পাতা:প্রবাসী (ষট্‌ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Ե-ՊՀ প্রবাসী SNこ8いこ。 অধিকার নেই। তথাগতের পাতে একদিন তার এক শিষ্য শূকর-মাংস দিয়েছিল, তিনি তাও খেয়েছিলেন। ভিক্ষুর দুই চক্ষু সহসা জলে ভরিয়া গিয়াছিল। প্রায় ছয়-সাত মাস কাটিয়া যাইবার পর একদিন তাহার প্রাণের অন্তরতম কথাটি জানিতে পারিলাম। আমার বাড়ীতে বসিয়া বৌদ্ধ শিল্প লইয়া আলোচনা হইতেছিল। ভিক্ষু অভিরাম বলিতেছিলেন, ভারতে এবং ভারতের বাইরে কোটি কোটি বুদ্ধ-মূৰ্ত্তি আছে। কিন্তু সবগুলিই তার ভাব-মূৰ্ত্তি। ভক্ত-শিল্পী যে ভাবে ভগবান তথাগতকে কল্পনা করেছে, পাথর কেটে তার সেই মূৰ্ত্তিই গড়েছে। বুদ্ধের সত্যিকার আকৃতির সঙ্গে তাদের পরিচয় ছিল না।’ আমি বলিলাম, ‘আমার ত মনে হয়, ছিল । আপনি লক্ষ্য করেছেন নিশ্চয় যে, সব বুদ্ধ-স্মৃত্তিরই ছাঁচ প্রায় এক রকম। অবশু অল্পবিস্তর তফাৎ আছে, কিন্তু মোটের উপর একটা সাদৃশু পাওয়া ধায়,--কান বড়, মাথায় কোকড় চুল, ভারী গড়ন—এগুলো সব মূৰ্ত্তিতেই আছে। এর কারণ কি ? নিশ্চয় তার প্রকৃত চেহারা সম্বন্ধে শিল্পীদের জ্ঞান ছিল, নইলে কেবল কাল্পনিক মূৰ্ত্তি হ’লে এতট। সাদৃশু আসতে পারত না। একটা বাস্তব মডেল তাদের ছিলই ? গভীর মনঃসংযোগে আমার কথা শুনিয়ু ভিক্ষু অভিরাম কিছুক্ষণ চুপ করিয়া রছিলেন, তার পর ধীরে ধীরে বলিলেন, “কি জানি। বুদ্ধদেবের জীবিতকালে তার মৃত্তি গঠিত হয় নি, তখন ভাস্কয্যের প্রচলন ছিল না। বুদ্ধ-মূৰ্ত্তির বহুল প্রচলন হয়েছে গুপ্ত-যুগ থেকে, খ্ৰীষ্টীয় চতুর্থ শতাব্দীতে, অর্থাৎ বুদ্ধ-নিৰ্ব্বাণের প্রায় সাত-শ বছর পরে। এই সাত-শ বছর ধরে তার আকৃতির স্মৃতি মানুষ কি করে সঞ্জীবিত রেখেছিল ? বৌদ্ধশাস্ত্রেও তার চেহারার এমন কোন বর্ণনা নেই যা থেকে তার একটা স্পষ্ট চিত্র স্বাক যেতে পারে। আপনি যে সাদৃশ্বের কথা বলছেন, সেটা সম্ভবতঃ শিল্পের একটা কনভেনশন—প্রথমে এক জন প্রতিভাবান শিল্পী তার ভাব-স্মৃত্তি গড়েছিলেন, তার পর যুগপরম্পরায় সেই মূর্তিরই অনুকরণ হয়ে আসছে। ডিস্কু একটি দীর্ঘনিশ্বাস ত্যাগ করিলেন, ‘নী—তার সত্যিকায় চেহারা মাগুর ভুলে গেছে –টুটেনখামেন আমেন-হোটেপের আছে, কিন্তু বোধিসত্বের দিব্য দেহের প্রতিমূৰ্ত্তি s' আমি বলিলাম, হ্যা, মামুষের স্মৃতির ওপর যাদের কোন দাবি নেই তারাই পাথরে নিজেদের প্রতিমূৰ্ত্তি খোদাই করিয়ে রেখে গেছে, আর যারা মহাপুরুষ তার কেবল মানুষের হৃদয়ের মধ্যে অমর হয়ে আছেন । এই দেখুন না, যীশুখ্ৰীষ্টের প্রকৃত চেহারা যে কি রকম ছিল তা কেউ জানে না।’ তিনি বলিলেন, ঠিক । অথচ কত হাজার হাজার লোক তার গায়ের একটা জামা দেখবার জন্ত প্রতি বৎসর তীর্থযাত্রা করছে। তারা যদি তার প্রকৃত প্রতিমূৰ্ত্তির সন্ধান পেত, কি করত বলুন দেখি । বোধ হয় আনন্দে পাগল হয়ে যেত । এই সময় তাহার চোখের দিকে আমার মজর পড়িল । ইংরেজীতে যাহাকে ফ্যানাটিক বলে, এ সেই তাহারই দৃষ্টি। যে উগ্র একাগ্রতা মানুষকে শহীদ করিয়া তোলে, তাহার চোখে সেই সৰ্ব্বগ্রাসী তন্ময়তার আগুন জলিতেছে। চক্ষু-দুটা আমার পানে চাহিয়া আছে বটে, কিন্তু তাহার মন যেন আড়াই হাজার বংসরের ঘন কুঙ্কটিকা ভেদ করিয়া এক দিব্য পুরুষের জ্যোতিৰ্ম্ময় মূৰ্ত্তি সন্ধান করিয়৷ ফিরিতেছে। তিনি হঠাৎ বলিতে লাগিলেন, ভগবান বুদ্ধের দস্ত কেশ নখ দেখেছি ; কিছু দিনের জন্য এক অপরূপ আনন্দের মোহে আচ্ছন্ন হয়ে ছিলুম। কিন্তু তবু তাতে মন ভরল না । কেমন ছিল তার পূর্ণাবয়ব দেহ ? কেমন ছিল র্তার চোখের দৃষ্টি ? তার কণ্ঠের বাণী—যা শুনে একদিন রাজ সিংহাসন ছেড়ে পথে এসে দাড়িয়েছিল, গৃহস্থ-বধু স্বামী-পুত্র ছেড়ে ভিক্ষুণী হয়েছিল—সেই কষ্ঠের অমৃতময় বাণ যদি একবার শুনতে পেতুম—’ দুৰ্দ্দম আবেগে তাহার কণ্ঠস্বর রুদ্ধ হইয় গেল । দেখিলাম উহার দেহ রোমাঞ্চিত হইয়া উঠিয়াছে, অজ্ঞাতে দুই শীর্ণ গগু বাহিয়া অশ্রুর ধারা গড়াইয়া পড়িতেছে। বিস্ময়ে স্তম্ভিত হইয়া গেলাম ; এত অল্প কারণে এতখানি ভাবাবেশ কখনও সম্ভব মনে করি নাই । শুনিয়াছিলাম বটে, কৃষ্ণনাম শুনিবামাত্র কোন কোন বৈষ্ণবের দশা উপস্থিত হয়, বিশ্বাস করিতাম না ; কিন্তু ভিক্ষুর এই