পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/১৬৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১ম সংখ্যা ] প্রবাল >80 মাস কয়েক আগেই সেবার বিয়ে হ’য়ে গিয়েছিল। সেবার বাপ মা অবশ্ব জানতেন না সে জামাইএর মাথ৷ খারাপ। আর জামাইএর বাপ মা ?—ছেলের মাথা খারাপ ব’লেই তারা তাড়াতাড়ি একটি বউ করুবার জন্যে ভারী ব্যস্ত হয়েছিলেন । কারণ, তারা জানতেন যে, পাগল মানুষ এক বাপ-মার স্নেহপাত্র হয়, আর স্ত্রী তা’কে যত্ন আদর করে ; সংসারের বাকী লোক তা’কে অবহেলা কবেই, কিন্তু সেবার বাপ-মা বিয়ের পর জামাইএর প্রকৃত পরিচয় পেয়ে এমন মনঃক্ষুণ্ণ হয়েছিলেন ধে, মেয়েকে তা’রা আর শ্বশুরবাড়ী পাঠাননি । সেবা বেচারীর নিজের ভালো-মন্দ যাচাই করবার বুদ্ধি তখনও ততটা হয়নি। তবে সে পাড়াগ্রতিবাসীদের কাছ থেকে অজস্র সহানুভূতিরূপে “আহা, এমন রূপের ডালি মেয়ে অমন পাগলের গলায় পড়ল,” এই কথাটি শুনতে খুব বেশী অভ্যস্ত হ’য়ে উঠেছিল। সেইজন্তেই একথাটা শুনলেই তার মনে একূট তীব্র বিরক্তির সঞ্চার হ’ত । छूहे কেদারের বিয়ের মাস ছয় পরের কথা । হুগলী ষ্টেশন থেকে পোয়াটাক্ রাস্ত দূরেই কেদারের মস্ত বাড়ী, বাগান, পুকুর সারা গ্রামখানার বুকে মাথা উচু ক’রে দাড়িয়ে গৃহস্বামীর ঐশ্বৰ্য্যের পরিচয় দিচ্ছে। কেদার তিন ভাইএর মধ্যে ছোট। চারিটি বোন, সবারি বিয়ে হয়ে গেছে। বাড়ীর গিন্নি মধুমতীর নামও যেমন, মনের ভিতর আর বাইরের ব্যবহারটিও ঠিক্‌ ভাই। নিজে তিনি বড় ঘরেরই মেয়ে, পড়েছিলেনও জমিদারের ঘরে। কিন্তু, দুঃখীর দুঃখ, অভাবের বেদন তিনি খুব বুঝতেন। যেন একটু বেশী ক’রেই বুঝতে চাইতেন। সেইজন্যে দু’হাত তুলে দান করুবার অভ্যাসটা তার বেশী রকম ছিল। কিন্তু গৃহস্বামী সেটা মোটেই ভালো চোখে দেখ তেন না। তিনি এর জন্যে গৃহিণীকে বরাবর অহুযোগ করে এসেছেন। মধুমতী কখনো সে অম্বুযোগের প্রতিবাদ করেননি। তবে তা’র দানধ্যানও বন্ধ হয়নি। ইদানীং বাড়ীতে মেয়ে-বউ হওয়ায় তিনি তাদের গৃহিণীর এই অতিরিক্ত মুক্তহস্ততার ওপর সতর্ক নজর রাখতে সৰ্ব্বদা উপদেশ দিতেন ; তিনি আর কদিন } সত্যি কিছু তার কুবেরের ভাণ্ডার নয় যে, অতিরিক্ত দান খয়রাতের পরও পুজি থাকৃবে। বিশেষ ক’রে সংসারটি তো দিন দিন বেড়েই চলেছে। থাকৃলে পরে বউদের ছেলেপুলেরাই ভাল পাবে পরবে। বউমারা শ্বশুরের এই সছুপদেশ বেশ কান পেতেই নিয়েছিল। তাতে মধুমতীর নিতান্ত গোপন দানের কথাও কৰ্ত্তার কানে গিয়ে উঠতে দেরী হ’ত না। গৃহিণী যে এইসব গোয়েন্দাগিরী না বুঝতেন তা নয়। তবে গোয়েন্দার পেছনে খোদ কৰ্ত্তার কলকাঠিই যে কাজ করছে, তা বুঝে তিনি এইসব খুদে গোয়েন্দাদের মোটে গ্রাহাই করতেন না । ছোট-বউ প্রিয়ত্রতাকে তিনি গোড়া হ’তেই একটু বেশী রকম সুনজরে দেখেছিলেন, যদিও সে বড়-জা নয়নতারা ও মেজ-জা চঞ্চলকুমারীর চাইতে রূপে ঢের খাটো । প্রিয়র রঙের জেল্লা ওদের কাছে ছিল মাটো রকমই। তাতেই বিয়ের ক’নে এবাড়ীতে পা দেব-মাত্রই জা’র বর-বউ বরণ করতে এসেই চেচিয়ে উঠেছিল,ওমা দেখে যাও, ঠাকুরপোর বউ এসেছে কি রকম কালে ! ননদের দল ভীড় ক’রে বউএর সামনে এসে বুড় ভাজদের সুরে সুর মিলিয়ে গেয়ে উঠল—ওমা কালো বউ যে ! মধুমতী তখন প্রতিবাসিনীদের সনিৰ্ব্বন্ধ অন্তরোধে বর্ষার সেই ওমোট গরমেও সর্বাঙ্গে হীরা জহরৎ চাপিয়ে, র্তার শাশুড়ীর আমলের খুব বড়-বড় সাচ্চ জরীর ফুলতোলা সেকালের দামী বেনারসী সাড়ীখানাকে সামলে নিয়ে পরছিলেন। তার এই শেষ কাজ। তাই বড় সাধ ছিল খুজে-পেতে এমন একটি ঘর-আলো-করা বউ আনবেন ষে বিয়ের ক’নে এসে দুধে-আলতায় পা দিয়ে দাড়ালে পায়ের রঙে দুধে-আলতার রঙ বেমালুম মিশ গেয়ে যাবে। বউদের কাছে এ মনের সাধ তিনি মাঝে মাঝে ব্যক্তও করতেন। বউরা কিন্তু তাতে খুলী হ’য়ে উঠত না, তবে মধুমতীর তাতে কিছু যেত আস্ত না । তার আদরের ছোট ছেলে, রূপ ও তার চাদের মতো, পড়া-শুনো ও করে ভালো, আর স্বভাব-চরিত্রের কথা তো বলাই বাহুল্য। পাড়ার দেবীর মা যে বলে—হীরেতে দাগ আছে তো