পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৮৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

●8 মৃণালের মায়েরও গহনাগাটি কিছু কিছু আছে। বেশী উঁচু নজর না করিয়া, যেমন মানুষ তেমন জামাই দেখিয়া যদি দিতে রাজী থাকেন ত মৃণালের বিবাহ সহজেই হইয়া যায় । মেয়ে দেখিতে স্বত্র, ঘরও ভাল । মৃগাঙ্ক ই-ম! কিছুই স্পষ্ট করিয়া বলেন না। এই আজন্ম-পল্লীবাসী মানুষটির মনে মেয়েকে উচ্চশিক্ষিতা করিবার এমন দৃঢ়প্রতিজ্ঞার কেন যে আবির্ভাব ঘটিল তাহ কেহ ভাল করিয়া বুঝিতে পারে না। মোটের উপর বুঝা যায়, মৃণালের স্কুলের পড়াটা শেষ না হওয়া পর্যন্ত তিনি অপেক্ষই করিবেন। মৃণাল ইহাতে থানিক আশ্বাস পায়, কিন্তু মামামামীর ভাব দেখিয়া তাহার মাঝে মাঝে ভয় হয় যে পাছে র্তাহারা মৃণালের বাবার অপেক্ষ না রাথিয়াই তাহার বিবাহ দিয়া দেন । বোর্ডিঙের মেয়ে দুই-একটি ইহারই মধ্যে চলিয়া যাইতে আরম্ভ করিয়াছে। সুবিধামত সঙ্গী পাইলে দুই-চার দিন আগে চলিয়া যাওয়ার অমুমতি সহজেই মিলে । মুণালেরও এক দূরসম্পর্কের মেসোমশায় দুই দিন পরে তাহার মামার বাড়ীর গ্রামে যাইতেছেন। মৃণাল ইচ্ছা করিলেই তাহার সঙ্গে যাইতে পারে। কিন্তু যাইবে কি ? একটা মাস একেবারেই কি নষ্ট হইবে না ? যাওয়া কি তাহার উচিত ? কিন্তু না-যাইতে পারিলেও প্রাণ তাহার একেবারে অস্থির হইয়া উঠিৰে । নির্জন সঙ্গীহীন বোর্ডিঙে দিন তাহার কাটিবে কেমন করিয়া ? তাহার ক্লাসের মেয়ের প্রায় সকলেই চলিয়া যাইবে । বিকাল হইয়া আসিয়াছে । আজ শনিবার, স্কুল মাত্র তিন ঘণ্ট হয়, অনেক আগেই ছুটি হইয়া গিয়াছে। চুল বাধিয়া, কাপড় বদলাইয়া, মৃণাল বোড়িঙের লনে বেড়াইতে চলিল, এমন সময় মাঝপথে দরোয়ান অtসিয়া একথান মেট তাহার চোখের সম্মুখে উচু করিয়া ধরিল। তাহার সেই মেসোমশায় তাহার সহিত দেখা করিতে আসিয়াছেন। মৃণাল আবার ঘুরিয়া স্থলবাড়ীর দিকে চলিল। # ছোট্ট একখানি ঘর, মাঝে একটা চৌকো টেবিল, তিন দিকে তিনখানা চেয়ার। ইহার বেশী. আস্বাৰ এ-ঘরে ধরে না। মৃণাল ঘরে ঢুকিয়া বলিল, “আপনার পরশু যাওয়াই ঠিক না-কি মেসোমশায় ?”, , প্রবাসী ১৩৪৪ ভদ্রলোকটি বলিলেন, “হ্যা। তুমি বাবে নাকি তাই জানতে এলাম।” মৃণাল আর কিছু না ভাবিয়া-চিন্তিয়া ফসূ করিয়া বলিয়া বসিল, “হ্যা, যাব।" বলিয়াই তাহার নিজেরই অবাক লাগিয়া গেল। এক মিনিট আগে পৰ্য্যন্ত তাহার মন যাওয়া-না-যাওয়ার মধ্যে দোলা থাইতেছিল। যাক, মুগ দিয়া কথাটা যখন বাহির হইয়াই গিয়াছে, তখন যাওয়াই टैिंक । তাহার মেসোমশায় বলিলেন, “তাহলে সকাল সাড়েআটটার মধ্যে তৈরি থেকে, আমি একেবারে গাড়ী নিয়েই আসব। পার ত কিছু খেয়ে নিও, পৌছতে সেই ত বেলা গড়িয়ে যাবে।” মৃণাল বলিল, “আচ্ছ, যদি খেতে পাই ত থেয়েই নেব, না-হলেও ভাবনা নেই, তিনটের সময় বাড়ী গিয়েই খাওয়া যাবে।” তাহার মেসোমশায় চলিয়া গেলে মুণল আবার সঙ্গিনীদের মধ্যে গিয়া জুটিল। প্রমীলাকে বলিল, “বাড়ী যাওয়াই ঠিক ক'রে এলাম রে ।” * প্রমীলা বলিল, “বেশ করেছিস্, এক মাস ধরে মামামামীর অাদর ই| ক’রে গিলে, টেষ্টে গোল্লা পাস এখন।" মৃণাল বলিল, “ন, এবার পড়াশুনো একটু একটু করতে চেষ্টা করব ।” মাঝের দিন দুইটা কাটিতেই যেন চায় না । মৃণাল পারিলে ঘণ্টাগুলিকে ঠেলা মারিয়া পার করিয়া দেয়। সুখের ক্ষণগুলি যেন হাওয়ায় উড়িয় চলে আর অন্ত সময় তাহাদের গতি কি একেবারেই লুপ্ত হইয়া যায় ? ক্রমাগত ঘড়ি দেখিতে দেখিতে মৃণালের চোখ যেন টাটাইতে থাকে । k যাইবার আগের দিনটায় তবু জিনিষপত্র গুছাইবার কাজে সময়টা কিছু তাড়াতাড়ি কাটিল। রাত্রে বোর্ডিঙের মেট্রনের কাছে গিয়া মৃণাল বলিল, “মাসীম, কাল সকালের ট্রেনে আমি যাচ্ছি, ভাত তখন হবে কি ?” মাসীমা ৰলিলেন, “আলুভাতে ভাত হবে আর কি ? অত সকালে ত আর মাছ-মাংস হতে পারে না ?” আলুভাতে ভাত পাইলেই ঢের হয়। মাছ-মাংস