বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৬৯৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চিত্ৰলেখা শ্ৰইলা দেবী পূজোর বাজার । দোকানগুলো লোকে ভ'রে গেছে । কাপড়ের দোকানে সব থেকে বাহার, সব থেকে ভিড়, রকমারি রঙের রামধন্থ, জরি চুমকির বিদ্যুৎ ঝলকাচ্ছে। বিক্রেতারা পরিশ্রাস্ত হয়ে পড়েছে। একটি অল্পবয়সী ছেলে, নতুন সে কাজে লেগেছে, কয়েক জন থদেরকে বিদায় করে সবেমাত্র সে দাড়িয়েছে, এমন সময় ডাক পড়ল, “সুধীর, শিগগির এদিকে এস।” সমস্ত দোকানে সাড়া পড়ে গেল, বাহাদুরপুরের মল্লিকবাবু এসেছেন। মস্ত বড় জমিদার, পুবনে খদের । দোকানের অধিকারী স্বয়ং জোড়হস্তে অভ্যর্থনা করতে এগিয়ে এলেন। প্রকাও মোটরের ভেতর উগ্র লাল রঙের পর্দা দেওয়া, তার মাঝে মাঝে জরির থোপা ঝুলছে। ফুলদানিতে ফুলের তোড়, বজ্ৰ-আঁটনে গাথা বঁধাকপির মত নিরেট তোড়া। লাল নীল রঙের জরি-লাগান পোষাকধারী দুজন বরকন্দাজ নামল প্রথমে, তার পর মল্লিকবাবু তার পর্বতপ্রমাণ দেত নিয়ে স্থাপতে হাপাতে ধীরে ধীরে নেমে এলেন । তার পর নামল মোসাহেব, তার পর এল বিসৰ্পিত আলবেলি সহ গুড়গুড়ি নিয়ে থাস তৃত্য। এক ধরণের লোক আছে জগতে যাদের সাজেসজ্জায় কাজেকথায় সমস্ত বিষয়ে অর্থের উগ্ৰ ঝাঞ্জ আর রুচির শূন্তত উৎকট ভাবে প্রকাশ পায়। বাহাদুরপুরের মল্লিকবাবু সেই দলের। র্তার জন্যে মিঠে পান এল, পানীয় এল, সুধীর ছোট কাঠের সিড়ি দিয়ে উঠে বেনারসীর বস্তা নামালে । বহুক্ষণ বাছাবাছি ক'রে দোকানদারের বহু বিনয় বাক্যে পরিতুষ্ট হয়ে মল্লিকবাবু একথানা শাড়ী কিনলেন,— তীব্র ম্যাজেন্ট রঙের জমি, আগাগোড়া ভরে রয়েছে সোনার গোলাপগুচ্ছ, গোলাপের ডালে ডালে বসে আছে দলে দলে ময়ূর,– অত ক্ষীণ ডালে এত বড় পার্থী কি ক’রে বলেছে সে এক গবেষণার বিষয়। তবে শাড়ী যে রীতিমত জাকালো সে-বিষয়ে কারও সন্দেহ হবার অবকাশ নেই। দাম ছ-শ টাকা । মল্লিকবাবুর পরিষদ কিছু কমাতে অনুরোধ করলে । দোকানদার জোড়হস্তে বললে, "আক্তে হেঁ হেঁ-কি বলেন । আপনারা বাপ মা, আপনাদের থেয়েই ত বেঁচে আছি। ছ-শ টাকা আবার একটা দাম, ও ত বাবুর হাতের ময়লা ।” মল্লিকবাবু বাকড় গোফের মাঝ দিয়ে অবজ্ঞার হাসি হেসে বললেন, “আরে যেতে দাও, যেতে দাও।” কাপড় নিয়ে তঁরা সদলবলে উঠে চলে গেলেন । সুধীর গরীবের ঘরের ছেলে । সে ই ক'রে শুনছিল-- ছ-শ টাকা বাবুব হাতের ময়লা । এ সব জমিদারের কথা সে গল্পে পড়েছে, কল্পনায় দেখেছে নদীর পারে সাতমহল! বাড়ী, পথের কাজ করা মক্ষণ, সুন্দর, শঙ্খশুভ্র কক্ষতল, কালে পাথরের ঘাটে কালো আবলুস কাঠের বিপুল বজর স্বাধ, মুকুলে মুঞ্জরিত ছায়াঘন আয়রন, বিস্তীর্ণ দীঘিব কাকচক্ষু জলে সুপারির সারির ছয় পড়েছে, পদ্ম ফুটেছে। বাড়ীতে নিত্য অতিথি অভ্যাগত, দুর্গোৎসব চলেছে, ব্রাহ্মণভোজন হচ্ছে, কাঙালী বিদায় হচ্ছে, গ্রামের লোক ভেঙে পড়েছে। আর এ-পুরীর লক্ষ্মীস্বরূপ গৃহিণী যিনি,—যিনি এই শাড়ী পরবেন,-প্রসপ্ন তার মুখ, করুণাভরা চোখ, তেজে সৌন্দয্যে রাণীর মত মহিমময়ী, সকলে তার আজ্ঞায়, তার অধীনে, সকলের সেবায় কল্যাণে যিনি নিবেদন করেছেন নিজেকে । আর রাজপুত্র যদি থাকে, অতীতের রাজপুত্রদের মত নিৰ্ম্মল নিৰ্ভীক, যুদ্ধ যাদের খেলা, বিপদ ঘাদের আনন্দ. সুধীরের চিন্তায় বাধা দিয়া এক বুদ্ধ ভদ্রলোক তাকে ডাকলেন, “ওহে, দেখাও ত থানকতক শাড়ী।” ক্লাস্ত সুধীর অপ্রসন্ন মনে কয়েকখানা সাদা শাড়ী ফেলে দিলে বুদ্ধের সামনে । এমন মলিন বেশধারী বুদ্ধদের মূল্যবান শাড়ী দেখিয়ে সময় নষ্ট করার দরকার নেই, এ অভিজ্ঞতা তার দোকানে ঢুকেই হয়েছে। ভদ্রলোক জীৰ্ণ কোটের