পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪৬৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩য় সংখ্যা সাজাইয়াছিল। সে বালিকাও এমনি বিরক্ত হইয়া উঠিয়া এমনি নড়িয়া-চড়িয়া কথা বলিয় একবারের সাজ দশবার খুলাইয় তাহাকে অস্থির করিয়া তুলিয়া ছিল ; এমনি বিদ্রোহ ও বিরক্তির মাঝখানেও মাঝে মাঝে আপনার কচি মুখের ও ক্ষুদ্র দেহের আড়ম্বরপূর্ণ প্রসাধন দেখিয়া কুথগর্বে ছোট ঠোটখানি উণ্টাইয়া নধর ঘাড়টা বঁকাইয়৷ মৃদু মুছ হাসিতেছিল। তরঙ্গিণী একবার ঘরে ঢুকিয়৷ উদগত অশ্রুর উচ্ছ্বাস কোনো প্রকারে রোধ করিয়া ঘরের বাহিরে অন্য কাজে চলিয়া গেলেন । কি জানি যদি মৃণালিনীর চোখে ধরা পড়েন ! ময়নার জন্য গহন কিছু গড়ানো হয় নাই । অথচ আজ তাহাকে গভরা গহনা ত পরাইয়া দেওয়! চাই । ম৷ জ্যেfঠর গহন তাহার গায়ে বড় হয় ; স্বতরাং কিছু কিছু লাবণ্যর বিবাহের গহনা কিছু বা ময়নার মামাবাড়ী হইতে ধার করিয়া আনা গহনায় আজকার কাজ চালানো হইতেছিল । সেগুলি সবই প্রায় তাহার অঙ্গে একটু বেমানান দেখাইতে ছিল । গৌরী প্রথম হইতেই সেখানে দাড়াইয়া ময়নার স{জ সজ্জা দেখিতেছিল ও তাহার মা তাহাকে তিন চার বার ডাক দেওয়াতে ও, সে নড়ে নাই। বাকী দু তিন বার কাজের ফরমাস করিয়াও দেখিলেন সে তাহ অন্যের ঘাড়ে চাপাইয়া দিয়া আবার তখনই ফিরিয়| আসিল । ময়নার সাজ যখন প্রায় শেষ হইয়া গিয়াছে তখন লাবণ্য তাহাক খাটের উপর বসাইয়া ঘরের বাহিরে দাড়াইয়া দেখিতেছিল । হঠাৎ গৌরী ঘরের বাহিরে চলিয়া গেল । তারপর একটু পরেই ব্যস্তভাবে ফিরিয়া আসিয়া তাড়াতাড়ি ছুটিয়া গিয়া ময়নার হাত দুইটা চাপিয়া ধরিল । দুই তিন জন “হঁ৷” “ই” করিয়া উঠিল, “এই গৌরী, কি কচ্ছিস্ ওখানে ? সরে যা ওখান থেকে, সব মাটি করিস না।” গৌরী সরিল না, কেবল বলিল, “দেখ না, ভালই করছি।” সে টান মারিয়া ময়নার হাতের ঢিলাবাল জোড়া খুলিয়া ফেলিয়া নিজের জড়োয়ু বলি জোড়। তাহাকে পরাইয়া দিল এবং মুক্তার একছড় সরস্বতী-হার তাহার গলায় ঝুলাইয়া দিল । ময়নার মামী ও মাগী আজ এই সম্পূর্কে আসিয় 證@-8 জীবনদোলা 83 ছিলেন । গৌরীর বিষয়ে সাবধান হওয়া তাহাদের অভ্যাস নাই। তাহারা দুইজনে চীৎকার করিয়া উঠিলেন, “আ পোড়াকপালী মেয়ে, কি কবৃলি ?” গৌরী চমকিয়া উঠিয়া স্তম্ভিত হইয় তাহদের মুখের দিকে তাকাইয়া রহিল । লাবণ্য মৃদু ভংসনার স্বরে বলিল, “গৌরী, কেন তুমি সবতাতে হাত দিতে যাও ! ছেলে মহিষ য। পার না তা করতে গিয়ে অন্যের কাজ বাড়িয়ে দেওয়া!” লাবণ্যর কথার মুরে একটু সহজ ভাবের চিহ্ন পাইয়া গৌরী সাম্‌লাইয়া লইয়া বলিল, “কেন, কি খারাপ করেছি ? তোমরা ঢাকের মত গয়না পরাচ্ছিলে, আমি আমার কেমন ভাল গয়না পরিয়ে দিলাম !” ময়নার মা রাগ চাপিতে না পারিয়া বিরক্তকণ্ঠে চীৎকার করিয়া উঠিলেন, “ভাল গয়না না ছাই গয়না ।” বলিয়া টান দিয়া গৌরীর গহনা খুলিয় থাটের উপর ছড়িয়া ফেলিয়া দিলেন । ময়ন বেচারী ভয় পাইয়া কাদিয়া ফেলিল । এমন করিয়া সকলের কাছে কঠিন কথা শোনা গৌরীর জীবনে কখনও ঘটে নাই । সে অভিমান ভরে গহনাগুলা মেঝেতে আছড়াইয়া দিয়া ছুটিয়া গিয়া রান্নাঘরে মা’র ঘাড়ের উপর পড়িয়া আক্ৰোশে অপমানে ফুলিয়া ফুলিয়া কঁাদিতে লাগিল । ম। অনেক করিয়া সাস্তুনা দিয়া যখন আসল কথাটি শুনিলেন, তখন তিনিও বলিলেন, “আ আমার পোড়া কপাল, এই করতে তুমি আমার চাবি টেনে নিয়ে গেলে ? কেন বাছ পরের কাজে অবুঝের মত হাত দিতে যাস ! তোকে নিয়ে আমার কি দুৰ্গতি যে হবে ?” গৌরী অবাক হইয় গেল। আজ সকলেই তাহার উপর এমন বিরূপ কেন ? ময়নার বিবাহ হইবে বলিয়া সে কি এমনই একটা হেয় জিনিস হইয় পড়িয়াছে। তাহার ও ত বরং বেশী ঘটা করিয়াই বিবাহ হইয়াছিল। না ইহার ভিতর আর কিছু আছে। গৌরী কাদিয়া দিন কাটাইল । গৌরীর মা কিছু বলিতে পারিলেন না । কেবল চোখ মুছিয় তাহার গায়ে হাত বুলাইতে লাগিলেন । যথাকালে ডবল ব্রেষ্ট সার্টের উপর হীরার বোতাম লাগাইয়া দুইহাতে চারিট হীরার আংটি পরিয়া এবং