পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৭৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১ম সংখ্যা ] বীরভূমের তসর-শিল্প (సి পরনের উপযোগী শাড়ীর পাড়গুলিও স্বদেশজাত রঙ হইতে প্রস্তুত—ব্যবহারে উহ। কখন বিবর্ণ হইয়া যায় না । থান হইতে কোট, পিরাণ, ফ্রক ইত্যাদি নানাবিধ জিনিষ প্রস্তুত হইতে পারে। ঐসমুদায় প্রস্তুত করিবার পূৰ্ব্বে থানটিকে একবার উত্তমরূপে ধোলাই করাইয়৷ লইলে কোট প্রভৃতি জিনিষগুলি আর মাপে থাটে হইবার সম্ভাবনা থাকে না । এক থান ( দশ গজ বিশ হাত ) তসরের দাম আঠার টাক হইতে পঞ্চাশ টাক। পৰ্য্যন্ত হয় । তবে পচিশছাব্বিশ টাক মূল্যের থানগুলি সকলেই পছন্দ এবং ব্যবহার করেন। বীরভূম-প্রদর্শনী এবং অন্যান্য প্রদর্শনীতে বীরভূমের তসর অন্যান্য দেশের তসরকে পরাজিত করিয়াছে। এখানকার তত্ত্ববায়ুগণ প্রদর্শনীতে বহুবার বহু মেডেল, সার্টিফিকেটু ইত্যাদি পুরস্কার পাঠয়াছে । স্থত তৈয়ারি থাকিলে একজন লোক অবসর সময় বাদ দিয়া তিন চারি দিনে একটি থান প্রস্তুত করিতে পারে। একটি ঐ মাপের থান তৈয়ারির জন্য প্রায় এক কাহল ( ১২৮০টি ) গুটির প্রয়োজন হয় । একটি থানের স্বল তৈয়ারি পয্যন্ত পরচ হয় অন্ততঃ পুনর-ঘোল টক ; বাকী টাকা তাহার পারিশ্রমিক। এই হিসাবে স্ত্রীপুরুষ দৈনিক গড়পড়তা উপায় করে দেড় দুষ্ট টাকা । অর্থাৎ মেয়ের সাধারণতঃ উপায় কবে দৈনিক আট আনা , দশ আন ; আর পুরুষরা উপায় করে অন্ততঃ এক টাকা, পাচ সিক । ইহা আজকালকার যে-কোন উচ্চশিক্ষিত কেরাণীর পক্ষে দুর্লভ বলিলে অত্যুক্তি হয় না । অথচ ইহাতে গোলামি নাই। শিক্ষিত কেরাণীকুল অপেক্ষ অশিক্ষিত এই তন্তুবায়ুগণ সৰ্ব্বপ্রকারেই সুখী । ইহার তাহাঁদের অপেক্ষ উপায়ও করে বেশী এবং থাকে ও বেশ সুখে-স্বচ্ছন্দে। আজকাল চাকুরীর ঘেরূপ অবস্থা, তাহাতে এইসমস্ত শিল্পের দিকে মনোযোগী হইলে যে আমরা দু-পয়সা উপার্জন করিয়া অন্নের সংস্থান করিতে পারি, উপরস্তু দেশেরও কাজ করা হয়, তাহ বোধ হয় বলিয়া বুঝাইবার প্রযোজন নাই । শিক্ষিতের পক্ষে এই কাৰ্য্য শিক্ষা করিতে বেশী দিন লাগিবে না বলিয়া ভরসা হয়। স্বাধীনভাবে জীবিকা অর্জন করিবার আকাঙ্ক্ষা ব| স্বদেশীকে প্রকৃত স্বদেশীভাবে গ্রহণ করিবার আগ্রহ থাকিলে, স্বদেশী শিল্পকে উন্নত করাই প্রকৃত পথ. শিল্প, ব্যবসায়, বাণিজ্য প্রভৃতিতে দেশ যত উন্নত হয়, এমন আর কিছুতেই হয় না। অপর দিকে মন না দিয়৷ বিদ্বান, বুদ্ধিমান, কৰ্মিষ্ঠ এবং চরিত্রবান ব্যক্তি যতই এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করিবেন, ততই শিল্পের ও দেশের দ্রুত উন্নতির সম্ভাবনা । বীরভূমের এইসমস্ত স্থানে তসর ভিন্ন সাদা স্থতার কাপড়, গাম্‌ছ', থান, রঙীন চাদর ইত্যাদিও প্রচুর পরিমাণে প্রস্তুত হইয়া থাকে। র্তীতের কাপড়গুলি বহুদিন-স্থায়ী হয় ; উহা জীর্ণ হইতে অন্ততঃ দেড়-দুই বৎসর সময় লাগে । ভারতবর্য হইতে ইটালি, ফ্রান্স,ইংলণ্ড অস্ট্রেলিয়া প্রভৃতি দেশে মূনাধিক দুই-তিন হাজার মণ তসর রপ্তানি হইয় থাকে। বাংলা, বিহার, উড়িষ্যা, মধ্যভারত এবং মান্দ্রাজ অঞ্চল হইতেও তসর-গুটি রপ্তানি হয়। বিহার ও বাংলা হইতে তসরের কাপড় কিয়ং পরিমাণে ভারতের অন্যান্য দেশে এবং ইউরোপে রপ্তানি হয়। বাংলায় বাকুড়া, বীরভূম, মেদিনীপুর, বৰ্দ্ধমান ও হুগলী জেলার স্থানে-স্থানে তসরের স্থতা প্রস্তুত ও বস্ত্ৰ-বয়ন হইয় থাকে। গিরিধি, সাওতাল পরগণা, সিংহভূম, মানভূম, ময়ুরভঞ্জ প্রভৃতি স্থান হইতে তন্তুবায়গণ তসরের স্থতার জন্য গুটি সংগ্ৰহ করিয়া থাকে । পূৰ্ব্বে বীরভূম হইতে কোটের উপযোগী তসর-থান ইউরোপে ও অস্ট্রেলিয়া প্রভৃতি স্থানে প্রচুর-পরিমাণে রপ্তানি হইত। কলিকাতায় এই তসরের ব্যবসা পরিচালনজন্য বড়-বড় ‘হাউস’ ছিল । সেই ‘হাউসে’র কৰ্ম্মচারিগণ বীরভূমের করিধা, তাতিপাড়, বীরসিংহপুর প্রভৃতি স্থানে আসিয়া তন্তুবায়দিগকে দাদন করিত ; এবং তাহাদিগের নিকট হইতে অধিকাংশ তসরই আদায় করিয়া লইত । এখন বিশ-পচিশ বৎসর হইতে তসরের এই চালানী কাবুবার এক প্রকার বিলুপ্ত হইয়াছিল। এই ব্যবসায় এতদিনে আবার যেন জাগিয়া উঠিবার সম্ভাবনা দেখাইতেছে। কারণ স্থানীয় কতকগুলি ভদ্রসন্তান পূৰ্ব্বোক্তরূপ