পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/১৪২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

>२२ স্বাস্থ্যাগারে আশ্রয় লইয়াছিল । কয়েক মাসের চিকিৎস ও সেবা শুশ্ৰষায় কোনোই ফল হয় নাই । যখন সে বুঝিতে পারিল যে সে সকল চিকিৎসার অতীত, তখন তাহার চিরপরিচিত মাতৃগৃহে ফিরিয়া আসিল । সহরের বাহিরে তাহার মায়ের ক্ষুদ্র কুটীরের একটি সঙ্কীর্ণ ঘরে তাহারই আপন শয্যায় শুইয়া সে মৃত্যুর প্রতীক্ষা করিতেছে। এই ঘরেই তাহার শৈশব ও কৈশোর অতিবাহিত হইয়াছে ; আজ বুঝি জীবন ও অতিবাহিত হইতে চলিল । শধ্যাপার্থে ব্যথিত ভারাক্রাস্ত চিত্ত লইয়া তাহার মা বসিয়াছিলেন । র্তাহার সমস্ত হৃদয়-নিংড়ানো যত্ন ও সেব দিয়া মেয়েকে বাচাইয়া তুলিবার ব্যর্থ চেষ্টায় তিনি এত ব্যস্ত যে কাদিবার অবসর পর্য্যন্ত র্তাহার নাই । রোগিণীর সেবাকার্য্যে সহযোগিনী একজন সিস্টারও শয্যাপার্শ্বে দাড়াইয়া নীরবে অশ্র-বর্ষণ করিতেছিলেন । র্তাহার সপ্রেম দৃষ্টি রোগিণীর মুখের উপর নিবদ্ধ ছিল —অশ্বতে চক্ষু ভরিয়া আসিলেই তৎক্ষণাৎ মুছিয়া ফেলিয়া দৃষ্টি পরিষ্কার করিয়া লইতেছিলেন। একটু দূরে একটি ভগ্ন জীর্ণ চেয়ারে এক স্থূলকায় নারী উপবিষ্ট । তাহার পরিধেয় বস্ত্রের কলারে সস্ত্রান্ত পদবী-সূচক একটি চিহ্ন অঙ্কিত। যে চেয়ারখানিতে তিনি বসিয়া আছেন সেটি রোগিণীর পরম আদরের সামগ্রী এবং একমাত্র ওই বস্তুটিকেই সে সঙ্গে লইয়া আসিয়াছে। মহিলাটিকে অন্যএকটি আসনে বসিতে অন্তরোধ করা সত্ত্বেও তিনি সেই জীর্ণ চেয়ারে বসিয়া যেন মুমূর্ষর স্মৃতিকে সম্মানে করিতেছিলেন । সেটি একটি বিশেষ পৰ্ব্বদিন-নববর্যের জন্ম উৎসব । বাহিরে আকাশ ধূম্রাভ ও মেঘ-ভারাক্রান্ত ; গৃহাভ্যন্তরে বসিয়া মনে হইতেছিল বাহিরে প্রকৃতি উদাম—বাতাস তুষার-শীতল। কিন্তু বাহিরে আসিলেই মৃদুস্নিগ্ধ সমীরণের প্রলেপ শরীর ও মন পুলকিত করিয়া তুলিতে ছিল। স্বকৃষ্ণ ধরণী-গাত্রে তুষার-পাতের চিহ্নমাত্র নাই ; কদাচিৎ দুই-এক কণা তুষার পতিত হইয়া তৎক্ষণাৎ মিলাইয়া যাইতেছিল। মনে হইতেছে যেন ঝঞ্চা ও তুষার প্রাচী । বৎসরকে উত্যক্ত না করিয়া আসন্ন বর্ষকে অভিনন্দন করিবার জন্য বলসঞ্চয় করিতেছে । প্রবাসী- বৈশাখ, ১৩৩৩ [ ২৬শ ভাগ, ১ম খণ্ড বাহিরের উদাস প্রকৃতির মতন মানুষের মনেও কেমন একটা অবসাদ আসিয়াছে ; কিছু করিবার প্রবৃত্তি কাঠারে। নাই । রাস্তার লোক-চলাচলের চিহ্ন নাই—ভিতরে লোকের হাতে যথেষ্ট অবকাশ । মুমূর্যর ঘরের ঠিক সম্মুখের পোল জমিতে একটি নতুন আটালিকার ভিত্তির জন্য খুটি পোত হইতেছিল। সকালে গুটি-কয়েক মজুর আসিয়া খুটি-পোতার বিরাট যন্ত্রটিকে যথারীতি সশব্দে তুলিয়া ও ফেলিয়া অল্পক্ষণেই ক্লান্ত হইয়৷ চলিয়া গিয়াছে । চারিদিক কেমন-একটা অবসন্নতার আবেশে মূৰ্ছাপন্ন । মেয়ের চুপ ড্রী লইয়া ছুটির দিনের হাট-বাজার করিয়া বহুক্ষণ বাড়ী ফিরিয়াছে ; পথে লোক-চলাচল প্রায় বন্ধ হইয়া আসিয়াছে। ছেলের রাস্তায় গেল ছাড়িয়া নৃতন কাপড় পরিবার লোভে বাড়ী আসিয়াছে ; আর বাহির হইতে পারে নাই । গাড়ীর ঘোড়াগুলিকে খুলিয়া দূর সহরতলীর আস্তাবলে বিশ্রামের জন্য পাঠানো হইয়াছে । রৌদ্র যতই পড়িয়া আসিতেছে ধীরে-ধীরে সমস্তই কেমন যেন শাস্ত হইয়া পড়িতেছে । এই নীরব শান্তি এই গুমোটের পক্ষে বেশ আরামপ্রদ মনে হইতেছে । এতক্ষণ সকলেই নীরব রহিয়া রোগীকে লক্ষ্য করিতেছিলেন। জানালার বাহিরে উদাসভাবে দৃষ্টিপাত করিয়া মা বলিলেন,—“এম্নি-একটা ছুটির দিনে ঈডিথকে কোলে তুলে নিয়ে ভগবান ভালোই করছেন। বাইরের সব গোলমাল থেমে আসছে। ঈডিথ পরম শান্তিতে যেতে পারবে।” প্রাতঃকাল হইতেই রোগী তন্দ্রাচ্ছন্ন, কিন্তু একেবারে অসাড় সংজ্ঞাশূন্ত নহে। বৈকালের দিকে তাহার মুখের ভাববিপর্য্যয় দেখিয়া মনে হইতেছিল যে তাহার অন্তরে নিদারুণ দ্বন্দ্ব স্বরু হইয়াছে। নানা ভারের ঘাতপ্রতিঘাতের চিহ্ন মুখে ফুটিয়া উঠিতেছিল। কখনো কিছু দেখিয়া সে বিষম আশ্চৰ্য্য হইতেছিল ; কখনো মুখভাব চিস্তাক্লিষ্ট, মিনতিকাতর অথবা অসহ যন্ত্রণায় অধীর । সম্প্রতি তাহার মুখে চরম বিরক্তি ও প্রত্যাখ্যানের ভাব সুস্পষ্ট। এই ভাবাস্তরে রোগীর স্বাভাবিক কমনীয়তা নষ্ট