পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/২৮৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ఫిల్ని পরের দিন রবিবার । আহারাস্তে নিগ্ৰামুখ উপভোগ করিতেছি। কথায় আছে, টেকি স্বর্গে গেলেও ধান না ভানিয়া পারে না। আমি আপিসের বাবু, সারা সপ্তাহ জাপিসে কাটাইয়াও অাপিসের মোহ ত্যাগ করিতে পারি না। অতএব আজ ছুটি পাইয়াও চোখ বুজিয়া পুনরায় সেই পুরাতন পথ ধরিয়া প্রায় আপিসের কাছাকাছি গিয় পৌছাইয়াছি, এমন সময় বাহিরের গোলমালে ঘুম ভাঙিয়া গেল । গোলমালট। আগেই হইয়াছে, ঘুম ভাঙিল পরে। শুনিলাম, পাশের কক্ষ হইতে শৈলজা তৃত্যকে উদ্দেশ করিয়া কহিতেছেন “কতদিন তোমায় বারণ করেছি, বাৰু ঘুমোলে চেচাবে না, একটু আস্তে করেও কি কথা কইতে পার না তুমি ? এক দিন মোটে ঘুমোতে পান তাও...” ভূত্য এইবার সত্যই মৃদুস্বরে কথা কহিল, অসংলগ্ন দুইএকটা কথা কেবল কানে গেল—“হামি ত বলছে,...উ না যাবে,--”হামি কি ক’রবে...” গৃহিণীর সহানুভূতিপূর্ণ বাক্যে অত্যন্ত সন্তুষ্ট হইয়। আর কিছু শুনিবার পূৰ্ব্বেই চোখ বুজিয়া পুনরায় সেই পরিত্যক্ত আপিসের পথে পা বাড়াইলাম। মাঘ মাস শেষ হইয়া ফাৰ্ত্তন আরম্ভ হইয়াছে। কিন্তু । কয়েক দিন হইতে যেন পুনরায় নূতন করিয়া শীতকাল আরম্ভ হইল, এমনি শীত পড়িয়াছে। দৈনিক পত্রিকার খেলার সংবাদগুলি পাঠ সাঙ্গ করিয়া মহা উল্লসিত হইয়া উঠিয়াছি। যাহা ভাবিয়াছিলাম তাহাই ঘটিয়াছে। কলির ভীম ব্র্যাডম্যান। সে-যুগের গঙ্গার পরিবর্তে হস্তে তুলিয়াছেন এ-যুগের ক্রিকেটের ব্যাট। তাহাকে পরাজিত করা কি একটা মুখের কথা ! কত হাজার মাইল দূরে সেই অষ্ট্রেলিয়ার খেলা চলিতেছে, কিন্তু সংবাদপত্রের এমনি মহিমা ষে আসামের এক নগণ্য শহরে বাস করিয়াও আমি সেই অষ্ট্রেলিয়ার সহস্ৰ দশকমণ্ডলীর ভিতর অনায়াসে নিজের স্থান করিয়া লইলাম । অত্যন্ত পুলকিত চিত্তে প্রথমে বিজয়ীদিগের এবং পরে ংবাদপত্রের মহিমার কথা চিন্তা করিতে করিতে স্বানকক্ষের অভিমূখে যাত্রা করিয়াছি,-দৃষ্টি পড়িল আমার ভৃত্যটির প্রবাসী SNరిg প্রতি। রৌদ্রে বসিয়া শৈলজা বঁট লইয়া তরকারি কুটিতেছে এবং নূতন ভূতাটি এতদিন পরে তাহার অভ্যস্ত উচ্চকণ্ঠে কথা না কহিয়া যথাসম্ভব ক্ষীণকণ্ঠে ভদ্রভাবে কি একটা সংবাদ দিবার চেষ্টা করিতেছে। আমি এত দূর হইতে কিছু বুঝিতে পারিলাম না, তবে হাত এবং মুখের বিচিত্র ভঙ্গী লক্ষ্য করিয়া বুঝিলাম, সে কাহারও আগমন-সংবাদ জানাইতেছে এবং ইহাও স্পষ্ট বুঝা গেল আগমন ধাহারই হউক সে-সংবাদ আমার অজ্ঞাত থাকাই যে কত্রীর অভিপ্রায়, ভৃত্যটি তাহাও উপলব্ধি করিয়াছে। ভূত্তোর কথার উত্তরে কি-একটা কথা কহিতে গিয়া শৈলজার দৃষ্টি আমার প্রতি পড়িল, এবং চকিতে তাহার মুখখান একেবারে রাঙা হইয়া উঠিল। কিন্তু পরক্ষণেই আমার মনের ভাব বুঝিতে পারিয়াই যেন এই লুকাচুরির লজ্জাটাকে একটা সহজ সরল আবরণ দিয়া ঢাকিবার অভিপ্রায়ে একটু অনাবগুক তেজের সহিত কহিল, “এসেছে ত এসেছে, তাতে কি হ’ল । আমন ফিসফিস ক’রে বলবার কি আছে ? ব'লে দাও এখন দেখাটেখা হবে না।" আশ্বস্ত হইয়া ভূত্য জোরে কথা কহিয়া বাচিল । কহিল, “হামি ত বললে, ঠাকুর বোলে আপেন কহিয়াছিলেন আসতে, পূজা উজা হোবে।" এইবার শৈলজা অপরাধীর ভাবটা আর কিছুতেই নিজের মুখ হইতে মুছিয়া লইতে পারিল না । ব্যাপারটা এতক্ষণে আমার নিকট অনেকটা সহজ হইয় আসিল। শৈলজার নিকটে গিয়া একবার দীর্ঘ দৃষ্টিতে তাহার আপাদমস্তক দেখিয়া লইয়া গম্ভীর কণ্ঠে কহিলাম, *শৈল ! কি দিয়ে ভগবান তোমায়ু তৈরি করেছিলেন তাই ভাবছি। এই সেদিন এত ক'রে বারণ করলুম এই সব যার-তার কথায় বিশ্বাস ক’রে মনে অনর্থক অশাস্তির স্বাক্ট করে না। কিছুতেই কি শুনবে না তুমি আমার কথা ? এই সব বাজে লোকই তোমার আপন হ’ল আমার চাইতে ।” ভূত্য চলিয়া গিয়াছিল, কিন্তু পুনরায় ফিরিয়া আসিয়া কহিল, "ঠাকুর বেলিলে এক টাকা হোলেই সোব করিয়া দিবে।”