পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৬৩২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৪র্থ সংখ্যা } সাজাইয়া বিভিন্ন গ্রন্থাকারে পরিণত করিয়া এবং অভিনব অভিব্যঞ্জক নামকরণ করিয়া রবীন্দ্রনাথের কাব্যগ্রন্থকে যেরূপ দিয়াছেন তাহ এক আশ্চৰ্য্য প্রকারের কাব্যব্যাখ্যা, এক নিগুঢ় ব্যঞ্জনাপূর্ণ interpretation—যাহার শতাংশের একাংশ ব্যাখ্যাও আজ পর্য্যস্ত এদেশে হয় নাই। রবি-বাবুর কাব্যের যদি প্রকৃত ব্যাখ্যা বিচার কিছু হইয়া থাকে তাহ মোহিত-বাবুর এই সংস্করণ । কবির মূল ‘সোনার তরী নামক গ্রন্থ যাহা এখন ইণ্ডিয়ান পাবলিশিং হাউস্ বিক্রয় করিয়া থাকেন, তাহার সঙ্গে মোহিত-বাবুর ‘সোনার তরীর তুলনা করিলেই মোহিতবাবু কি ভাবের কাজ করিয়াছেন তাহার একটা স্পষ্ট ধারণ হইবে। মূল ‘সোনার তরীর’ এই নাম হওয়ার একমাত্র কারণ এই গ্রন্থের প্রথম কবিতাটিই সেই অতি পরিচিত ‘সোনার তরী’। আর শেষ কবিতাটিতেও একখানি সোনার তরীর ব্যাপার। সুতরাং এই খণ্ডের এই নামের বিশেষ কোনোই সার্থকতা নাই। সাদৃশ্যবিষ্টীন বহু ভাবের বহু রূপের কবিতা বিশৃঙ্খলাভাবে এই গ্রন্থে সন্নিবেশিত আছে । কিন্তু মোহিত-বাবু যে কবিতারাজির নাম দিয়াছেন ‘সোনার তরা’, তাহা আগাগোড়াই সোনার তরী, তিনি সোনার তরী কথাটির একটি বিশেষ রসাত্মক অর্থ ধরিয়াছেন এবং সেই অর্থ রবি-বাবুর কোন কোন কবিতায় অাছে তাহা সন্ধান করিয়া বাহির করিয়াছেন এবং সেইসমস্ত কবিতা সাজাইয় রস-সামঞ্জস্য-পূৰ্ণ ‘সোনার তরী" গ্রন্থ গ্রথিত করিয়াছেন । সুতরাং পরপর কবিতাগুলি পড়িয়া যাইতে যাইতে বুঝিবার বিশেষ চেষ্টা না করিলেও একটা অর্থ এবং একটা ভাবের আভাস চিত্তে জাগিয়া উঠে। ইহা কি এক সুনিপুণ স্বন্দর জিনিষ নয় ? এই প্রকার সৰ্ব্বত্রই দেখা যায়। বিশেষতঃ প্রথমকার দিক্ দিয়া । বহুংখ্যক কবিতা বাছিয়া বাছিয়া সজ্জিত করিয়া "যাত্রা, ‘নিষ্ক্রমণ,’ ‘হৃদয়ারণ্য’ প্রভৃতি নাম দিয়া যে প্রথমকার খণ্ডগুলি তিনি গ্রথিত করিয়াছেন তাহাতে সেই যুগে— সেই ২৫ বৎসর পূৰ্ব্বে, রবি-বাবুর কবি-প্রতিভার যাহা ক্রমবিকাশ-ধারা, তাহা তিনি আশ্চৰ্য্য স্বন্দর ভঙ্গীতে বুঝাইয়া দিয়াছেন। তাহা লক্ষ্য না করিয়া এই ক্রম কাব্য-সাহিত্য সমালোচনা (Ե-Տ বিকাশ বুঝাইবার জন্য কতই যে ব্যর্থ-কতই যে হাস্যম্পদ প্রয়াস হইয়াছে তাহার ইয়ত্ত নাই । প্রথম প্রথম র্যাহার রবি-বাবুর কাব্য অধ্যয়ন করিতে আরম্ভ করেন র্তাহাদের কাছে এই কাব্য এক বিশাল দিগ দিগন্তহীন ভাবারণ্য বলিয়াই মনে হয় এবং অনেকের কাছে শেষপৰ্য্যন্ত তাহাই থাকে। কিন্তু মোহিত-বাবু এই ভাবারণ্য ও রূপারণ্যকে শত শত সুশৃঙ্খল স্থবিন্যস্ত পুপবীথিকা, তরু-কুঞ্জ ও লতাবিতানে পরিণত করিয়া দিয়াছেন । কাব্য-সৌন্দৰ্য্যকামনের ভ্রমণবিলাসিগণ অনায়াসে মোহিত-বাবুর এই মুচার-বিন্যাস বিপুল কাননে ভ্ৰমিয়া ভ্ৰমিয়া সহস্ৰ সহস্ৰ কুস্কমবিকাশ, ললিত লতাবলীর আন্দোলন-লীলা এবং শতশত শ্যামল নিকুঞ্জ-শোভা উপভোগ করিতে পারেন। সহজ কথায়, মোহিত-বাবুর সংস্করণের পাতা উন্টfইয়৷ গেলে রবি-বাবুর কাব্য সম্বন্ধে যে-জ্ঞান হয়, পাবলিশিং হাউসের যাহা মৌলিক সংস্করণ তাহ দিবানিশি আওড়াইয়াও সে-জ্ঞানটুকু বহুদিনেও লাভ করা ছুক্ষর । তারপর মোহিত-বাবু তাহার ভূমিকায় বিশেষ ভাবে একাংশে যে সমালোচনাটুকু করিয়াছেন তাহাতে তিনি রবীন্দ্রনাথের রোমাণ্টিক কাব্যবলীর যাহা মূল স্বত্র তাহাই ধরাইয় দিয়া গিয়াছেন । এবং এই কাব্য অনুশীলন করিতে হইলে কোন পথে অগ্রসর হইতে হইবে তাহা ও তিনি স্পষ্ট করিয়া নির্দেশ । করিয়াছেন। সেই স্বত্রের এবং সেই পথের পরবর্তী কোনো সমালোচকই কোনো খবর পান নাই । আমাদের দেশের লোকের কাব্য-সাহিত্য-বোধের কি নিদারুণ দরিদ্রতা—তাহার একটি প্রকৃষ্ট প্রমাণ । রবি-বাবুর কাব্যের কত কি সংস্করণ বাহির হইতেছে, কিন্তু এই যে সংস্করণটির কথা বলিলাম, ইহা পরিবৰ্দ্ধিত Aআকারে অর্থব যেমন আছে তেমনি পুনমুদ্রিত করা আর কেহ অfবশ্যক মনে করেন না । আসল কথা, ঐ সংস্করণটি যে বাংলা কাব্য-সাহিত্য-ভাণ্ডারের একটি অমূল্য সম্পত্তি তার বিন্দুমাত্র জ্ঞান প্রকাশকদের নাই । মোহিত-বাবুর সংস্করণটি এখন সম্পূর্ণরূপে দুপ্রাপ্য হইয়া