পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৮১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

V8b ঘাড় হেঁট করে’ বাটিট। জানেত্তোর মুথের সামনে ধরূলে। জানেত্তো, “নিয়ে যা’ তোর দুধ !”—বলে’ ভয়ানক চীৎকার করে’ উঠল ; পরে একজন সৈনিককে ডেকে বললে— “একটু জল খাওয়াও না ভাই!” —বলতেই সৈনিক নিজের বোতলটি তার হাতে দিলে ; একটু আগে যাদের সঙ্গে গুলি চলছিল, তাদেরই একজনের দেওয়া জল সে অসঙ্কোচে পান করলে। তারপর সে এই অনুরোধ জানালে যে, হাতদুটাে পিঠমোড়া করে। না বেঁধে যেন বুকের উপর আড়াআড়ি করে বেঁধে দেওয়া হয়—বললে, “একটু স্বচ্ছন্দ হয়ে থাকৃতে চাই ।” লোকটাকে যতটা খুন্সী করা যায় তা করতে তার কুষ্ঠিত হ’ল না। তারপর দলপতি সবাইকে যাত্রা করতে বলে’ মাতেওকে বিদায়-অভিবাদন করলে, মাতেও কথাটি কইলে না,—তারাও চটুপটু মাঠের পথ ধরে’ বেরিয়ে পড়ল । প্রায় দশমিনিট মাতেও নিৰ্ব্বাক হয়ে রইল। কেবল বন্দুকের উপর ভর দিয়ে সে ছেলের পানে একদৃষ্টে চেয়ে রইল—সে চাউনিতে একটা ভীষণ ক্রোধ যেন জমাট হয়ে” উঠেছে ! ছেলেটা একবার বাপের পানে তাকায়, আবার মার পানে চেয়ে থাকে—সে যেন ছটফট করতে লাগল। কতক্ষণ পরে মাতেও বলে উঠল— “এই বয়েস থেকেই বেশ আরম্ভ করেছিস্ তুই!” ‘বাবা ’ বলে কাদ-কঁাদ হয়ে ছেলেটা যেই বাপের দিকে এগিয়ে পা’দুটো জড়িয়ে ধরতে যাবে, অমনি মাতেও গর্জে’ উঠল— “দূর হ আমার সামনে থেকে ” ছেলেটা থমকে গেল ; বাপের কাছ থেকে দু’চার পা তফাতে নিশ্চল হয়ে দ্বাড়িয়ে পিয়ে-ফুপিয়ে কাদতে লাগল । এইবার জিসেপ ছেলের কাছে এগিয়ে এল, সে ঘড়ির চেনটা দেখতে পেয়েছিল—তার একদিকটা ফর্মুনাতোর সার্টের ভিতর থেকে বেরিয়ে পড়েছিল। খুব কঠিনম্বরে মা জিজ্ঞেস করলে— “এ ঘড়ি তোকে কে দিলে ?” প্রবাসী-জ্যৈষ্ঠ, ১৩৩৩ [ ২৬শ ভাগ; ১ম খণ্ড “আমার মামু—ওই পাহারাওয়ালার সঞ্জর ।” ফালকোনে ঘড়িটা কেড়ে নিয়ে একটা পাথরের এমন উপর জোরে আছাড় দিলে, যে সেটা চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে’ গেল। তারপর স্ত্রীকে ডেকে বললে— “ঠিক করে’ বল—এ ছেলে কি আমার ?” জিসেপার মেটে-রঙের গাল দুখান ইটের মত লাল হয়ে উঠল । “কি বলছ মাতেও ? কার সঙ্গে কথা কইছ, সে হু স নেই ?” “ও: ! তা’ হ’লে এই হ’ল আমার বংশের প্রথম বিশ্বাসঘাতক ।” ফৰ্চনাতোর গোঙানি আর ফোপানি আরও বেড়ে উঠল—ফালকোনে তার মুখের দিকে ভীষণ চোখ করে’ চেয়ে রইল। শেষে বন্দুকের বাটট মাটিতে একবার ঠুকে সেটা আবার কাধে করলে, করে আবার ‘মাকী’তে যাবার যে পথ—সেই পথ ধরে বেরিয়ে পড়ল। ফৰ্চনাতোকে পিছু পিছু আসতে হুকুম করলে—সেও সঙ্গে চলল। তখন জিসেপা ছুটে গিয়ে মাতেওর হাতখান চেপে ধৰ্বলে। মাতেওর মনের ভিতরটা বুঝে দেখবার জন্যে সে তার কালো চোখদুটি দিয়ে স্বামীর চোখের পানে চাইলে, চেয়ে বলে’ উঠল— “ও তোমার ছেলে যে !” মাতেও বললে, “হাত ছেড়ে দাও—আমিও ওর বাপ ।” জিসেপা ছেলের মুখে চুমু খেয়ে কাদতে কঁাদতে ঘরে ফিরে গেল। ঘরের ভিতর যীশু-জননীর একখানি ছবি ছিল, সে তারি সামনে হাটু পেতে বসে কায়মনোবাক্যে প্রার্থনা করতে লাগল। এদিকে ফালকোনে সেই পথ ধরে” প্রায় দুশো হাত চলে গেল, শেষে একটা ছোট খদের মধ্যে এসে দাড়াল । বন্দুকের বঁটিটা দিয়ে জমিট পরীক্ষা করে দেখলে—বেশ নরম, সহজেই গৰ্ত্ত খোড়া যাবে। জায়গাটা তার পছন্দ হ’ল। “ফৰ্চনাতে, ওই বড় পাথরখানার পাশে গিয়ে দাড়া।” ছেলেটা বাপের কথামত সেইখানে গিয়ে হাটু গেড়ে বসল।