পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/১৬৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১২৮ না নিয়ে কিছু হ’তে পারে না। এখন তোমাকে কোথায় সৎপাত্রের হাতে দেব, তুমি আপন সংসার বুঝেপড়ে নেবে, তা নয় এখন আমার সংসার চালাবার ভাবনায় তুমি চাকরি খুজতে লাগলে এমন অসঙ্গত কথায় কেউ মত দেবে না বাছা, তা ব’লে দিচ্ছি। ইন্দিরা । [ দৃপ স্বরে এবং জেদের ভঙ্গীতে ] কেন মা আজ তুমি এমন কথা বলছ বুঝতে পারছি নে । বাবা বরাবর ছেলেমেয়েকে সমান ভাবে শিক্ষা দিয়ে এসেছেন । জীবনে তাদের দায়িত্ব এবং তাদের স্বাধীনতা যে সমান এ-কথা বারংবার বুঝিয়েছেন । ছোটদা এই অল্প বয়সে সংসারের বোঝ{ স্বচ্ছন্দে বইতে পারল এবং এই ভার কেমন ক’রে বহন করবে সেই ভাবনায়ু বিয়ে করলে না, এই যদি হয় তবে আমিই বা কোন বিধানে বড়লোকের ঘরের বেী হয়ে সব দায়িত্ব মুছে ফেলে চলে যাব ? মোহিনী। তোমার বাবা কি শিখিয়েছিলেন, কি মতামত প্রচার করতেন তা হয়ত জানি নে কিন্তু এ আমি নিশ্চয় জানি, মুখে তিনি যাই বলুন মনে মনে আমার মতই তিনিও ব্যাকুল হয়ে চাইতেন তুমি যাকে ভালবাস সুখে দুঃখে তার ঘর করে চরিত্তার্থ হও । তার বদলে চাকরি খোজ এ কখনই চাইতেন না । নরেন । [ ঢুকিয় ] মা, নিৰ্ম্মলদা এসেছেন, আদা দিয়ে চ চাইলেন, ঠাণ্ড লেগেছে । আর ইন্দু, তোমাকে একবার ডার্কচ্চেন, কি দরকার আছে । ইন্দির। বলগে আমি চা তৈরি ক’রে নিয়ে যাচ্ছি । { নরেন চলিয়া গেল । ] বাহিরের ধরে নরেন ও নিৰ্ম্মল বসিয়াছিল, ইন্দির চায়ের পেয়াল হাতে লইয়া চুকিল । ] - নিৰ্ম্মল । [ হাত বাড়াইয়া পেয়ালাটা লইয়া ] মায়ের সঙ্গে এতক্ষণ কি নিয়ে বচসা হচ্ছিল ? তোমার প্রবল কণ্ঠস্বর ধে মোড় থেকে শোনা যাচ্ছে, আমি আসতে আসতে শুনলুম। ব্যাপার কি ? ইন্দির । [ রাগত ভঙ্গীতে ] কে বললে আপনাকে বচসা হচ্ছিল ? নিৰ্ম্মল । [ সস্নেহ স্বরে ] আচ্ছ। এত অল্পেতেই এত চটে ওঠ কেন বল দেখি ? : নরেন । আমি জানি কি নিয়ে বচস হচ্ছিল । ইন্দিরা বলছে, ছোটদা এক কেন চাকরি করবে, আমিও করব । আমার সঙ্গে ছোট থেকে ওর রেষারেষি চলছে, আজই ব৷ তার অন্ত রকম হবে কেন ? কিন্তু আজ ম্বে কলেজে ভারি একটা মুখবর পড়লুম, তুমি নাকি ডি.এসসি হয়েছ। একদিন খাওয়াতে হবে নিৰ্ম্মলদ, অমনি ছাড়ছি নে। প্ৰৱাসী sésB নিৰ্ম্মল । [ আড়চোখে ইন্দিরার প্রতি চাহিয়া ] কিন্তু তারও চেয়ে একটা স্থখবর আছে নরেন । আমি যে এলাহাবাদ য়ুনিভার্সিটিতে একটি বেশ ভাল রকম প্রফেসরী পেয়েছি । ভাবছি, এমন চাকরি ছাড়া উচিত নয়। ইন্দিরা । [ চমকিত হুইয়া ] সে কি আপনি কলকাতা ছেড়ে চলে ষাবেন নাকি ? নিৰ্ম্মল । অগত্যা, ভোমরা সবাই চাকরি করছ জার আমি বসে থাকব কেন ? এবং চাকরি যখন করবই তখন যে-দেশে ভাল পাব সে-দেশেই যাব। ইন্দিরা । [ একটু বিদ্রুপের ভঙ্গীতে ] আপনার অগাধ অর্থ। আপনার চাকরি সখের । আমাদের তা নয় । নিৰ্ম্মল । ষাও ত ভাই নরেন, মায়ের কাছে আমার জন্তে দুটো পান চেয়ে আন গে । { নরেন প্রস্থান করিল । ] নিৰ্ম্মল। ইন্দু ! ইন্দির। বলুন। নিৰ্ম্মল । আমার যে টাকা অাছে এ-কথাটা কি কখনও ভুলতে পারবে না ইন্দু ? কিন্তু তোমার যদি কোটি টাকাও থাকত আমার একবারও মনে পড়ত ন! আমার ইন্দিরার টাকা আছে। আমার টাকা আছে বা নেই এ-কথাটাই যে অবাস্তর । এটা কেন তোমার যখন-তখন মনে পড়ে ? বুঝতে পারছ ? ইন্দির। পারছি । আগে মনে পড়ত না । কিন্তু এখন পড়ে। যখন দেখি শোকাতুর জরাজীর্ণ দেহমন নিয়েও আমার মাকে সকালে উঠেই ভাতের হাড়ি চাপাতে হয়, যখন দেখি ছোটদা এমন তীক্ষ্ণবুদ্ধি নিয়েও পচাত্তর টাকা মাইনেয় সারাদিন বাধা রয়েছে, তখন মনে পড়ে যায়। এবং আরও মনে পড়ে দু-দিন পরে আমি হয়ত ধনীর গৃহিণী হয়ে এই দরিদ্র সংসারের সমস্ত দায়িত্ব ঝেড়ে ফেলে দেব । না না, তা আমি কিছুতেই পারব না। দু-জনেই কিছুক্ষণ নীরবে রছিল ] নিৰ্ম্মল । [ কিছুক্ষণ পর মুখ তুলিয়া ] আচ্ছ ইন্দু, দৈবক্রমে আমার যে কতকগুলো টাকা রয়েছে, তা কি কোনদিনই কোন কাজে আসবে না ? ইন্দির । সম্ভাবনা দেখি নে । মাকে আপনি জানেন, তিনি র্তার স্বমত থেকে এক বিন্দু টলবেন না। কিন্তু সত্যিই আমি চাকরি করতে চাই । ছোটদার ঐ অল্প আয়ে ভাল ক’রে সংসার চলে না। এ-বিষয়ে আপনার মত কি ? নিৰ্ম্মল । [ সাভিমানে ] আমার মতে কি এসে যায় ? আমার মত নিয়ে ত আর কিছু তুমি সঙ্কল্প স্থির কর নি।