পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮৬৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৫ম সংখ্যা ] মৃত্যু-দূত Փ (: বললে, আমি রাস্তায় গিয়ে ছেলেদের ডেকে আনছি। তার কাছাকাছি কোথাও খেলা করছে। আমার গ বেসে সে চলে গেল ; তার ছেড়া জামা আর শরীর ছুয়ে গেল। আমি হঠাৎ বিহবলভাবে হাটু গেড়ে বসে তার জামার কোণে মুখ ঢেকে নিঃশবো কাদতে লাগ লাম— কথা বলবার শক্তি আমার ছিল না। এই মেয়েটির উপর যে অন্যায় আমি করেছি এই সামান্য অমুতাপে তার প্রতীকার হয় না । সে যেন আমাকে লক্ষ্য করে নি এই ভাব দেখিয়ে চ’লে গেল। প্রথমটা ভারী অবাক হ’লাম। পরে মনে হ’ল, সে আমাকে ক্ষমা করেনি। যে তার জীবনকে এমনভাবে নষ্ট করেছে তার সঙ্গে কথা না বলাট। তার বিশেষ অন্তায় হয়নি । “হতভাগিনী ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার আগেই মহিলাদের একজন তাকে ডেকে বললেন, যে, ছেলেদের ডাকুবার আগে আর-একটা ব্যাপারের নিপত্তি করতে হবে । তিনি হাত-বাক্স থেকে একটা কাগজ বের করে প’ড়ে শোনালেন । সেট একটা ছাপা অসুমতি পত্র, তাতে এই মৰ্ম্মে লেখা ছিল যে, যতদিন তাদের বাড়ীতে যক্ষ্ম’র ছোয়াচ থাকবে ততদিন এই ছেলেদের বাপ মা তাদিকে আশ্রম-কর্তৃপক্ষের হাতে সপে দিচ্ছেন। এই কাগজে ছেলেদের বাবা ও মা দুজনেরই সই চাই । “ঘরটির অন্যদিকে আর-একটা দরজা ছিল—সেদিক দিয়ে ডেভিড ঘরে ঢুকূল। মনে হ’ল যেন সে দরজার পাশে দাড়িয়ে ঘরে ঢুকবার স্বযোগ খুজছিল। তার গায় সেই শতাচ্ছন্ন জামা-চোখে সেই শয়তানী দৃষ্টি। তাকে দেখে মনে হ’ল যেন সমস্ত ঘটনাটি সে বেশ উপভোগ করছে—যেন এই দুঃখ-যন্ত্রণার দৃশ্বে সে খুলী হয়েছে। সে যে তার ছেলেদের কত ভালবাসে, একজনকেই হাসপাতালে পাঠিয়ে দিয়ে যা কষ্ট হচ্ছে অন্য দুজনকে সে কিছুতেই ছাড়তে পারবে না—ইত্যাদি কত কি ব’লে যেতে লাগল। “ভদ্রমহিলা দু'জন তার কথা বিশেষ মনোযোগ দিয়ে না শুনে শুধু এই মাত্র বললেন যে, ছেলেদের দূরে না পাঠালে তাদিকে বঁচিয়ে রাখা স্থঙ্কর হবে। ডেভিডের স্ত্রী ঘরের দেওয়াল ঘেসে পাথরের মতন নিশ্চল হ’য়ে তার স্বামীর দিকে একদৃষ্টে চেয়েছিল, শিকার যেমন আৰ্ত্ত-ব্যথিত দৃষ্টি নিয়ে শিকারীর দিকে চায়। স্পষ্ট বুঝতে পারলাম যে, যতটা অন্যায় করেছি বলে ভাবছিলাম তার চাইতে ঢের বেশী অন্যায় করেছি। যেন স্ত্রীর ওপর ডেভিডের একটা গভীর ঘৃণা আছে। সে আমার কথায় স্বর্থে-স্বচ্ছন্দে সংসার করবার আশায় তার স্ত্রীর সঙ্গে মিটমাট করতে চানি ; শুধু স্ত্রীর ওপর অত্যাচার করবার সুবিধা পাবার জন্যেই আবার সংসার করছে। “পিতার স্নেহ সম্বন্ধে সে ভদ্রমহিলাদের মস্ত একটা বক্তৃতা দিলে। র্তার বললেন যে, ডাক্তারের পরামর্শ মত চ'লে সে পিতৃস্নেহের পরিচয় দিক । ছেলেদের কাছে রেখে ব্যারাম ধরিয়ে দেওয়াট। পিতৃস্নেহ নয়। তারা বাড়ীতে থাকুলে তাদের ছোয়াচ লাগবেই। ডেভিডের মনের ক্রর অভিসন্ধি ওঁর। টের না পেলেও আমি তা স্পষ্ট অনুভব করলাম, ছেলেদের মঙ্গলে তার কিছু ধায় আসে না, আসলে সে তাদের কাছে রেখে কষ্ট দিতে চায়। “স্বামীর এই দুরভিসন্ধি বুঝতে পেরে স্ত্রী উন্মত্তের মত ভয়ানক আৰ্ত্তনাদ ক’রে উঠল, ‘ও খুনে, আমাকে ও ছেলেদের একেবারে মেরে না ফেলে ও ছাড়বে না। এমনি ক’রেই আমার ওপর ও শোধ নিচ্ছে।” “ডেভিড হলম বিষম বিরক্তিতে তার দিক হ’তে চোখ ফিরিয়ে বললে, ‘মোট কথা ও কাগজে আমি সই করছি না । মহিলা দু’জন রাগ ক’রে অনুরোধ করে তাকে বোঝাতে চেষ্টা কবুলেন। ডেভিডের স্ত্রী তাকে উত্তেজিত হ’য়ে গালাগালি দিতে লাগল। ডেভিডের মন গলল না। সে শান্ত নিশ্চিন্তভাবে দাড়িয়ে রইল। বললে, ছেলেদের না হ’লে তার চলবে না। সব শুনে যন্ত্রণায় আমি অধীর হয়ে উঠলাম। মহিলা দু’জন রাগে লাল হ’য়ে উঠলেন, ডেভিডের স্ত্রী অকথ্য ভাষায় তাকে গাল দিতে লাগল ; আমি দুঃখে অভিভূত হ’য়ে কঁদতে লাগলাম। ওরা ত কেউ ওকে ভালবাসে না, আমি ভালবাসি ব’লেই ব্যথা পেলাম। ঘরের কোণ থেকে ছুটে গিয়ে তাকে অনুরোধ করবার ইচ্ছা হ’ল, কিন্তু আমি নড়তে পারলাম না। কে যেন আমাকে ঐ জায়গায়