পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৯৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

tյՊեր প্রবাসী—আশ্বিন, ১৩ee [ २७* छांनं, >म थe খেলা খেলিয়া তাহার মনটাকে অনেকখানি হাল্কা করিয়া দিয়া গিয়াছিল। হরিকেশব দূর হইতে গৌরীকে জাগিয়া উঠিতে দেখিয়াই তাহার কাছে আসিয় তাহার এলোমেলো খোপাটায় একটা নাড়া দিয়া বলিলেন, “কিরে, এতক্ষণে তোর সকাল হ’ল ? বর্ষ পড়েছে ব’লে বুঝি আর সকাল বেল উঠতে নেই। আজ ত বেশ পরিষ্কার ছিল, ভোরে উঠলে রেললাইন পার হয়ে কত দূরে বেড়াতে যেতাম ! সেই লাট সাহেবের বাড়ী-টাড়ী সব ছাড়িয়ে !” তাড়াতাড়ি চোখ-মুখ ঘষিয় সজাগ হইয়। উঠিয়৷ পিতার দিকে ভাল করিয়া চাহিয়া গৌরীর মনে পড়িয়া গেল, রাত্রে সে ত এখানে শোয় নাই। কখন যে কি করিয়া সে এখানে আসিয়া হাজির হইয়াছে তাহা তাহার কিছুই মনে নাই। সে বলিল, “কালকে কখন ঘুমিয়েছি তাই ভুলে গেছি ; কি অদ্ভুত !” তার পর কি একটা মনে করিতে চেষ্টা করিয়াই তাহার হর্ষ-বিস্ময়ে উৎফুল্ল মুখখানি অকস্মাং মলিন গভীর হইয়া গেল। তবু আপনাকে থানিকট। সাম্‌লাইয়ু লইয়। সে বলিল, “কাল সন্ধ্যেবেলা মা আমাকে ছাতে পাঠিয়ে দিলেন ; তার পর ছাতে ঘুরতে ঘুরতে সেইখানেই বোধ হয় ঘুমিয়ে পড়েছিলাম ; কে যে আমাকে এখানে নিয়ে এল তার ঠিক নেই ।” কথা বলিতে বলিতেই গৌরী কেমন যেন অন্যমনস্ক হইয়া পড়িল । যে-কথা সে বলিতেছিল তাহাতে যে তাহার মন নাই, কিন্তু অন্য কথাটাও যে সঙ্কোচে সে পিতার কাছে পাড়িতে পারিতেছে না, ইহা হরিকেশব বুঝিলেন। মা, বাবাকে তাহার কথা জিজ্ঞাসা করিবেন বলিয়াছিলেন, সুতরাং বাবা যে সব কথাই শুনিয়াছেন ইহা বুঝিয়া গৌরী আরও সস্কুচিত হইয়া পড়িতেছিল। তাহার স্বাভাবিক ছেলেমানুষীট। পিতাকে দেখিয়াই নানা গল্পে ও আবদারে তাই অন্তদিনের মত ফুটিয়া উঠিতে পারিতেছিল না। কিন্তু গৌবীর এই আকস্মিক বুয়োবৃদ্ধির বোঝাট। হরিকেশবের মনে বড় আঘাত করিতেছিল ; তিনি যেন বোঝাটা তাড়াতাড়ি হাল্কা করিয়া দিবার জন্যই তাহার মুখখান একটু উচু করিয়া তুলিয়া ধরিয়া সস্নেহে হাসিয়া বলিলেন, “কিরে পাগলি ! কাল সারাদিন কি-সব বুড়োমি ক’রে মাথা ঘামিয়েছিল ; আজ আবার সকালে উঠেই বুড়ে ঠাকুমার মত গম্ভীর হ’য়ে বসল যে ?” 噪 গৌরীর মুখখান একটু রক্তিম হইয়া উঠিল, সে চুপ করিয়া আপনার খয়ের-ডুরে শাড়ীর পাড়টা লইয়া নাড়াচাড়া করিতে লাগিল, কোনো কথা বলিল না । পিতার সহিত এমন সসঙ্কোচ ব্যবহার তাহার জীবনে বোধ হয় এই প্রথম । হরিকেশব তাহার মৌনতাকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করিয়া তাঙ্গার মাথাট। কোলের ভিতর টানিয়! লইয়া, গালে একটা টোকা দিয়া বলিলেন,"তোকে কে কি বলেছে, মা ? তার জন্তে ভেবে হায়রান হচ্ছিস কেন? তোর বুড়ে বাবাকে ব’লে দেখন। কিছু কিনারা করতে পারে কি না ।” - গৌরী পিতার কোলের ভিতর মুখ লুকাইয়। বলিয়া ফেলিল, “বাবা, ওই সব মেয়েরা বলে আমি নাকি মিছে ক বলেছি, আমার নাকি বিয়ে হয়নি । আমি লোহা সিদূর পরি না বলে ওরা আমায় ঠাট্টা করছিল। কিন্তু বাবা, আমি ত সত্যিই বলেছি, আমার ত বিয়ে হয়েছিল । তবে কেন মা আমাকে সিদূর পরতে দিলে না? আমি কত বললুম তবু মা শুনলে না।” গৌরী এক নিশ্বাসে সব বলিয়া গেল । হঠাৎ মার উপর তাহার অভিমান উপ ছিয়া উঠিল। মা কেন তাহাকে অমন যা-তা বলিয়া ভুলাইতে চেষ্টা করেন। গৌরী তাহার পাংলা- গোলাপী ঠোটদুটি ফুলাইয়। উত্তরের আশায় বাবার মুখের দিকে চাহিল। একবার সঙ্কোচের বাধ ভাঙিয়া যাওয়াতে সে আবার কাছ ঘেসিয়া একেবারে হরিকেশবের গলা জড়াইয়া বসিল । শিশুর মত আবদার ও অভিমানের সুরে জীবনের এই করুণ-পর্বের কথা লইয়া গৌরীকে প্রশ্ন করিতে দেখিয় হরিকেশবের মন ব্যথায় ভরিয়া উঠিল। হায় রে অবুঝ শিশু ! সমাজ তোকেও তাহার বিধানের কঠিন নিগড়ে বাধিতে চায় কি করিয়া ? হরিকেশব গৌরীর মুখখানা বুকের উপর চাপিয়া ধরিয়া বলিলেন, “হ্যা মা, তুমি সত্যি কথাই বলেছিলে । তোমার বিয়ে খুব ছোটবেলা একবার হয়েছিলই ত।”