পাতা:প্রবাসী (সপ্তত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/৯০৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চৈত্র বাড়ীতে স্ত্রীলোক-অতিথুির অভ্যাগমে বিজয়নাথ উপরতলা ছাড়িয়া বাহিরের বৈঠকখানায় আশ্রয় লইয়াছিলেন। নরেশ ততক্ষণ সেখানে, একটা চেয়ার টানিয়া বসিয়াছে এবং পাখার অভাবে পকেট হইতে রুমালট বাহির করিয়া পাথার মত করিয়া সঞ্চালন করিতে করিতে ক্লাস্তিবিনোদনের কিছু চেষ্টা করিতেছে। মন্দাকে দেখিয়া বলিল, “বৌঠান ! তুমি ওঁদের চিনতে পেরেছ ত? আমার দূরসম্পর্কের এক জন খুড়তুতো ভাইয়ের স্ত্রী। আমার সঙ্গে আসাই উচিত ছিল কিন্তু লগেজগুলোর একটা ব্যবস্থা করতে এত দেরি হয়ে গেল।” বলিয়া বারানার এক-পাশে স্তুপীকৃত করিয়া রাখা জিনিষপত্রের রাশি নির্দেশ করিল। বাসনের সিন্দুক, ভাঙা কেম্বিসের খাট, পিড়ি, জলচৌকি হইতে সুরু করিয়া গৃহস্থালীর টুকিটাকি সমস্ত প্রকার জিনিষই কতক চটে আচ্ছাদিত হইয়া কতক বা এমনই গাদা করা ছিল । সেই দিকে চাহিয়া মন্দা বিস্ময়াপন্ন হইয়া কহিল, “এত জিনিষ ! ওঁরা কি গোটা একটা সংসার তুলে নুিয়ে 'যাচ্ছেন না কি ?” 籌 নরেশ একটা নিঃশ্বাস ফেলিয়া বলিল, “অনেকটা তাই । আজ সাত দিন হ’ল মুহাস-বৌদির স্বামী মারা গেছেন। কলকাতায় সামান্য তুাড়াবাড়ীতে থাকতেন, বাসাতে আর দ্বিতীয় অভিভাবক নেই। কোথায় কার কাছে কেমন করেই বা থাকবেন, তাই আপাততঃ আমাদের ওখানেই নিয়ে যাচ্ছি।” মন্দা ব্যথিত হইয়া বলিল, “মোটে সাত দিন ওঁর স্বামী মারা গেছেন ! আহা, কি হয়েছিল ?” নরেশ কিছুকাল চুপ করিয়া থাকিয় বলিল, “কি হয়েছিল সে-কথা বলতেও কষ্ট হয়, শুনতেও তোমার কষ্ট হবে। তার আজ ছ-মাস হ'ল যহ্মা হয়েছিল। শুধু শেষের মাসটাই আপিস যান নি আর বোধ করি দু-একু বার বা ডাক্তারও দেখিয়েছিলেন। বড়সাহেব বোধ হয় দয়া করে এক মাস অৰ্দ্ধেক,মাইনেতে ছুটিও মঞ্জুর করেছিলেন। তার পরে আর কি, এক দিন আস্তে আস্তে সব শেষ হয়ে গেল। বেশী, কিছু ব্যাপার না, আয়োজন আর বিস্তৃতিও খুবই সামান্ত। পাছে রোগটা ত্যাগ اس قسم جیسون প্রকাশ পেলে চাকরি যায়, পাছে সংসার অচল হয়ে যায়, তাই নেহাৎ শেষ অবস্থা অবধি প্রকাশ-দা না নিজের কাছে না পরের কাছে কিছুতেই স্বীকার করে নি মে তার কিছু হয়েছে ।” মন্দা মৃদুস্বরে প্রশ্ন করিল, “কি চাকরি করতেন তিনি ?” নরেশ উত্তর করিল, “চাকরি খুব সামান্তই। সকাল বেলায় উঠে ছেলে পড়াতে যেত। ফিরে এসে পাড়ার একটা লাইব্রেরিতে বই সরবরাহ করতে যেত । সেখানকার লাইব্রেরিয়ানের কাজ করে মাসে বুঝি গোটা-দশেক টাকা পেত। সেখান থেকে এসে তাড়াতাড়ি নাকে মুখে গুজে আপিস যেত। কোন দিন স্নান হ’ত, কোন দিন বা সময়াভাবে হ’ত না । একটা আপিসে ত্রিশ টাকার কেরানীগিরি করত। ফিরে এসে সন্ধ্যা নাগাদ আবার এক জায়গায় টিউশনি করতে যেতে হত । কলকাতায় পঞ্চাশ-ষাট টাকা আয়ে তিন-চারটে ছেলেমেয়ে এবং স্ত্রী নিয়ে সংসারযাত্রা নিৰ্ব্বাহ করতে হ’লে তাকে যে-ঘরে বাস করতে হয় এবং যা-খেয়ে ক্ষুন্নিবৃত্তি করতে হয়, তার উপর ঐ খাটুনির বহরটা যোগ ক’রে সহজেই বুঝতে পারছ, প্রকাশ-দার কেন যক্ষ্মা হয়েছিল। তার সঙ্গে প্রকাশ-দার আরও একটা দুৰ্ব্বহ চিন্তা ছিল । গত বৎসর ছোট বোনটির বিয়ে দিতে হাজার খানেক টাকা দেনা করতে হয়, সেই ঋণের বোঝাও তার এ-জীবনের মেয়াদকে আরও সংক্ষেপ ক’রে আনলে । মুহাস-বৌদির কাছে শুনছিলাম, মাসে মাসে সুদ এবং আসল টাকার কিছু ক'রে দিতেই হ’ত। তাই প্রকাশ-দ খাটুনির উপরে আবার একটা সেকেও-হাও টাইপ-রাইটার কিনে রাত্রি জেগে সস্তায় টাইপের কাজ জোগাড় ক’রে তাই করত। তাতেও সামান্য কিছু আয় হ’ত ” 鬱 মন্দা উত্তেজিত হইয়া কহিল, “কিসের জন্য করতেন ? এই যে অকালে মারা গিয়ে তার স্ত্রী, তার ছেলেমেয়েকে একেবারে অনাথ ক’রে রাস্তায় দাড় করিয়ে দিয়ে গেলেন, এখন তাদেরই বা কি হবে ? আর তার ঋণেরই বা কি হবে ? এ-কথা ভেবেও তার অমন অতিরিক্ত পরিশ্রম করা উচিত হয় নি কিছুতেই * , নরেশ একটুখানি হাসিল, “তাকে আমি দোষ দিতে A **