পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৭১০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কাঙ্কন সঙ্গে বলে নাই। তাহাকে ঠিক পরিচিত লোকের মত গ্রহণ করা যায় না, অথচ অপরিচিতও ত সে নয় ? কলিকাতার মেয়ের এ-অবস্থায় কি করিত তাহা মৃণাল আন্দাজে বোঝে, কিন্তু মৃণালের মনটা এখনও মামামামীর সনাতনপন্থী প্রভাবটা সম্পূর্ণ কাটাইয় উঠতে পারে নাই। সে যদি বিমলের সঙ্গে এখন পরিচিতের মত কথা বলে তাহা, হ’লে মামীম বলিবেন, মৃণালের মনে শহুরে বেহায়াপনার ছোয়াচ লাগিয়াছে। আবার একেবারে যদি বিমলকে ন-দেখিবার ভান করে তাহা হইলে বিমল কি তাহাকে অভদ্র ভাবিবে না ? ভাবিলে অন্যায়ও ইহবে না | যাহা হউক, বিমলই তাহাকে বাচাইয়া দিল। মৃণাল ঘরে ঢুকিতেই সে চেয়ার ছাড়িয় উঠিয়া দাড়াইয়াছিল। ধীরেনবাবুকে প্রণাম করিয়া মাথা তুলিতেই মৃণালকে সে নমস্কার করিয়া বলিল, “অসময়ে এসে আমরা হয়ত উৎপাত ঘটালাম, কিন্তু ঠাকুরমা কিছুতেই ছাড়লেন না ।” মৃণাল কি উত্তর দিবে বুঝিতে না পারিয়া একটু হাসিল মাত্র । বীরেনবাবু বলিলেন, “তোমার হয়ত পড়াশুনার অস্থবিধে হবে, কিন্তু মা বুড়ে মানুষ, ও সব ত বোঝেন না ? তার ব্রাহ্মণ-ভোজনের ব্যাপারে তোমাকে চাইই । এখানকার চাকরবাকরের কোনও কাজ তার পছন্দও হয় না, আবার একলা ত সব ক'রে ওঠা সম্ভব নয় । তাই তোমাকে নিতে এলাম। কাল রাত্রির মধ্যেই তোমাকে আবার পৌছে দিয়ে যাব। এতে কি তোমার বোর্ডিঙের এর আপত্তি করবেন ?” মুণাল বলিল, “দেখি ব’লে । আমার আবার ক'দিন পরেই টেষ্ট পরীক্ষা কিনা, সময় নষ্ট না করাই উচিত। কিন্তু ঠাকুরমা বলছেন যখন, দেখি ওঁদের জিগ গেষ ক'রে,” বলিয়া সে বাহির হইয়া গেল। আসল কথা, এখনও মৃণালের মন দেশের জন্য ছট্‌ফট্‌ করিতেছে, বোর্ডিঙে মন বসে, নাই । দু-এক দিন বাহিরে কাটাইয়া আসিতে পারিলে মন্দ কি ? পড়ার ক্ষতি একটু হইবে, তা না-হয় হইলই ? মুণালের কপাল ভাল ছিল। টুতে বোনের বিয়ে শীঘ্রই। bra—t বিভাদির এক জ্যাঠ কাপড়চোপড় কেনা, মাটির বাসা \8S গহনাগাটি করানো পূরাদমে চলিতেছে। অনেকটা কাজই র্তাহার হাতে। কাজেই বোর্ডিঙের কোন মেয়ে কত পড়ার কামাই করিতেছে তাহার ভাবনা অত ভাবিবার র্তাহার সময় ছিল না । মৃণাল কবে ফিরিবে, এবং কোথায় থাকিবে, এই বিষয় দু-একটা প্রশ্ন করিয়াই তিনি তাহাকে ছাড়িয়া দিলেন । খবরের কাগজে থান-কয়েক কাপড় জামা জড়াছুয়L. মৃণাল ফিরিয়া আসিল । বীরেনবাবুকে জিজ্ঞাসা করিল, “বিছানা নিতে হবে কি ? শীতকালের দিন।” বীরেনবাবু বলিলেন, “না, ন, একটা রাতের জন্তে আবার বিছানা কেন ? যেমন ক’রে হয় কেটে যাবে। মায়ের সঙ্গেই ত শুতে পারবে ।” বিমল জিজ্ঞাসা করিল, “গাড়ী ডাকব কি ? না ট্রামেই যেতে পারবেন ?” এবার উত্তর না দিলেই নয় । কাজেই মৃণালকে বলিতে হইল, “না, গাড়ীর দরকার নেই। আমি ট্রামেই যেতে পারব |” তিনজনে বাহির হইয় পড়িল । মৃণাল ভিজা চুলটা হাতখোপা করিয়া জড়াইয়া লইল, মাথায় কাপড় তুলিয়া দিল । পল্লীগ্রামে অবিবাহিত মেয়েদের মাথায় কাপড় দিবার নিয়ম নাই, কিন্তু এখানে ত এই নিয়ম । বীরেনবাবু একটু বিস্মিত দৃষ্টিতে তাহার দিকে তাকাইলেন, কিন্তু মুখে কিছু বলিলেন না। বিমল বলিল, “ওটা আমার হাতে দিন,” বলিয়া মৃণালের হাত হইতে কাপড়ের বাণ্ডিলটা টানিয়া লইল । নিজের মনেই ভাবিল, “পঞ্চমাম দেখলে চ’টেই খুন হয়ে ষেত ” তিনজনে গিয়া ট্রামে উঠিয়া বসিল । কয়েক মিনিটেই মুকিয়া স্ত্রীটের মোড়ে পৌঁছিয়া তাহারা ট্রাম হইতে নামিয়া ইটিয়া চলিল। বাড়ীর কাছে আসিয়া পৌঁছিয়াছে, সদর দরজায় পা দিলেই হয়, এমন সময় উন্টাদিক্ হইতে তাহাদের সম্মুখে আসিয়া দাড়াইল পঞ্চানন । ঘূণালকে এইভাবে রাস্ত দিয়া হাটিয়া আসিত্বে দেখিয়াই তাহার মুখ ভীষণ গভীর হইয়া গেল। তাও মুবার সঙ্গে কিলে হতভাগ। মৃণাল তাড়াতাডি পাশ কাটাইয়া হন হন করিয়া বাড়ীর