পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৭১৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

sé5 প্রবাসী SN933 বিছানাপত্র সমস্তই তাকে জোগাতে হত। তখন র্তার মনে ৰে-ঋতুর আবির্ভাব হ’ল, সেই ঋতুর ফসল গীতাঞ্জলি । তখন বাইরে যে শুষ্কতা ও শূন্ততা ছিল তার মধ্যে রস এবং পূর্ণতা জোগাবার মত উৎস তার অস্তরের মধ্য থেকে যেন অকস্মাৎ ফোয়ার ছুটিয়ে দিলে। অবশেষে তার জীবন ঘিরে দুঃখ-জালের স্বত্রগুলো ক্রমেই শক্ত এবং জটিল হয়ে উঠল। মস্ত একটা দেনার বোঝা কাধে চেপে ছিল, তার উপরেও ষে কাজ চাপল র্তার ঘাড়ে, প্রতিদিন তার দুঃসাধ্য আর্থিক দাবি তাকে শান্তির অবকাশ দিল না। সামান্য যা তার নিজের সম্পত্তি ছিল তার কিছু দিলেন বেচে আর কিছু গেল বন্ধকে । বাইরে থেকে উৎসাহ বা কোন সাহায্য পান নি, মিথ্যে নিন্দের কুশাঙ্কুর প্রতিপদে বিধেছে তার পায়ে । তার পর সংসারে ঘন হয়ে তাকে ঘিরে এল রোগ, শোকতাপ । সে সময় যারা তার কাছে ছিলেন র্তাদের কাছ থেকে যে বিবরণ শুনেছি তার দুঃখের সেই ইতিহাস কোথাও লেখা রইল না ; কিন্তু আর এক দিকে আর এক ভাষায় লেখা হ’তে থাকুল গীতাঞ্জলির গানগুলিতে। যে সান্থনা দুঃখ বিপদ নিন্দাকে একেবারে অস্বীকার করতে পারে, কঠিন দুঃখের আঘাতে সেদিন কবির কাছে তার দ্বার খুলে গিয়েছিল। কবির কাছে শুনেছি, পৃথিবীর প্রথম স্থষ্টির দিনে যেমন ঘোরতর বহির্বিপ্লবের তলায় তলায় একটা গভীর শান্তি স্মৃষ্টির কাজ করত, গীতাঞ্জলির গান এবং তংকালীন অন্যান্য গান সেই রকম স্বষ্টির বেগে বাণী নিয়ে মুর নিয়ে দুঃখস্তরের উদ্ধে দিনে রাতে আপনা আপনি প্রকাশ পাচ্ছিল। বহু বারই কবির কাছে একথা শুনেছি যে, জীবনযাত্রায় মানুষ যে আরাম, যে সুযোগ কামনা করে, বাইরের দিক থেকে দেখতে গেলে তার পক্ষে সেটা দুর্লভ ছিল না । কিন্তু অস্তরে বাহিরে কে যেন সেটাকে দুর্লভ ক’রে দিল । তার উপর একটা যে ফরমাইসের দাবি আছে সেইটেকেই পূরণ করবার জন্তে কে যেন বাইরের অবস্থাকুে অমুকুল করে দিচ্ছে। অথচ সংসারের আদর্শ অনুসারে প্রায়ই তাকে প্রতিকুলত বই অন্য কিছু বলা চলে না। এক দিন শিলাইদহে তার যে বাসা বাধা হ’ল, সাহিত্য-রসের স্বাক্টর জন্তে তার যথেষ্ট প্রয়োজন ছিল । হঠাৎ সেটাকে ফেলে দিয়ে তিনি চলে এলেন আর এক ক্ষেত্রে, এর মধ্যে ত পূৰ্ব্বাপরের কার্য্যকারণের কোন যোগ দেখতে পাওয়া যায় না । এই অনভ্যস্ত কাজের মধ্যে বিনা ভূমিকায় তাকে যে টেনে আনা হ’ল সেটা তার স্বভাবের বা অবস্থার অনুসরণ ক'রে করা হয় নি, একাজে না ছিল তার কোন অভিজ্ঞতা, না ছিল অর্থ সামর্থ্য । তার উপর সামনে এল দুঃখ, দরদহীন পরিবেশে সঙ্গহীন সাধনা। এর পর থেকে যে সমস্ত বিঘ্ন ভিড় ক’রে এল এখনও দেখছি সে সমস্তই তার দরকার ছিল সংসারী মানুষ হিসেবে নয়, কবি হিসেবে। অথচ এই হিসেবের ব্যাপারটা কবির ইচ্ছের মধ্যে ছিল একথা বলা চলে না । গীতাঞ্জলি রচনা শেষ হয়ে গেছে এমন সময় পাকাপাকি ঠিক হয়ে গেল যে কবি বিলেত যাবেন । কিন্তু যাত্রার দিনেই বিশেষ অমুস্থ হয়ে পড়লেন, যাওয় আর হ’ল না । চিকিৎসকেরা পরামর্শ দিলেন, এখন লেখাপড়া বন্ধ ক’রে দিয়ে কিছু দিন নিভৃতে গিয়ে বিশ্রাম করা ভাল । কাজেই গেলেন তিনি শিলাইদহে, কিন্তু অন তখনও তার ভ’রে রয়েছে গীতাঞ্জলির গুঞ্জনধ্বনিতে। নূতন কিছু লিখে মাথাকে ক্লান্ত করবেন না ছিল কথা, তাই গীতাঞ্জলির গানগুলিকে নিয়ে তিনি ইংরেজীতে তর্জমা করতে বসে গেলেন। এক ভাষার জিনিষকে আর এক ভাষায় ভোগ করবার মতলবে । তর্জমা যখন অনেক খানি এগোলো তখন র্তার বহুদিনের পুরাতন এবং কষ্টদায়ক ব্যাধির চিকিৎসার জন্য, কবির পুত্র শ্ৰীযুক্ত রথীন্দ্রনাথ এবং কবির ভ্রাতুপুত্র শ্ৰীযুক্ত স্বরেন্দ্রনাথ ঠাকুর উভয়েই তাকে বিলেত যাবার পরামর্শ দিলেন। প্রথমে রবীন্দ্রনাথ তাদের এই পরামর্শে সায় দিতে পারেন নি, সায় দিতে না পারার প্রধান কারণ ছিল তখনকার দিনে তার আর্থিক অসচ্ছলতা । শান্তিনিকেতন বিদ্যালয়ের তখন নিতান্ত শৈশব অবস্থা, তাকে লালন করবার টাকা তাকে কৰ্জ ক’রে সংগ্রহ করতে হচ্ছে, কাজেই অধিক খণ-সমুদ্রে পাড়ি দিতে দিতে জলসমুদ্র পার হবার ইচ্ছে তার হয় নি। কিন্তু শেষটায় তাকে রোগযন্ত্রণার হাত হ’তে নিস্কৃতি লাভের জন্ত বিলেত যাবার প্রস্তাবে সম্মত হতে হ’ল। তখনও তর্জমার