পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৬৭৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

W90e দেখতে এসেছিল। তা এই একরত্তি মেন্থে গলা টিপ লে দুধ বেরোয়, তিনি বলেন কিনা ওকে বিয়ে করবেন না !” সবাই খুব জোর গলায় নন্দার অন্যায়টার প্রতিবাদ করতে স্বরু করলেন। রমা কিন্তু নন্দার অপরাধীর মতন মানু মুখ দেখে ব’লে উঠল—“আহা—ছেলেমাস্থ্য, বুদ্ধি নেই তাই বলেছে, তাতে আর কি হয়েছে ? হাজার হোক্‌ বর ওর চাইতে পয়ত্রিশ বছরের বড় তো ! তাতেই ওর পছন্দ হয়নি।” রমার মনটি ছিল বড় সরল আর কাউকে দুঃখ পেতে দেখলে সে সহজেই মনে ব্যথা পেত । হেমাঙ্গিনী গালে আঙুল দিয়ে বললে—“তুই যে বউ অবাক কবুলি লো—মেয়ে-মানুষ আবার বর পছন্দ করবে কি ? কোন দিন শুনব বলছে—আমি স্বয়ম্বর। হ’ব । তোর মেয়েদের ভাই তুই তাই করিস্—পরের মাথায় কাটাল ভেঙে খেতে সাধ কেন ?” নবীনের দিদি বললে—“ওর সামনে অমন ক’রে বল। তোর ভাল হ’ল না, উষির মা-ও একে তো ধিঙ্গীমেয়ে, আস্কার পেয়ে আরও মাথায় চড়বে। বাপের তিনচারটে মেয়ে, পয়সা-কড়িরও তেমন জোর নেই ; দোজবরে তেজবরে যার হোক গলায় গেথে পার করতে না পারলে জাত জন্ম দুই-ই খোয়াবে যে মেয়ে-মানুষের বাড়, কলা-গাছের বাড় , দুদিনেই মাগী হ’য়ে উঠবে তখন ঠেকাবে কে ?” রমা বেচারী আর জবাব না দিয়ে চfল মাপার দিকে বেশী ক’রে মন দিলে, সেদিন এদের আসবার একটু আগে প্রিয়ও এ বাড়ীতে বেড়াতে এসেছিল । সে রমার ঘরের মধ্যে ব’লে রমার ছোট খোকার জন্যে এক জোড়া পশমের মোজা বুনছিল, ইদানিং মেয়েরা তাকে পুলিশ-গিরি ব’লেই ডাকৃত । রমাকে নিরুত্তর দেখে মেয়ের ঘরের মধ্যে এসে প্রিয়কে পেয়ে বেশ খুলী হ’য়ে উঠল। হেমাজিনী বললে, “কি গো পুলিশ-গিরি কি হচ্ছে ?” . প্রিয় বসেছিল ; এদের দেখে সসন্ত্রমে উঠে দাড়িয়ে সতরঞ্চিখানা একটু ভালে ক’রে বিছিয়ে সবাইকে বসতে বললে। নবীনের দিদি বললে, “কি ভাই এখানে বেড়াতে জাগ্ৰায়, ত বেশ সময় হয়েছে দেখছি আর আমাদের প্রবাসী—শ্রোবণ, ১৩ee [ ২৬শ ভাগ, ১ম খণ্ড বাড়ী যাবার কথা হ’লে তোমার সময়ই হয় না।” প্রিয় । বললে, “আজ সময় ক’রে একটু এসেছি নইলে উধীর ম৷ কিছুতেই ছাড়েন। উনি হু তিন দিন গিয়েছিলেন।” হেমাঙ্গিনী চোখ ঘুরিয়ে বললে, “আর আমি যে পাচ সাতবার গিয়েছি ভাই ; আমাদের বেলায় বুঝি তোমার ধারাপাত ভুল হ’য়ে যায় ?” রাধারাণী বললে, “এ সোজা কথাটা আর বুঝি না লা ? আমাদের কোটা-বালাখানা ও নেই, গায়ে পাঁচখান। সোন-দানাও নেই ।” প্রিয় এসব টকা-টিপ্লনির একটি ও জবাব না দিয়ে মূখ নীচু ক’রে রইল। বোবার ত শত্র নেই, এক্ষেত্রে চুপ করে থাকাই ভাল। আসল কথা, প্রথম প্রথম সে দু-চার বাড়ী যাওয়া-আসা ক’রে দেখেছে যে এইসব মেয়ে-মহলে নিছক্‌ যে-ধরণের আলাপ-চর্চা হয় তা র ধাতে সে-সব আদবেই সইবে না । তার উপর কেদার এ-সব ভাল ও বাসে ন; , কাজেই সে সহজে আর কারু বাড়ী যেতে রাজী নয় । কিন্তু সে কথা তো আর তাদের বলা চলে না ! অবশ্য তার বাড়ীতে কেউ প। দিলে তাদের অভ্যর্থনার ক্রটি সে কিছুই করে না । কিন্তু তাদের রসিকতার সমান সরস উত্তর দেবার মতন বাকৃপটুতা তার মোটেই ছিল না ব’লে তার নীরবতাটা এরা “দেমাকৃ” নামেই সৰ্ব্বত্র চালিয়েছে। কথার ঠোকাঠুকি জমূল না দেখে হতাশ হয়ে অতঃপর হেমাঙ্গিনী তাস খেলবার প্রস্তাব নিয়ে রমাকে ডাক দিলেন। রমা এসে বললে, “আজ ভাই বড় সময় কম— মুনিষদের পাওনা ধান আজই সব মেপে দিতে হবে। ওদিকে চাল-কোটাও শেষ হয়নি।” প্রিয় বললে, “আমি ভাই খেল ভাল জানি না । তা ছাড়া এখুনি আমাকে বাসায় ফিরতে হবে। বাৰু মফঃস্বলে গিয়েছেন, দুপুরেই আলবার কথা ।” অগত্য। মেয়ের মনঃক্ষুণ্ণ হ’য়ে খেলুড়ীর সন্ধানে অন্ত বাড়ী প্রস্থান করলেন। সকলে চ'লে যেতেই নন্দা প্রিয়র ছোট খোকাটিকে কোলে ক'রে এসে বললে, “পুলিশমালি, তোমার খোকা ঘুম থেকে উঠে তোমায় না দেখে কাদছিল, জয়৷ তাই দিয়ে গেল।”