পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৪৫৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8 0о প্রবাসী S\రి88 উলভিকের নির্জন নিস্তৰ পাৰ্ব্বত্য পথে একাকী চলতে চলতে মনে হয়েছে যে পৃথিবীর শেষ মানব অনস্ত গোধূলির তীর্থযাত্রায় চলেছে ; নহাইম্স্কণ্ডে “মধ্যরাত্রি”র মলয়কম্পনে শুনতে পেয়েছি কত ভাইকিং মধুচন্দ্রের লুপ্ত গুঞ্জরণ । উলভিক থেকে নহাইম্‌মণ্ডের পথে একটি মেয়ের সঙ্গে আলাপ হয়েছিল; নাম তার সিগ্রিড, ইংলণ্ড এবং জাৰ্ম্মানীতে পড়াশুনা করেছে, কিন্তু প্রাণটা আছে এখনও পুরোমাত্রায় নরওয়েজিয়ান। এর সঙ্গে ইংরেজীতে কথা হয়েছিল। নরওয়েতে অনেকেই ইংরেজী জানে, স্কুলে প্রত্যেককেই ইংরেজী এবং জাৰ্ম্মান পড়তে হয়। ষ্টীমারে ঘণ্ট-পাচেকের পথ। সিগ্রিডকে জিজ্ঞেস করলাম—তুমি ওস্লোতে না থেকে ফিয়ডের বনবাসে কেন থাক ? সে বললে—ফিয়ডে আমার জন্ম, ফিয়র্ডই আমার প্রিয় ; শহরের কোলাহল আমার ভাল লাগে না । তার সঙ্গে আলাপে ফিক্সড-জীবনের নানা রহস্তের এবং মাধুর্ঘ্যের খবর .পেলাম। নরওয়েজিয়ান সাহিত্যের প্রতি আমার অম্বুরাগ দেখে তার দেশের গল্পে সে পঞ্চমুখ হয়ে উঠল। গন্তব্য স্থানে নামবার কিছুক্ষণ আগে সিগ্রিড অামাকে জিজ্ঞেস করল—“তুমি কি কর ?”—অস্বাভাবিক কৌতুহল। বললাম, “দূর দেখি ” “ভার মানে ?” “তার মানে আমি ভবঘূরে।” • “তোমাকে দেখে ত তা মনে হয় না।” সিগ্রিডের মত হাসিখুলী, সরলবিশ্বাসী কৌতুকপ্রিয় সহযাত্রিণীর কথা আমার অনেক দিন মনে থাকবে, যে-কোন লোকেরই থাকত। নরওয়েতে ফিরে যাওয়ার জন্ত সনিৰ্ব্বন্ধ অনুরোধ কেউ করে নি, কিন্তু ওদেশ থেকে বিদায় নেবার দিন নিজের কাছেই প্রতিজ্ঞা করতে প্রবৃত্তি হ’ল যে নরওয়েতে আবার ফিরে আসব। - পঞ্চদশ শতাব্দী পৰ্য্যস্ত নরওয়ে আর স্বইডেনের রাষ্ট্রক এবং সামাজিক গঠনে কোন পার্থক্য ছিল না। একই ভাইকিং সভ্যতা, এবং প্রায় একই ভাষা উভয় দেশে প্রচলিত ছিল। ডেনমার্কও এই একই সভ্যতার অন্তর্গত ছিল ব’লে, এই তিনটি দেশকে নিয়ে গঠিত ছিল স্কাণ্ডিনেভিয়া। ক্রমশ অস্তদ্বদ্ব ও যুদ্ধবিগ্রহের ফলে তিনটি দেশই এখন পৃথক হয়ে গেছে । গুস্তাফ ভাসা স্বইডেনকে স্বাধীনতা দিয়েছিল ডেনমার্কের শাসন থেকে ; ভাই সুইডেনের জাতীয় ইতিহাসে ভাসার স্থান সৰ্ব্বোচ্চ। তিনিই প্রথম স্বইডেনের রাজপদে অভিষিক্ত হন ১৫২৩ খ্ৰীষ্টাব্দে এবং তার বংশধরগণ আজ পর্যন্ত সুইডেনের সিংহাসন অলঙ্কত ক’রে আসছে । গুস্তাফ ভাসাই সৰ্ব্বপ্রথমে স্বইডেনের ইতিহাসকে পৃথক করেছিলেন স্কাণ্ডিনেভিয়ার ইতিহাস থেকে, আর হান্‌স লীগের কবল থেকে উদ্ধার করেছিলেন সুইডেনের আর্থিক স্বার্থকে। অনেক রাজনৈতিক বিবর্তনের পরে ১৮০৯ সনে সুইডেন স্বায়ুক্তশাসনের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠা করল তার রাষ্ট্রীয় কাঠামো যা আজও পরিবর্তিত হয় নি। ভাসা-বংশ প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রায় তিন-শ বছর পৰ্য্যস্ত স্নইডেনের জাতীয় জীবনে গেছে স্বর্ণযুগ। দেশাত্মবোধে, শিল্পে, বাণিজ্যে, চিত্রকলায় এবং স্থাপত্যে সুইডেন অসাধ্য সাধন করেছে। এই যুগে প্রতিষ্ঠিত রাজপ্রাসাদগুলো আজও তার সাক্ষ্য দেয় । সুইডেনে গিয়ে প্রথমেই নজরে পড়ে এই প্রাসাদশ্রেণী। কালমার, গ্রিপ হল , স্থানে, উপসাল, এই চারিটি প্রাসাদ বিশ্ববিখ্যাত। এদের মধ্যে প্রায় সব ক'টিরই ভাসা-যুগ থেকে নিৰ্ম্মাণ-কাৰ্য্য আরম্ভ হয়েছিল । আজকাল অধিকাংশ প্রাসাদের ভিতরে হয় মিউজিয়ম্ নয় মিউনিসিপাল পুস্তকাগার দেখতে পেলাম। একটি দ্বীপের উপরে কালমার প্রাসাদের ভিত্তি স্থাপিত হয়েছিল এবং সুইডেনের এটিই ছিল সৰ্ব্বপ্রধান রেণেসাস প্রাসাদ। মালারেন হ্রদের পারে গ্রিপস্হল্ম্ প্রাসাদটির দৃশু মনোরম । উপসালার প্রাসাদটি রাজা ভাসাই প্রতিষ্ঠা করে গিয়েছিলেন, শুধু নিৰ্ম্মাণ-কাৰ্য্য সম্পূর্ণ হয়েছিল ১৬৫৪ খ্ৰীষ্টাব্দে। উপসালা ষ্টকহল্ম থেকে খুব কাছে, এবং মুইডেনের সর্বপ্রথম বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হয়েছিল এই শহরে । কুইন ক্রিশ্চিন এই প্রাসাদের দরবারগৃহ থেকেই স্বইডেনের সিংহাসন থেকে তার বিদায় নেবার সঙ্কল্প ঘোষণা করেছিলেন। নরওয়ে-স্বইডেন পুরাণকথার দেশ। এখানকার প্রাসাদগুলোর সঙ্গেও নানা রকমের উপাখ্যান জড়িত আছে। স্বানের ট্রোল-লুঙ্গিবী প্রাসাদটির