পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/২৬৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ミた8 প্রস্বাসী

  • Ne38

কিনিয়া ত এ সব খাইতে হয় না, উপকরণও ঘরের, তৈয়ারীও হয় ঘরে । জলখাবার খাওয়া শেষ হইতেই মামীম বলিলেন, “তুই আর আমার পিছন পিছন এখন ঘুরিস নে। পরীক্ষার বছর, পড়গে যা । আর চিনি, টিনি, যদি দিদিকে গিয়ে জালাবি, ত একেবারে ঠ্যাং ভেঙে দেব ।” চিনি, টিনির তখনও হাসের বাচ্চা, বাছুর, বিড়ালছনি প্রভৃতি অনেক জীবের তদারক করা বাকি, কাজেই দিদিকে তখনকার মত রেহাই দিয়া তাহারা বাহিরে ছুটিয়া চলিয়া গেল। মৃণাল আবার গিয়া পড়িতে বসিল । এবারে কিন্তু ঘণ্ট-থানিকের বেশী আর পড়া হইল না । একেবারে দিনরাত বইয়ের মধ্যে যদি ডুবিয়া থাকিতে হয়, তাহা হইলে ত তাহার এখানে আসাই বৃথা। সে বই তুলিয়া রাখিয়া রান্নাঘরে মামীমার কাছে বসিয়। তরকারি কুটিতে আরম্ভ করিল । মামীম বারণ করিলেও শুনিল না । জেলেনী চুবড়ি করিয়া কতকগুলি চুনা ও পুটি মাছ আনিয়া দিয়া গেল, তাহ বাছিতেও বড় কম সময় লাগিল না । পাড়াগায়ে এই রকম মাছই বেশীর ভাগ দিন জোটে, বড় মাছ কচিৎ কদাচিৎ। কিন্তু এখানে ইহারই মূল্য অসাধারণ, এক থালা ভাত এই মাছ-চচ্চড়ির সাহায্যে উঠিয়া যায়। মল্লিক-মহাশয় সকাল বেলাটা নিজের ক্ষেত-খামার তদারক করিয়াই কাটাইয়া দেন, না দেখিলে আয় কমিয়া যায়। গরু-বাছুরও অনেকগুলি আছে, তাহদেরও রাখাল ছোড়াদের দয়ার উপর একেবারে ছাড়িয়া রাখা চলে না । র্তাহার হাতে একখানি পোষ্টকার্ড দেখিম! তাহার স্ত্রী মুখ বাড়াইয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “ৰুণর চিঠি এল গো ?” চিঠিপত্র বড় তাহদের বাড়ী আসে না, তাই চিঠি দেখিলেই মনে কৌতুহল জাগে । মল্পিক-মহাশয় বলিলেন, “মৃগাঙ্ক লিখেছে।” মৃণাল তাড়াতাড়ি রান্নাঘরের দাওয়ায় বাহির হইয়া আসিয়া জিজ্ঞাসা করিল, “বাবা কি লিখেছেন মামাবাৰু ? আমার কথা কিছু লিখেছেন ?” মল্পিক-মহাশয় বলিলেন, “পুজোর • সময় , একবার তোমাকে নিয়ে যেতে লিখেছে।, তার শরীর মোটে ভাল যাচ্ছে না, হাপানির টানটা বডড বেড়েছে, কাজকৰ্ম্ম আর বেশী দিন করতে পারবে না ব’লে ভয় করছে।” মৃণাল চিস্তিত ভাবে বলিল, “তবে ত বড় মুন্ধিল । সংসারটি ত ছোট নয় । ওঁদের চলবে কি ক’রে ?” মামৗমা বাহির হইয়া আসিয়া বলিলেন, “আগে-ভাগে অত কু-ভাবনা ভাবতে হবে না । ইপিানির অসুখ কতবার বাড়ে, আবার কমেও যায়। আর বাড়ীঘর জমিজম সবই ত রয়েছে, নিজে দেখে না, বিলি ক’রে রেখেছে, তাই তত্ব বেশী আদায় হয় না। নিজের হাতে করে করলে, সামনে দাড়িয়ে লোক খাটালে ওরই থেকে দুগুণ পাওয়া যায় । তাতে কি আর চলে না ? আমাদের পাড়াগাঁয়ে চাকুরি করে টাকা আর কীট মানুষ আনে ? ঘরের ধানচাল তরিতরকারি, দুধ-ঘি, এইতেই সংসার চলে। তবে হ্যা, বাৰুগিরি করা চলে না ।” তাহার বাপের সংসারে বাবুগিরি যে বিশেষ হয়, এমন ধারণা মৃণালের ছিল না। বিমাতাটির যেটুকু পরিচয় সে পাইয়াছিল তাহাতে খুব ফ্যাশানছরস্ত মানুষ বলিয়া তাহাকে মনে হয় নাই। আর ঐ অসংখ্য ছেলেমেয়ে, রুগ্ন স্বামী সাম্‌লাইয়া তিনি ফ্যাশান করিবেনই বা কখন ? সে আবার জিজ্ঞাসা করিল, “পুজোর আগেই কি যেতে বলেছেন ?” মামীম বলিলেন, “থাক, যা না মুখের বাপের ঘর, পূজোর আগে আর যেতে হবে না। বিজয়ার পরে স্বাস এখন । কখনও ত বাপ-মা একথান মিলের কাপড় দিয়েও জিগগেস করে না। চোখের চামড়াও নেই।” এই ম-মরা ভাগিনেয়ীর প্রতি তাহার পিতামাতাব অবহেলা মল্পিক-গৃহিণী মোটেই সহ করিতে পারিতেন না । মৃগাঙ্কমোহনের কথা উঠিলেই তাহার মনের ঝাজ খানিকট বাহির হইয়া পড়িত। মৃণালের এ-সব শোনা চিরকাল অভ্যাস, সে জিনিষটাকে স্বাভাবিক বলিয়া ধরিয়া লইয়াছিল। মল্পিক-মহাশয় বলিলেন, “গেলে ত বিজয়ার আগে যেতেই পারব না । কিন্তু ষাতে একেবারেই না যেতে হয় তারই চেষ্টা দেখছি । মূগান্ধকেই লিখলাম একবাব