পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৮৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

( ఆ প্রবণসী, ১৩৪৪ মৃণাল বলিল, “দিনের বেলা আবার ভয় কিসের ? আর সে গাড়ীতেও ত লোক থাকবে ?” মেসোমশায় তাহাকে লইয়া অগ্রসর হইয়া চলিলেন। মেয়েদের গাড়ী একেবারে যে খালি তাহা ময়, তবে এখনও বোঝাই হইন্স উঠে নাই। জিনিষপত্র লইয়া মৃণাল তাহারই মধ্যে উঠা পড়িল। একটি বেঞ্চ জুড়িা একটি ফিরিঙ্গীললন চোখ বুজিয়া গুইয়া আছেন, অন্ত যাত্ৰিণীদের দিকে দৃকপাতও করিতেছেন না, তাহা হইলে অম্ববিধ ঘটতে পারে। আর একটি বেঞ্চে দুইটি উৎকলবাসিনী বসিয়া কৌতুহলদৃষ্টিতে প্লাটফর্থের দিকে তাকাইয়া আছে। মৃণাল উঠিয়া মাঝের বেঞ্চটিতে গিয়া বসিয়া পড়িল, জিনিষগুলি বেঞ্চের তলায় ঢুকাইয়া রাখিল । গাড়ী ছাড়িতে তখনও বেশ কিছু দেরি। বসিয়া বসিয়া জনস্রোত দেখা ভিন্ন কাজ নাই। বিরাট দীনবাকৃতি ব্যাপার এই হাওড়া ষ্টেশনটা । লোকের ধেন সমুদ্র, কত পথে তাহারা আসিতেছে, যাইতেছে, প্ল্যাটফৰ্ম্মেরও শেষ নাই, ট্রেনেরও শেষ নাই। আর এখানেই যেন একটা বাজার বসিয়া গিয়াছে । ইচ্ছা করিলে কি না এথানে পাওয়া যায় ? খাইবার, পরিবার, পড়িবার, সাজিবর যাহা চাও তাঁহাই পাইবে, যদি পয়সা খরচ করিতে রাজী থাক । যাবতীয় রোগের ঔষধও এইখানে মেলে, যদি ক্যানভাসারগুলির কথা বিশ্বাস করিতে হয়। যাক, কোনওমতে আধটা ঘণ্টা কাটিয়া গেল। এইবার ঘণ্টা পড়িল, ট্রেন ছাড়িবে। এখনও যাত্রীর ছুটাছুটি ছড়াছড়ির বিরাম নাই, সৌভাগ্যক্রমে মৃণালদের গাড়ীতে আর কেহ উঠিল না। কতবার সারি সারি মেয়ে অগ্রসর হইয়া আসিতেছে দেখা গেল, সঙ্গে আণ্ডাবাচ্চ, র্বোচক কুঁচকি, কিন্তু ঢুকিবার বেলা তাহারা সেই পুরুষদের গাড়ীতেই ঢোকে, এদিকে আসে না । গাড়ী ছাড়িয়া দিল । তাহার বেঞ্চে সে একলা, মুতরাং জুতা খুলিয়া মৃণাল পা উঠাইয়া আরাম করিয়া বসিল। এখন একখান মাসিকপত্র কি. বাংলা উপন্যাস পাইলে সময়টা আরামেই কাটিত, কিন্তু মৃণাল পাঠ্য বই ছাড় অপাঠ্য কিছুই সঙ্গে আনে নাই। সঙ্গিনী তিনটিও গল্প করিতে নিশ্চয়ই চাহিবে না। “ মেমসাহেবের সঙ্গে কথা বলিতে মৃণালের কোনও উৎসাহ বোধ হইল না, আর উড়িষ্যাবাসিনীর বাংলা হয়ত বুঝিতে পরিবে না। তাহারা পরস্পরের সঙ্গে কথা বলিতে এবং পান-দোক্তা १ाशेtउझे दारष्ठ । হাওড়া ছাড়াইয়া গাড়ী চলিতে আরম্ভ করিল। চারিদিকে সবুজ টোপা-পানায় ঢাকা পুকুর, বঁাশঝাড়, ভাঙাচোরা খড়ের ঘর। মাঝে মাঝে আবার শহরের জয়ধ্বজ তুলিয়া প্রকাও প্রকাও কলের চিম্নি আকাশে মাথা উচাইয়া আছে, পাশে তাহার বড় বড় টিনের ছাউনি । শহর বা পল্লী, কোনটারই সৌন্দর্ঘ্য এ জায়গাগুলির মধ্যে নাই। কেমন যেন নিরানন, স্নান, শ্ৰীহীন মূৰ্ত্তি, দেখিলেই মনের ভিতরটা মুখ ডাইয়া যায় । খানিক পরে পরে এক-একটা পানের বরজ চোখে পড়ে । ছোট ছোট ষ্টেশনগুলি, বেশ পুতুলখেলার ঘরের মত সুন্দর পরিপাটি, হাওড়ার আক্ষরিক আকৃতির পাশে বাস্তবিকই এগুলিকে খেলার ষ্টেশনই মনে হয়। বেশীর ভাগ জায়গায়ই ট্রেন দাড়ায় না, আবার এক-আধটায় দাড়ায়ও। যাত্রীরা সব চীৎকার করিয়া ডাবওয়ালাকে ডাকে, এ সব জায়গায় ডাব খুব সস্তা। মৃণালও দু-পয়সা দিয়া বড় একটা ডাব কিনিয়া খাইল । গাড়ী আবার অগ্রসর হইয়া চলে। এইবার চারিদিকের প্রাকৃতিক দৃপ্ত ক্রমেই মনোরম হইয়া আসিতেছে । আর বঁাশঝাড়, পানাপুকুর নাই, মাটির চেহারাও আর পঙ্কিল নয়। দিগন্তবিস্তুত ধানের ক্ষেত, কাশবন, ছোটবড় নদী, তাহার জল স্বচ্ছ নিৰ্ম্মল। মাঠে মাঠে গরু-মহিষ চরিতেছে, সঙ্গে রাখাল আছে-না-আছে চোখে পড়ে না । শুধু শুধু বসিয়া বসিয়া মৃণালের চোখ চুলিয়া আসিতে লাগিল। পাছড়াইয় সে বেঞ্চের উপরেই শুইয়া পড়িল । ঘুমাইয় পড়িল সে অবিলম্বেই, কিন্তু ঘুমটা তাহার খুব বেশীক্ষণ স্থায়ী হইল না । হঠাৎ একটা প্রচণ্ড শব্দে সে চকিত হুইয়া উঠিয়া বসিল । আর কিছুই নয়, গাড়ী রূপ নারায়ণের ব্রিজ পার হইতেছে। কোলাঘাটে ট্রেন পৌছিলেই মৃণালের মন খুশী হইয়া উঠে। সে যেন এইবার বাড়ীর গত্তির মধ্যে আসিয়া পড়িয়াছে, এই স্থানটার উপর রাক্ষসী রাজধানীর যেন কোনও অধিকার নাই ।