপা হইতে বঞ্চিত করিলেন " আমি “মেগাপড় শিথিলাম" বা “শিখিতে পারিলাম না” ইহা আমি ঐ ভাষায় প্রকাশ করি মাত্র। কারণ ইহাই আমার দেশের ভাষা । ইহাতে আমি ধৰ্ম্মের ক্ষেত্রে কি মানি ষা না-মানি তাহ কিছুই বুঝা যায় না।