পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৭১৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

سمو3t يوما কহিল, ‘না ভায়া, এ আমি স্বীকার করব, আমার এতটা বয়সে এমনটি আর দেখলাম না ।" জটাধরের অদ্ভুত হাসি, দুৰ্ব্বোধ্য মন্তব্য সবই কেশবের আশ্চৰ্য্য বোধ হইল, বিস্থিত হইয়া বলিল, “কি দেখ নি, কি ? জটাধর ততোধিক গম্ভীর হইয়া জবাব দিল, “স্থ, কার সাধ্যি এড়িয়ে যায় !" .. কেশবের ধূমাচ্ছন্ন সন্ধিত উত্তরোত্তর কুণ্ডলী পাকাইতেছে, অধীর হইয়া বলিল, “আঃ, কি এড়িয়ে যায় বল না ? জটাধর ভাঙিবে, তবু মচকাইবে না। অনেক করিয়া শেষে বলিল, “তোমার শ্বশুর মতলবটা করেছে বেশ । আরে ভায়া, সে বেশী দিন নয়, মাত্র সাতটি দিন আগে— ঘাচ্ছি একটা সম্বন্ধ ঠিক করতে পাৰ্ব্বতীপুরের দিকে, দেখি, তোমার শাশুড়ীঠাকরুণ মেয়েকে সঙ্গে ক’রে চলেছে ষাঁড়েশ্বরতলায় পূজা দিতে ; তা বললাম—এক রকম গায়ে পড়েই বললাম যে, কেন বাপু এমন করছ, অনেক দিন ত হয়ে গেল, আর কেন ! মেয়েটাও কষ্ট পাচ্ছে আর আমার কেশবভায়াও দিন দিন শুকিয়ে দড়ি হয়ে যাচ্ছে। চারি দিকে সতর্কবৃষ্টি নিক্ষেপ করিয়া গলার স্বরটা একটু খাটো করিয়া জটাধর বলিল, উত্তরে কি বললে জান ভায়া, বললে—আমন জামাইয়ের—থাক সে কথাটা আর না বলাই ভাল |’ কেশব স্তন্ধ হইয়া নিশ্চল পাষাণের মত বসিয়া রহিল, তাহার মুখ দিয়া একটি কথাও বাহির হইল না। জটাধর রোগ বুঝিয়া ঔষধ দিতে জানে ; ঔষধ ধরিয়াছে দেখিয়া সে খুশী হইল। কেশবকে নীরব দেখিয়া আবার টানিয়া টানিয়া বলিল, “নহলে আমারই বা কি মাথাব্যথা ! এক স্ত্রী বর্তমানে আবার যে বিয়ে দেবার জন্তে সম্বন্ধ করছি, সে ত তোমারই সুখের জন্তে, না কি বল ? কিছুক্ষণ নীরব থাকিয়া কেশবের হাত হইতে চিঠিখান টানিয়া লইয়া বলিল, “বুঝলে না ভায়, মিথ্যে না হ'লে একটা উটুকে লোকের হাত দিয়ে চিঠি পাঠায় !" জটাধরের অকাট্য যুক্তি, বিশ্বাস না করিয়া উপায় কি ! সম্মুখের কদমগাছের মাথার উপরে এক দল পার্থী কলরব করিয়া ডাকিয়া উঠিল । না, আর বিলম্ব নয়,—জটাধর উঠিয়া দাড়াইল । ‘কই হে ভায়া, দৈরি হয়ে গেল ষে । যাত্রালয়টুকু পার হয়ে বাবে দেখছি। হিন্দুর ছেলে পঞ্জিকা না মেনে উপায় কি, চল বেরিয়ে পড়ি ' 聯 s সেদিন বহু অনুরোধে যেটুকু ইচ্ছা জাগিয়াছিল, আজ সহসা সে উৎসাহ, সে ইচ্ছা বেন নিৰ্ম হইয়া নিবিয়া প্রশ্বাসী

  • SN988

গিয়াছে। জটাধরের বারংবার তাড়নায় কেশব ধীরে ধীরে উঠিয়া দাড়াইল । দেখিতে দেখিতে সীমান্তরাল অতিক্রম করিয়া স্বর্ধ্যোদয় হইল । চিন্তিত মুখে জটাধর বলিল, “তাই ত ভায়া, স্বৰ্য্য উঠে গেল যে ’ মৃদ্ধ আপত্তি করিয়া কেশব বলিল, তবে আজ আর গিয়ে কাজ নেই ।” জটাধর কথাটা বলিয়াছিল কেশবকে তাড়া দিবার জন্ত, কিন্তু বিপরীত ফল হয় দেখিয়া বলিল, “না, না, তা কি হয়, চল । স্থৰ্য্য উঠলেও দোষ নেই, একে উষা বলা যায়, আর তাছাড়া খনা বলেছেন—মঙ্গলের উষা বুধে পা...।” অনিচ্ছাসত্ত্বেও কেশবকে প্রস্তুত হইতে হইল। কেশব দুয়ারে চাবি দিতেছিল আর জটাধর অনর্গল বলিয়া যাইতেছিল, ‘বুঝলে ভায়, আঙুল নয় ত যেন চাপার কলি-রং নয় ত যেন কাচা সোনা । মুখ, চোখ, গড়নপেটন, সে আর কি বলব বাবাজী, গেলেই দেখতে পাবে।’ দূরে শববাহীদের অস্ফুট কণ্ঠস্বর শোনা গেল,—’বল হরি, হরিবোল |’ কেশব চাবি বন্ধ করিয়া পা বাড়াইয়াছিল ; জটাধর সহসা কেশবের হাতটা চাপিয়া ধরিল, বলিল, 'ভায়া, দেখেছ, এ কি ব্যতিক্রম হবার জো আছে, কেমন যোগাযোগ দেখ,—থনা বলছেন, যাত্রাকালে মড়া দেখলে সেদিন নিশ্চয় কাৰ্য্যসিদ্ধি,—দাড়াও মড়া নিয়ে ওরা সামনে এলেই আমরা যাত্রা করব ।’ শুভযাত্রার উল্লাসে জটাধরের মুখচোখ প্রদীপ্ত হইয়া উঠিল। শববাহীরা আরও নিকটবর্তী হইলে উকি মারিয়া জটাধর উল্লসিত হইয়া উঠিল, বলিল, “ভায়া, যোগাযোগ দেখ, শুধু মড়া নয়, এ আবার সধবা ' শালুকদীঘির পাড় দিয়া ঘন আমবাগানের পায়ে-চলা পথটুকু অতিক্রম করিয়া শববাহীরা সম্মুখের পথে উঠিল। কে জানে কোন বস্ত্রাবরণের বাহিরে দেখা যায় রোগশীর্ণ অলক্ত-রঞ্জিত দুখানি পা । ‘স্বাক বঁাচা গেল, যাত্রাট গুত হয়েছে, কই হে চল ! জটাধর আনন্দে কেশবের হাত ধরিয়া সজোরে আকর্ষণ করিল। “কি হে ভায়া, ব’সে পড়লে যে !” কেশব সত্যই বসিয়া পড়িয়াছে। মুঠার মধ্যে শিহরিত কম্পমান আঙুলগুলার স্পর্শাহভূতিতে জটাধর তীত হইয়া উঠিল। কেশবের মুখে চোখে যাতনার পরিব্যাপ্ত পাণ্ডুরতা। জটাবরের মুখ ভয়ে পাংগু হইয়া যায়, হৃদযন্ত্রের ক্রিয়াটা বুঝি সহসা বন্ধ হইয়া যাইবে । অনেক ক্ষণ পরে জটাধরের মুখের প্রতি চাহিয়া শুক্ষকণ্ঠে কেশব বলিল, “আট বছর পরে আজ ষে আমি দেখতে ৰাব মনে করেছিলাম জটিল্ডা !”