পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/১৩৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

سولا ئ অমৃথটা করল ? তা বেশ, তাদেরও কথা থাক, আমারও কথা থাক। পূজোর তত্ত্বটি আগেভাগে ভাল করে পাঠিয়ে ' দিন, দিয়ে মেয়ে নিয়ে গিয়ে যত খুশী সোহাগ করুন।” পুটুরাণীর এ-সব ঝগড়াঝাটি তর্কাতর্কি ভাল লাগে না, সে তাড়াতাড়ি নিজের সেলাই গুটাইয়া লইয়া সেখান হইতে প্রস্থান করিল। শশিনাথ বলিলেন, “তবে তাই লিখে দিই?" গৃহিণী বলিলেন, “হ্যা, সেই কথাই ভাল ক'রে গুছিয়ে লেখ । আমাদের কি কেউ ছেড়ে কথা কয় যে আমরা মাব লোককে দয়া করতে ? এই পূর্ণিকৈ তত্ত্ব করতেই আমার একশ টাকা থ"সে যাবে। না হলে মেয়ের খোয়ারের একশেষ হবে। আমি পাচ্ছি কোথায় ? আমরাও ত নবাব-বাদশা নই ? মেয়ে গর্ভে ধরলে অত পয়সা বাচানো চলে না।” কৰ্ত্ত চলিয়া গেলেন, যাইতে যাইতে জিজ্ঞাসা করিলেন, “হেম ফিরেছে নকি ? বড় বৃষ্টি আসছে।" স্বরবালা বলিলেন, “কে জানে, আমি ত আসতে দেখিনি। অ বৌমা !” কপাল পর্যন্ত gেমটা টানিয়া একটি উনিশ-কুড়ি বছরের মেয়ে পাশের ঘুরের দরজার কাছে আসিয়া দাড়াইল । স্বরবাল জিঙ্গল করিলেন, "হেম ফিরেছে ?" বধু মাথা নাড়িয়া জানাইল ষে স্বামী আসেন নাই। “তা আসবে কেন ? তাহলে যে জলে ভিজে সর্দিজরট হয় না ?” বলিতে বলিতে স্বরবাল! ভাড়ার ঘরের দিকে চলিয়া গেলেন । গৃহিণীর চেহারাখানি বেশ দশাসই, রংটা এককালে ফরশাই ছিল বোধ হয়, এখন তামাটে হইয়া গিয়াছে। চুল এখনও পিছনে নিতান্ত মন্দ নাই, তবে সামনের দিকে টাক '. পড়িতে আরম্ভ করিয়াছে, বেশ চওড়া করিয়া সিছুর পরিয়া সে খুন্টুকু তিনি ঢাকা দিবার চেষ্টা করেন। গলার, আওয়াজটিও তাহার চেহারার সঙ্গে মানানসই। একবার মুখ খুলিলে কাহারও বুঝিতে বাকী থাকে না যে স্বরবাল কোন বিষয়ে মতামত প্রকাশ করিতেছেন। কাজেই বেহাইয়ের অমুখ সম্বন্ধে তাহার, মন্তব্যগুলি স্বনয়নীর কানে বেশ স্পষ্ট হইয়াই পৌছিল । তাহার বড় বড় চোখদুটি জলে ভরিয়া উঠিল, “অবাধ্য অধরও কাপিয়া প্রবাসী ১৩৪৪ কঁপিয়ু উঠতে লাগিল। জানালার পাশে সরিয়া দাড়াইয়ু সে প্রাণপণে চেষ্টা করিতে লাগিল অশ্র সম্বরণ করিতে । শ্বশুরবাড়ীতে তাহার কান্না দেখিবার জন্য বসিয়া আছে কে ? সে ত এখানে রক্তমাংসের মানুষ বলিয়া গণ্য হয় না, সে কেবলমাত্র বধু। তাহার প্রতিপদে ক্রটি, তাহার ভালটুকুও ইহাদের চোখে মন্দ হইয়া দেখা দেয়। স্বামী মুখে মধ্যে মধ্যে সাম্বন দেন বটে, কিন্তু কাৰ্য্যত কিছু করিবার ক্ষমতা তাহার আছে বলিয়া ত বোধ হয় না ? পরের একটা মেয়ে, তাহার পক্ষ লইয়া নিজের আত্মীয়স্বজনকে কথা বল, এ তাহার চিন্তারও অতীত। আজ রবিবার, খাইয়া-দাইয়া একটুখানি গড়াইয়। লইয়া, হেমেন্দ্র বন্ধু-বান্ধবের সন্ধানে বাহির হইয়া গিয়াছে। আজ রাত্রের খাওয়াদাওয়া অনেক রাত করিয়াই হইবে, কাজেই সন্ধ্যাবেল স্থনয়নীর খানিকক্ষণের ছুটি মিলিয়াছে। মুরবালার সংসারের নিয়ম বিকালের রান্নাও সকালে সারিয়া রাখা, ঠিক সকালে না হোক অন্ততঃ দুপুরের মধ্যে ত বটেই। দুই বেলা সমানে কয়লা পোড়ানোর পক্ষপাতিনী তিনি নন। স্বামী কিছু হাজার টাকা রোজগার করেন না, বয়স পঞ্চাশ ছাড়াইতে চলিল, দেড়শ টাকা পৰ্য্যস্ত র্তাহার মুরদ । আর কতকালই বা তিনি চাকরি করিতে পাইবেন ? ইহারই মধ্যে ছপয়সা গুছাইয়া ন! রাখিলে মেয়ের বিবাহ হইত কেমন করিয়া ? তবু ত ঋণ না করিয়া পারা গেল না। ছেলে ত যা রোজগার করেন, তা তাহার নিজের হাতখরচ করিতেই ফুরাইয়া যায়। নিজের ও স্ত্রীর কাপড়চোপড় ঔষধপথ্যের ভারও অবশ্য তাহার ঘাড়ে। বাড়ীতে সৰ্থ করিয়া ইলেকটিক বাতি সে-ই আনিয়াছে, খরচটাও সে-ই দেয়। ইহা ভিন্ন টানাটানি পড়িলে পাচ টাকা দশ টাকা যখন যাহা পারে তাহা দেয়। কিন্তু এগুলি গৃহিণী ধৰ্ত্তব্যের মধ্যে আনেন না। এক মেয়ের বিবাহ হইয়া গিয়াছে, আরএকটিও মায়ের কাধ পৰ্য্যস্ত বাড়িয়া উঠিয়াছে, সেটিকে বড় জোর জার দু-এক বছর রাখা যাইবে । ইহারই ভিতর বিবাহ দিবার টাকা আসিবে কোথা হইতে ? যত ভাবেন ততই স্বরবালার মেজাজ খারাপ হইয়া যায়, এবং পরের যে মেয়েটিকে তাহার বাপ-মায়ের দায়মুক্ত করিয়া তিনি নিজে ঘরে আনিয়া তুলিয়াছেন, তাহার উপর মনটা বিরূপ হইয়া | t