পাতা:প্রবাসী (ষড়বিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৯৭২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৬ষ্ঠ সংখ্যা ] করিল। “এত দেরি করলে কেন ? তোমার জন্যে আজ আমি এখন অবধি ব’সে আছি।” দেবেন্দ্র ঠাট্টার স্বরে বলিলেন, “হঠাৎ আজ এমন নব বিধান কেন ? এত সৌভাগ্য ত আমার কপালে বিশেষ ঘটে না ?” ইন্দির ঠাট্ট অগ্রাহ করিয়া বলিল, “তোমার সঙ্গে একটা কথা ছিল, তাই।” দেবেন্দ্র জুতা ছাড়িয়া একটা কোঁচের উপর লম্বা হইয়া শুইয়া পড়িলেন। ইন্দিরাকে টানিয়া নিজের পাশে বসাইয়া এক হাতে তাহাকে জড়াইয়া ধরিয়া বলিলেন, “কি কথাটা শোনাই যাক ৷” কিন্তু কথা বলা যে বড়ই কঠিন! ইন্দিরার যেন কণ্ঠরোধ হইয়া আসিতে লাগিল। আজ যেন দেবেন্দ্র অন্যান্ত দিনের চেয়েও বেশী প্রফুল্ল, মুখে হাসি ধরে না, প্রতি কথায়, প্রতি কাজে আrদর ঝরিয়া পড়ে। কিন্তু কৰ্ত্তব্য যা, তাহা করিতেই হইবে । কোনো ভূমিকা না করিয়াই সে শেষে বলিয়া ফেলিল, “আমি চাই যে তুমি আবার বিয়ে কর।” দেবেন্দ্র হো হো করিয়া হাসিয়া উঠিলেন। স্ত্রীকে বুকের সঙ্গে আরো নিবিড় ভাবে জড়াইয়া ধরিয়া বলিলেন, “কাকে ? তোমার ছোট বোন টেপকে ? তার ত মোটে চার বছর বয়স না ?” ইন্দিরার চোখে জল আসিয়া পড়িল । যে-কথা বলিতে তাহার অৰ্দ্ধেক প্রাণ বাহির হইয়া আসিয়াছে, স্বামী তাহ এম্নি ঠাট্টা করিয়া উড়াইয়া দিলেন! সে অনেক কষ্টে চোখের জল ঠেকাইয়া রাখিয়া বলিল, “আমি ঠাট্টা করছি না। তোমার পরিবারের প্রতি, বংশের প্রতি একটা কৰ্ত্তব্য ত আছে! তার খাতিরে তোমায় এ কাজ কবৃতেই হবে।” দেবেন্দ্র উঠিয়া-পড়িয়া বলিলেন, “আমার কৰ্ত্তব্য ত শুধু স্বত পূর্বপুরুষের প্রতি নয় । যারা বেঁচে আছে তাদের প্রতিও জামীর কৰ্ত্তব্য আছে। এসব ৰাজে কথা আর আমার কাছে বোলো না ।” এই বলিয়া তিনি ঘর ছাড়িয়া চলিয়া গেলেন । ইন্দির প্রথমে যেন মুক্তির নিশ্বাস লইয়া বাচিল। দেবতার দান obe (t তাহার যতটুকু করিবার কথ। তাহা সে করিয়াছে, এখন দেবেন্দ্র যদি তাহার কথা না শোনেন তাহা ত আর ইন্দিরার দোষ নয়। তাহার বুকের উপর হইতে মস্ত বড় একট। পাষাণ-ভার যেন নামিয়া গেল । দেবেন্দ্রের সাম্নে এই অপ্রীতিকর প্রসঙ্গ সে আর তুলিবেই না ঠিক করিল। অনেক কাল পরে মনে একটুখানি শাস্তি পাইয় তাহার চেহারা শুদ্ধ ফিরিয়া গেল । কিন্তু ইন্দিরা অনেক কাল সংসারে থাকিয়াও সংসারকে চিনিতে পারে নাই। শীঘ্রই তাহার প্রমাণও সে পাইল । সন্ধ্যার পর বাগানে বেড়াইয়া ফিরিয়া সিড়ি দিয়া উপরে উঠিতে যাইবে, এমন সময় শুনিতে পাইল তাহার এক দূর সম্পর্কের খুড়শাশুড়ীর ঘরে মহা উৎসাহে গল্প চলিতেছে। প্রথমে সে সেদিকে কান না দিয়া সোজা সিড়ি বাহিয়া উপরে উঠতে আরম্ভ করিল, কিন্তু কয়েক সিড়ি উঠিতে-নী-উঠিতেই নিজের নামট কানে আসাতে তাহার গতিরোধ হইয়া গেল । খুড়শাশুড়ী বলিতেছিলেন, “আরে বাছা, এত বয়েস হ’ল এখনও আমার মানুষ চিনতে দেরি আছে নাকি ? বোমাকে দেখতেই ভাল মানুষ, কিন্তু ওঁকে দিয়েই এ বংশের সৰ্ব্বনাশ হবে।” দেবেন্দ্রের এক পিসতুতো বোন বলিলেন, “ন গো, বে নাকি দাদাকে বিয়ে করতে বলেছে, মাধী নিজের কানে শুনেছে ।” প্রথম বক্ত তাকারিণী গল একটু চড়াইয়া বলিলেন, “রাথ তোমার বিয়ে কবৃতে বলা । মুখে একটা কথা ব’লে, তারপর কেঁদে শয্যা নিলে কেউ তার কথা বিশ্বাস করে ? ছেলেকেও যেন তুক্‌ ক’রে রেখেছে, বংশলোপ হ’লেও সে কেবল বেীএর চাদ মুখের দিকে চেয়ে থাকৃবে।” ইন্দিরার আর শুনিতে ইচ্ছা হইল না। বাকি সিড়ি কট তাড়াতাড়ি পার হইয়া সে-ঘরে গিয়া শুইয়া পড়িল । তাহার বুকের ভিতর কান্নার ঢেউ ফুলিয়া ফুলিয়া উঠিতে ছিল, কিন্তু সে জোর করিয়া তাহ চাপিয়া রাখিল। নিজের স্থাতে নিজের গল! কাটিয়া না দিলে এ জগতে