পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৭৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

سر 9 ج6 প্রবাসী-আষাঢ়, ১৩৩৩ [ ২৬শ ভাগ, ১ম খণ্ড । ভারতীয় মুসলমানদের অধিকাংশ . তাহাদের বংশধর । যাহারা উল্লিখিত কোন কারণে হিন্দু-ধৰ্ম্ম ত্যাগ করে নাই, তাহাদের বংশধরেরা হিন্দুই আছে। অতএব, বর্তমান সময়ে ভারতীয় মুসলমানেরা যদি বলে, “হিন্দুরা সাত শত বৎসর আমাদের গোলাম ছিল,” তাহা হইলে তাহা একটা হাস্যকর ভ্রম মাত্র। আসল কথা এই, যে, যে-সব প্রদেশ বিদেশী মুসলমানের জয় করিয়াছিল, তাহার কতক অধিবাসী মুসলমান হইয়াছিল, কতক হয় নাই। কিন্তু ইহার দ্বারা প্রমাণ হয় না, যে, যাহারা মুসলমান হইয়াছিল, তাহীদের বংশধরেরা শ্রেষ্ঠ । ছু একটা দৃষ্টান্ত দিলে বিষয়টা পরিষ্কার বুঝা যাইবে। বাংলা দেশে কৃষ্ণমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়, প্যারীমোহন রুদ্র, লালবিহারী দে, কালীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রভৃতি খৃষ্টীয় ধৰ্ম্ম অবলম্বন করেন । র্তাহারা যদি আপনাদিগকে, শুধু ইংরেজদের সধৰ্ম্মী মনে না করিয়া, স্বজাতি স্বতরাং বিজেতাও মনে করিয়া হিন্দুদিগকে বলিতেন, “তোমর। ১৭৫৭ খৃষ্টাব্দে পলাশীর যুদ্ধের পর হইতে দেড় শত বৎসর ধরিয়া আমাদের গোলামী করিতেছ,” তাহা হইলে তাহদের সেরূপ কথায় ঠিক তেমনি হাস্যকর অজ্ঞতা ও নিবুবুদ্ধিত প্রকাশ পাইত, যেমন হিন্দুবংশজাত ভারতবিজয়াভিমানী মুসলমানদের কথায় প্রকাশ পায় । কিন্তু স্বথের বিষয়, ভারতীয় খৃষ্টিয়ান সমাজের নেতাদের বুদ্ধি, শিক্ষা এবং স্বদেশপ্রেম থাকায় তাহার এরূপ কোন হাস্যকর বেকুবী প্রকাশ করেন নাই । অবশ্ব, ভারতীয় মুসলমানদের ভ্রম হইবার ওঁ ভারতীয় ঋষ্টিয়ানদের ভ্রম ন হইবার দু একটা অন্য কারণও আছে। কেহ মুসলমান হইলে তাহার নাম একেবারে বদলাইয়া যায়। যে ব্যক্তি হলধর রায় ছিল, তাহার নাম আবদুল হামিদ বা আবদর রহমান হইবার পর সে যে তুরস্কের সুলতান আবদুল হামিদ বা আফগানিস্থানের আমীর আবদর রহমানের কিম্বা অন্য কোন বিদেশীর জ্ঞাতি, এরূপ ভ্রম হওয়া অসম্ভব নহে। কিন্তু কালীচরণ বা প্যারীমোহন নাম থাকিতে কেহ ঐ ঐ নামধারীদিগকে রাজা জর্জের বা অন্য কোন পাশ্চাত্য বিদেশীর জ্ঞাতি মনে করিবে না। আর-একটা কারণ এই যে, মুসলমানদের নিজের মধ্যে খৃষ্টিয়ানদের চেয়ে বর্ণভেদ ও জাত-বিচার কম থাকায়, একজন ভারতীয় মুসলমানের বিদেশী বংশজাত বলিয়া পরিচয় দেওয়া যত সহজ, একজন ভারতীয় ঋষ্টিয়ানের পক্ষে ইউরোপীয় বলিয়া পরিচয় দেওয়া তত সহজ নহে । অবশ্ব ভারতীয় কোন-কোন খষ্টিয়ান ইউরোপীয় নাম লইয়াছে বটে, এবং কাহারও কাহারও দেহে ইউরোপীয় রক্ত ও আছে । কিন্তু তাহারাও ভারতবিজেতা বলিয়া গৰ্ব্ব করিলে লোকে তাহাদিগকে চুণাগলীর ফিরিঙ্গীদের সমশ্রেণীস্থ বলিয়া মনে করিবার সম্ভাবনা থাকায়, অন্ততঃ ইউরোপীয় নামধারী শিক্ষিত কোন ভারতীয় খৃষ্টিয়ান বিজেতৃত্বের দাবী করে না । ভারতীয় মুসলমানদের মধ্যে যাহাঁদের বংশে কোন বিদেশী রক্তের সংস্রব আছে, হিন্দুদিগকে নিজেদের পূৰ্ব্বতন গোলাম মনে করিবার তাহাদের সেইরূপ অধিকার আছে, যেমন ইউরোপীয়নামধারী অংশতঃ-ইউরোপীয়-বংশজাত ফিরিঙ্গী বা দেশী খষ্টিয়ানদিগের বর্তমান সময়ে হিন্দুদিগকে গোলাম মনে করিবার অধিকার আছে । ভারতীয় মুসলমানেরা যেন মনে না করেন, যে, আমরা তাহাদিগকে প্রধানতঃ ভারতীয় বংশজাত বলিয়া প্রমাণ করিতে চেষ্টা করিয়া তাহণদের সম্মান নষ্ট করিতে চাহিতেছি, কিম্বা তাহাদিগকে নিজেদের সমশ্রেণী:স্ত প্রতিপন্ন করিয়া নিজেরা গেীরষান্বিত হইতে চাহিতোছ। কারণ, নিরপেক্ষ বিদেশীরা বলিতে পারিবেন, যে, মোটের উপর ভারতবর্ষ আরব, পারস্ত, তুরস্ক বা পৃথিবীর অন্য কোন দেশ অপেক্ষা কম সম্মানের পাত্র নহে । ভারতবর্ষের দোষ ক্রটি কলঙ্ক আছে, ভারতবর্ষ এখন পরাধীন ও অধঃপতিত । কিন্তু কোন দেশের ৰিচার করিতে হইলে তাহার অতীত ও বৰ্ত্তমান উভয়ই বিবেচনা করিতে হইবে । ভবিষ্যতের কথা স্বতন্ত্র। কিন্তু তাহ বিবেচনা করিলেও, ভারতবর্যের ভবিষ্যৎ কোন প্রকারেই উজ্জল মনে করা যাইতে পারে না, ইহা কে বলিতে পারে ?